‘রেমালের মতো আরেকটি রাজনৈতিক ঘুর্ণিঝড় বাংলাদেশের ধেয়ে আসছে’

শুক্রবার (৩১ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি একথা বলেন। 

‘রেমালের মতো আরেকটি রাজনৈতিক ঘুর্ণিঝড় বাংলাদেশের ধেয়ে আসছে’
প্রথম নিউজ, অনলাইন: ঘুর্ণিঝড় রেমালের মতো আরেকটি রাজনৈতিক ঘুর্ণিঝড় বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক এড. সাইফুল হক। শুক্রবার (৩১ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি একথা বলেন। 
এড. সাইফুল হক বলেন, রেমালের মতো আরেকটি রাজনৈতিক ঘুর্ণিঝড় বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে৷ বিগত সময়ের তুলনায় দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে৷ বেনজীর একা না, তার মত মাফিয়ারা বাংলাদেশকে গিলে ফেলেছে৷ স্যাংশন খাওয়া ব্যক্তিকে পুলিশ প্রধান বানানো হয়েছে। গোটা রাষ্ট্র আজ দুর্নীতিবাজদের আড্ডা খানায় পরিণত হয়েছে৷ সাবেক সেনা প্রধানকেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে৷ এটা সেনাবাহিনীর জন্য লজ্জ্বাজনক৷ ক্ষমতায় থাকার জন্য সরকার এসব কর্মকর্তাদের যা খুশি তাই করার সুযোগ করে দিয়েছে৷ এর দায়ভার সরকার এড়াতে পারে না৷ এদের সর্বোচ্চ বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে৷
তিনি বলেন, ভোটের অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়াতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে গরীব মানুষ৷ রাজনৈতিক দলগুলো সমাবেশে রিকশা শ্রমিকদের ব্যবহার করে৷ কিন্তু, রিকশা শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কোনো কাজ করে না৷ শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের অধিকার নিয়ে কোনো কাজ করে না৷ রিকশা শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত৷ রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হলে পুলিশি নির্যাতন চলে৷ রিকশা এখন গ্যারেজ পর্যন্ত নিরাপদ নয়৷ বাজার ব্যবস্থার কোনো নিয়ন্ত্রন নেই৷ সবকিছু সিন্ডিকেটের দখলে৷ সরকার দেশ চালাতে পারছে না৷
রিক্সা শ্রমিকদের দাবির প্রতি আমরা সংহতি জানিয়ে সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আগামী বাজেটের আগে রিকশা শ্রমিকদের সাথে বসুন, আলোচনা করুন৷ তাদের ভাগ্য উন্নয়নে থোক বরাদ্দ দিতে হবে৷ অধৈধ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সম্পদ বাজেয়াপ্ত করলে ২০ লক্ষ গরীব মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন সম্ভব৷ সরকার বাংলাদেশকে লুটের রাজ্যে পরিণত পরেছে৷
এসময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সরকারী চাকরীতে রিকশাচালকদের সন্তানদের কোটাভিত্তিক নিয়োগের দাবি তুলেছেন বাংলাদেশ বিপ্লবী রিকশা শ্রমিক সংহতি৷ সমাবেশে বক্তারা বলেন, লক্ষ লক্ষ রিকশা শ্রমিকেরা এখন বহুকষ্টে দিন পার করছে। অমানবিক শ্রমের সাথে যুক্ত রিকশা শ্রমিকদের এই সমাজ ও রাষ্ট্রে কোন দাম নেই, মান সম্মানও নেই। রিকশা শ্রমিকদের মানুষ বলে মনে করা হয়না। ভোটের অধিকার না থাকায় সমাজে তাদের দাম আরও কমেছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রিকশা শ্রমিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, রিক্সা চালকদের থাকার ভাল ব্যবস্থা নেই, উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই, শ্রমিক পরিবারের ছেলে মেয়েদের প্রয়োজনীয় শিক্ষার, রেশনের ব্যবস্থা নেই। এর সাথে রয়েছে পুলিশ, মাস্তান ও লাইসেন্সের বহুরকম হয়রানি। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে রিকশা শ্রমিকদের এখন পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকাই কঠিন। সবাই রিকশা শ্রমিকদের সেবা নেয়, কিন্তু তাদেরকে কোন অধিকার দিতে চায় না৷ তাদের দুঃখ কষ্ট দেখার কেউ নেই। রাজনৈতিক দল তাদের মিটিং-মিছিলে রিকশা শ্রমিকদের ব্যবহার করে কিন্তু রিকশা শ্রমিকদের অমানবিক জীবন নিয়ে তারা কোন ভাবনা চিন্তা করেনা।
এসময় রিক্সা চালকদের জীবনমান উন্নয়বে নয় দফা দাবি তুলে ধরা হয়৷ দাবিগুলো হলো, পরিবেশবান্ধব রিকশার আধুনিকায়ন করা,  শ্রমিকদেরকে হয়রানি না করে তাদেরকে রাস্তায় চলতে দেওয়া ও শ্রমিকদের সাথে দুর্ব্যবহার তুই- তোকারি বন্ধ করা৷ রিকশা শ্রমিকদের জন্য সারা বছর কমদামে রেশনের ব্যবস্থা করা৷ রিকশা শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান, শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ফ্রী শিক্ষা ও ফ্রী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। সরকারি চাকুরিতে শ্রমিক পরিবারের সন্তানদের কোটাভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া। শ্রমিকদের অঙ্গহানি ভাতা ও মৃত্যুকালীন অনুদান প্রদান নিশ্চিত করা৷ রিকশা শ্রমিকদের নবায়নবিহীন ফ্রী লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে আসা৷ বেকার, ভাসমান ও খণ্ডকালীন রিকশা শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। এছাড়া প্রয়োজনীয় রিকশা গ্যারেজের ব্যবস্থা করে তার নিরাপত্তা বিধান করা এবং রিকশা শ্রমিকদের মানবিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবিও জানানো হয়৷ সমাবেশ শেষে প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে রিকশা চালকদের নিয়ে একটি র‍্যালির আয়োজন করা হয়৷