শ্রমিকনেতা শহীদুল হত্যার তদন্তে শিল্প পুলিশ, বেরিয়ে আসছে নানা রহস্য

শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ফুটেজও সংগ্রহ করেছেন শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা।

শ্রমিকনেতা শহীদুল হত্যার তদন্তে শিল্প পুলিশ, বেরিয়ে আসছে নানা রহস্য

প্রথম নিউজ, গাজীপুর: টঙ্গীতে শ্রমিক নেতা শহীদুল হত্যা মামলার তদন্ত থানা থেকে শিল্প পুলিশে ন্যস্ত হয়েছে। এর পর বেরিয়ে আসছে হত্যার প্রকৃত রহস্য।বৃহস্পতিবার মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়েই শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ফুটেজও সংগ্রহ করেছেন শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা। পোশাক শ্রমিকদের দুটি সংগঠনের নেতৃত্বের বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় দোকানদার ফারুক, গার্মেন্টস শ্রমিক সাব্বির ও পাশের একটি প্রতিষ্ঠানের দারোয়ান আনোয়ার প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। তারা জানান, বিবদমান দুটি শ্রমিক সংগঠনের নেতারা কথা কাটাকাটি করে রাস্তা দিয়ে উত্তরে গাছার দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার গেটের কাছে শ্রমিক নেতা শহীদুল হঠাৎ অসুস্থ হয়ে রাস্তার পাশে বসে পড়েন। এ সময় তার সহকর্মীরা পাশের মাসকোর গেটে গিয়ে দারোয়ানের কাছ থেকে পানি চেয়ে নেন এবং শহীদুলের মাথায় পানি ঢালেন। একপর্যায়ে তারা শহীদুলকে রিকশায় উঠিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন শহীদুল রাস্তায় কোনো মারামারি বা হামলার শিকার হননি বলে এ তিন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

প্রত্যক্ষদর্শীদের এ বক্তব্যের সঙ্গে প্রাপ্ত সিসিটিভি ফুটেজেরও মিল রয়েছে। হাসপাতালে মৃত শহীদুলের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকালেও কোনো আঘাতের চিহ্ন পায়নি পুলিশ। আঘাতজনিত কারণে শহীদুলের মৃত্যু হওয়ার কোনো কারণ পাননি লাশের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকও। মামলাটির বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পরিদর্শক মো. ওসমান আলী জানান, চিকিৎসকরা শহীদুলের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের জন্য ভিসেরার নমুনা ঢাকায় ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, শিল্প পুলিশ সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে মামলার একজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। 

এদিকে গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা শহীদুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে শুক্রবার সকালে প্রতিবাদ সভা করেছে গাজীপুর জেলা ও মহানগর জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল। নগরীর রাজবাড়ি সড়কে দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর খান।

গাজীপুর জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মো. আক্তারুজ্জামান বাবুলের সভাপতিত্বে মহানগর শ্রমিক দলের সদস্য সচিব আব্দুল মোমেন ও জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ উদ্দিনের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আনোয়ার হোসেন, শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম।

উপস্থিত ছিলেন কাপাসিয়া উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মোশারফ হোসেন মেম্বার, কালিগঞ্জ উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আলম খান, সদর উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি শরীফ সরকার, কোনাবাড়ী মেট্রো থানা শ্রমিক দলের সভাপতি বজলুর রহমান বাদল, মেট্রো সদর থানা শ্রমিক দলের সদস্য সচিব মনজুর আলম, পূবাইল মেট্রো থানা শ্রমিক দলের সভাপতি আব্দুস সালাম, শ্রীপুর পৌর শ্রমিক দলের সভাপতি আমান উল্লাহ, সদর মেট্রো থানা শ্রমিক দলের যুগ্ম আহবায়ক কবীর হোসেনসহ জেলা ও মহানগর শ্রমিকদলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।

উল্লেখ্য, গত ২৫ জুন গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী সাতাইশ এলাকায় প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড নামক কারখানায় বকেয়া বেতন আদায় সংক্রান্তে নেতৃত্ব নিয়ে কারখানাটির বাহিরে দুটি শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষের আঘাতে শ্রমিক নেতা শহীদুলের মৃত্যু হয় মর্মে অভিযোগ করে বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশন।

এ ঘটনায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কল্পনা আক্তার বাদী হয়ে গত ২৬ জুন টঙ্গী পশ্চিম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের টঙ্গী পশ্চিম থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুলসহ ছয়জনকে এজাহার নামীয় আসামি করা হয়। আসামিদের পাঁচজনই বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের নেতা।

নিহত শহীদুল ইসলাম বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের গাজীপুর জেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন।