রংপুর সীমান্তে বিএসএফের হাতে ১ বছরে প্রাণ গেছে ১০ জনের

এতে নিরাপত্তা হীনতায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে সীমান্তে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ।

রংপুর সীমান্তে বিএসএফের হাতে ১ বছরে প্রাণ গেছে ১০ জনের

প্রথম নিউজ, রংপুর: সীমান্তে সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ, চোরাচালান বন্ধ, সীমানা পিলার রক্ষাসহ অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে জনগণকে সচেতন করা হলেও কোনোভাবেই থামছে না সীমান্তে হত্যা। বিজিবির তথ্যমতে, চোরাচালান ও অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে গত ১ বছরে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন সীমান্তে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে। আহত হয়েছে শতাধিক। এতে নিরাপত্তা হীনতায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে সীমান্তে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ।

ভারতীয়দের কড়া প্রতিবাদের মুখে বিজিবি মহানন্দাসহ সব সীমান্ত নদীর ভারতীয় অংশে দফায় দফায় পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দিলে বিপাকে পড়ে হাজার হাজার পাথর শ্রমিক। সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবি সার্বক্ষণিক নজরদারি করলেও মানছে না কেউ। 
বিজিবি জানায়, নদীর উভয় অংশে গভীর খননের মাধ্যমে পাথর উত্তোলন করার কারণে নদীর তীর ভাঙনের মুখে পড়ে সীমান্ত পিলার বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সমগ্র সীমান্তে ১৯২টি পিলার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে ভূখণ্ড সংরক্ষণ করতে নানা বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। পাথর সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে অনেকে বেছে নিয়েছে গরু চোরাচালানের ব্যবসা। ফলে সীমান্তে বাড়ছে প্রাণহানির ঘটনা। অস্থির হয়ে পড়ছে সীমান্ত, বাড়ছে সীমান্তে বসবাসকারী সাধারণ মানুষের উৎকণ্ঠা। এছাড়াও সীমান্তের গ্রামগুলোতে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের নানাভাবে নির্যাতন করছে বিএসএফ। এমন অভিযোগ করছে সীমান্তে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ। 
পঞ্চগড় সীমান্তের কিছু কিছু জায়গায় কাটা তারের বেড়া না থাকায় একটি সংঘবদ্ধ চোরাকারবারি দল দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ভারতে প্রবেশ করে গরু আনতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে নিহত হচ্ছে। এসব ঘটনায় সীমান্তে বসবাসকারী সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়ছে উৎকণ্ঠা। এক্ষেত্রে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি উঠেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষের। 
জেলা সদরের নিকটবর্তী সীমান্ত হাড়িভাসা ইউনিয়নের ঘাঘরা মোমিনপাড়া এলাকায় প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকায় নেই কাটা তারের বেড়া। একটি সংঘবদ্ধ চোরাকারবারি দল এই পথ ব্যবহার করছে গরু চোরাচালানে। সম্প্রতি গরু আনতে গিয়ে বিএসএফএর গুলিতে নিহত হয়েছে এক বাংলাদেশি নাগরিক। অরক্ষিত এই সীমানায় প্রতিনিয়তই গরু ঢুকছে। এলাকার মানুষ এ বিষয়ে স্থানীয় বিজিবির কাছে অভিযোগ করলেও কার্যত কোনো ফল পাচ্ছেন না তারা। 
হাড়িভাসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নুর-ই-আলম অভিযোগ করে বলেন, অরক্ষিত এ সীমান্তে চোরাচালান হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার মানুষ এই রুট ব্যবহার করে গরুসহ মাদকদ্রব্য পার করছে। স্থানীয় বিজিবির ভূমিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 
সীমান্ত ঘেঁষা বেরুবাড়ি এলাকার নাজমুল হক জানান, কাঁটাতার না থাকায় ১ কিলোমিটার এলাকা দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে চোরাকারবারিরা গরু পার করছে। এতে প্রায় প্রতি রাতেই বিএসএফের গুলির শব্দ শুনতে হয়, রাতে উৎকণ্ঠায় ঘুম আসে না।
জানা যায়, পঞ্চগড় সদর আটোয়ারী, তেঁতুলিয়া এবং বোদা উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান হচ্ছে ভারতীয় গরু। একটি শক্ত সিন্ডিকেটে এসব গরু বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভুয়া পারমিট তৈরি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য তোলা হচ্ছে এসব ভারতীয় গরু। 
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. সাবেদ আলী জানান, লোভের বসে পড়ে কিছু মানুষ চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। বিজিবিকে সঙ্গে নিয়ে সীমান্তে যৌথ অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। অবিলম্বে সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধ মাদকসহ সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সীমান্তে অব্যাহত হত্যাকাণ্ডের কারণ জানতে চাইলে স্থানীয় ১৮ বিজিবির অধিনায়ক কোন বক্তব্য দেননি। তিনি বলেন, সেক্টর কমান্ডারকে সঙ্গে যোগাযোগ করতে।