শিক্ষকদের সেন্টিমেন্ট পুঁজি করে আন্দোলনকে দীর্ঘায়িত করেছে বিটিএ

শিক্ষকদের সেন্টিমেন্ট পুঁজি করে আন্দোলনকে দীর্ঘায়িত করেছে বিটিএ

প্রথম নিউজ, ঢাকা : শিক্ষকদের সেন্টিমেন্ট পুঁজি করে আন্দোলনকে দীর্ঘায়িত করেছে বিটিএ

বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে সাধারণ শিক্ষকদের সেন্টিমেন্টকে পুঁজি করে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) আন্দোলনকে দীর্ঘায়িত করেছে বলে মন্তব্য করেছে শিক্ষকদের আরেক সংগঠন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ (স্বাশিপ)। 

সংগঠনটি বলছে, স্বাশিপসহ শিক্ষক সমাজ যেখানে শিক্ষা ব্যবস্থার জাতীয়করণের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ, নির্বাচনের আগমুহূর্তে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্টে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র তৎপর, ঠিক তখনই শুধুমাত্র মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করে তারা। হঠাৎ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা দিয়ে, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে, জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টিসহ একটি বিশেষ সময়ের এ কর্মসূচি নানা প্রশ্নের উদ্রেক ঘটায়।

সোমবার (৭ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. মো. শাহজাহান আলম সাজু।

লিখিত বক্তব্যে শাহজাহান আলম সাজু বলেন, তাদের এ কর্মসূচির চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী, মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা প্রতিটি শিক্ষক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে জরুরি সভা করেন। শিক্ষামন্ত্রী জানান, জাতীয়করণের দাবিটি সবার। বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় আছে এবং এর সম্ভাব্যতা ও যৌক্তিকতা যাচাইয়ের প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে দুটি কমিটি গঠন করা হবে। 

গত ২৮ মার্চ স্বাশিপ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন অনুরূপ কমিটির দাবি জানানো হয়েছিল। শিক্ষকদের অন্যান্য যৌক্তিক দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সদয় এবং সেগুলো অতীতের মতো আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে এবং এ প্রক্রিয়া চলমান আছে। এ জন্য আন্দোলন করার প্রয়োজন নেই। তিনি দেশের ভাবমূর্তি ও নিজেদের স্বার্থ বিবেচনা করে আন্দোলন স্থগিতের অনুরোধ জানালে আন্দোলনকারী বিটিএ নেতারাও অসম্মতি জানাননি।

তিনি বলেন, কিন্তু বিটিএ নেতারা আন্দোলনস্থলে গিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন সুরে কথা বলেন এবং স্বাশিপ ও স্বাশিপ নেতাদের সম্পর্কে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ডাহা মিথ্যাচার করেন। তারা চাকরিবিধি বিধান লঙ্ঘন করে মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদেরকেও অত্যন্ত কদর্যহীন ভাষায় গালমন্দ করেন। এমনকি মন্ত্রীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তার পদত্যাগ দাবি করেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া প্রেস ক্লাব ত্যাগ করবেন না বলে আমরণ অনশনের হুমকি দেন। 

তারা সরকার বিরোধীদের ডেকে সভায় ভাষণ দেওয়ার সুযোগ দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেন। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক এবং পরিতাপের বিষয় হচ্ছে শোকাবহ আগস্টের এক তারিখে তারা কাফনের কাপড় পরিধান করেন। যে আগস্টে বাঙালির হৃদয়ে অবিরাম রক্তক্ষরণ ঘটে সেই আগস্ট মাসে কাফনের কাপড় পরে ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দেন। আবার আন্দোলন ব্যর্থ হচ্ছে বুঝতে পেরে সেদিনই শিক্ষক আন্দোলনের ইতিহাসে নজিরবিহীন এক বিচিত্র এক প্রক্রিয়ায় আন্দোলন নাটকের ইতি টানেন, যা শিক্ষক সমাজকে হতাশ ও হতভম্ব করে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে চারটি দাবি জানাশ স্বাশিপ। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে— জাতীয়করণের সুষ্ঠু ও কার্যকর পরিকল্পনা, নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পাদনের জন্য গঠিত দুইটি কমিটির কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা; ইনডেক্সধারী, এনটিআরসিএ নিবন্ধনকৃত শিক্ষকদের শূন্য পদে বদলি বাস্তবায়নের জন্য অবিলম্বে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা; বর্তমান বাজেট থেকেই পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা প্রদান, সুনির্দিষ্ট হারে বাড়ি ভাড়া ও মেডিকেল ভাতা বৃদ্ধি করা এবং প্রধান শিক্ষকদের স্কেল বৈষম্য দূরীকরণ, সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতন সমন্বয় সাধন, অনার্স-মাস্টার্স এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী শিক্ষকদের এমপিও প্রদান।