স্থলবন্দরে আটকা ভারতীয় পেঁয়াজে পচন ধরেছে

এমন একটি সংবাদ রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত হয়েছে ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফের অনলাইন সংস্করণে।

স্থলবন্দরে আটকা ভারতীয় পেঁয়াজে পচন ধরেছে

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে স্থলবন্দরগুলোতে কার্গো ট্রাকে করে আনা পেঁয়াজ এরই মধ্যে পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে। ফলে বন্দরগুলোতে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ এসে আটকা পড়েছে। সেগুলো ছাড়পত্র পাচ্ছে না। ওদিকে ট্রাকের ওপর রোদ, বৃষ্টিতে পেঁয়াজ পচা শুরু হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রপ্তানিকারক, আমদানিকারকরা। ফলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এক ধাক্কায় ৮০ টাকা দামের পেঁয়াজ পৌঁছেছে ২০০ টাকায়।

এরই মধ্যে বাংলাদেশের যেসব আমদানিকারক পেঁয়াজের অর্ডার দিয়েছিলেন, তাদের অর্ডার নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অপেক্ষায় আছে কমপক্ষে ১০০ কার্গো ট্রাক। এতে পেঁয়াজের পরিমাণ ৩০০০ মেট্রিক টনের বেশি। এসব পেঁয়াজ নিয়ে ট্রাকগুলো সীমান্তে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আকস্মিক রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। ফলে সীমান্তে ট্রাকের ওপর এসব পেঁয়াজে পচন ধরেছে। তা থেকে পচা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।

এমন একটি সংবাদ রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত হয়েছে ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফের অনলাইন সংস্করণে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পশ্চিমবঙ্গের অংশে ট্রাকবোঝাই পেঁয়াজ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ওদিকে, বাংলাদেশে এর দাম বেড়ে চলেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আকস্মিক রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে এসব ট্রাক স্থলবন্দরে আটকে আছে। এতে রপ্তানিকারক এবং পেঁয়াজবোঝাই ট্রাকগুলোও লোকসানের মুখে রয়েছে। 

রপ্তানিকারক ও ফ্রেইটের দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানান, নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে ১০০ কার্গো ট্রাকে ৩০০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অর্ডার দিয়েছিলেন বাংলাদেশিরা। পেঁয়াজ নিয়ে স্থলবন্দরে পৌঁছামাত্র ৭ ডিসেম্বর ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক মহাপরিচালক আগামী বছর ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত জানান। ভারতে যাতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকে সে জন্য এ সিদ্ধান্ত। ভারতে বর্তমানে এক কিলো পেঁয়াজের খুচরা মূল্য প্রায় ৭০ রুপি। কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় ৮ ডিসেম্বর।

একজন রপ্তানিকারক বলেন, আরও কমপক্ষে ১০০০ ট্রাক পেঁয়াজ সীমান্তের পথে রয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত আমাদের বিভ্রান্তিতে ফেলেছে। সব স্থলবন্দরে এই নিষেধাজ্ঞা একরকম নয়। পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর পেট্রোপোলে পেঁয়াজভর্তি ট্রাকগুলো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগে অর্ডার পেয়েছিল। উত্তর ২৪ পরগনার বশিরহাটের কাছে গজলডাঙ্গা স্থলবন্দরে পরিস্থিতি ভিন্ন। সেখানে নাসিক থেকে পেঁয়াজবোঝাই প্রায় ৩০টি কার্গো ট্রাক ৮ ডিসেম্বর থেকে আটকে আছে। মালদার মাহাদিপুর স্থলবন্দরের ভেতরে ৭০টি এবং বাইরে ৮০টি কার্গো ট্রাক অপেক্ষায়।

নাসিকভিত্তিক এক রপ্তানিকারকের এজেন্ট শনিবার গজলডাঙ্গা বন্দরে বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ আমরা অপেক্ষা করছি, আমরা উদ্বিগ্ন। কেন্দ্রীয় সরকার শিপমেন্টের বিষয়ে ক্লিয়ারেন্স না দিলে আমরা রপ্তানি বিল পাব না। বড়রকমের লোকসান হবে আমাদের। চালানের অনেকটাই এরই মধ্যে পচতে শুরু করেছে।

কিছু রপ্তানিকারক এসব ট্রাক থেকে বস্তা ধরে নিয়ে তা স্থানীয় গোডাউনে রাখছেন স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য। ওই এজেন্ট আরও বলেন, যদি এই শিপমেন্টের বড় অংশ পচে যাওয়া শুরু করে তাহলে যে দামই পাই, সেই দামে তা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হব।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, নিষেধাজ্ঞায় কেন্দ্রীয় সরকার যে তিনটি শর্ত আরোপ করেছে, তার একটিও অনুসরণ করেনি এসব শিপমেন্টের রপ্তানিকারকরা। তিনটি শর্তের ওপর পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি আছে। তা হলো- যদি চালানের পেঁয়াজ বোঝাই শুরু হয়ে থাকে নোটিফিকেশন দেওয়ার আগে, যদি চালান এরই মধ্যে পৌঁছে থাকে এবং বন্দরে নোঙর করা অবস্থায় থাকে। পেঁয়াজের চালান যদি কাস্টমসের কাছে হস্তান্তর করা হয়ে থাকে অথবা নোটিফিকেশনের আগে কাস্টমস স্টেশনে পৌঁছে থাকে।

কাস্টমস সহকারী কমিশনার অনীল কুমার সিং বলেন, সরকারের নির্দেশ পরিষ্কার। এসব চালান তার কোনো শর্ত পূরণ করেনি। ওদিকে রপ্তানিকারক ও ক্লিয়ারিং এজেন্টরা বলছে, আকস্মিক এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশি আমদানিকারকরা সরকারের নির্দেশ কার্যকর হওয়ার আগেই তাদের অর্ডার দিয়েছেন।