বিরোধী নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার ষড়যন্ত্রে বিভোর সরকার: জামায়াত

বুধবার রাজধানীতে 'দেশে বিদ্যমান সংঘাতমুখর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধার এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে' আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

বিরোধী নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার ষড়যন্ত্রে বিভোর সরকার: জামায়াত

প্রথম নিউজ, অনলাইন: বর্তমান সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে দোষী সাব্যস্ত করে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার ষড়যন্ত্রে বিভোর রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। বুধবার রাজধানীতে 'দেশে বিদ্যমান সংঘাতমুখর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধার এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে' আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উল্লেখ করে মুজিবুর রহমান বলেন, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু সরকার জনগণের দাবি অগ্রাহ্য করে একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে দোষী সাব্যস্ত করে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার ষড়যন্ত্রে বিভোর। এ জন্য বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাত নয়টা পর্যন্ত সাক্ষী গ্রহণ করা হয়েছে। 

বর্তমান সরকার কাউকে শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ ও মিটিং-মিছিল করতে দিচ্ছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সভা- সমাবেশের দিন সরকারি দল পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। সরকারের দায়িত্ব হলো দেশে শান্তি, শৃঙ্খলা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সরকার তার দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। 

‘সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিরোধীদলকে নির্বাচনের বাইরে রেখে ২০১৪ ও ২০১৮ স্টাইলে আরেকটি নির্বাচনের নামে প্রহসন করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা। এই লক্ষ্য হাসিলের জন্য তারা জামায়াতে ইসলামীকে সভা, সমাবেশ ও মিছিল করতে দিচ্ছে না। সরকারের জেনে রাখা উচিত জনগণ কোনো প্রহসনের নির্বাচন মেনে নিবে না।’ জামায়াতে ইসলামী একটি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, জামায়াত সব সময়ই শান্তিপূর্ণ উপায়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নে অভ্যস্ত। জামায়াতের রাজনীতি করার অধিকার সংবিধান স্বীকৃত। এ অধিকার কেড়ে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

কারণ দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান জামায়াতসহ সকল রাজনৈতিক দলকে এ অধিকার দিয়েছে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, জামায়াতকে তার রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে না দিয়ে জামায়াতের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। গত ১৫ বছর যাবৎ জামায়াতকে নির্মূল করার জন্য সব ধরনের অপচেষ্টা চালিয়েছে এ সরকার।

জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর বলেন, জামায়াতও আইনের দৃষ্টিতে সভা ও সমাবেশ করার সুযোগ পাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জামায়াতকে সে সুযোগ না দিয়ে সারাদেশে জামায়াত নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে সারাদেশে জামায়াতের সাত শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ জামায়াত নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে মূল্যবান আসবাবপত্র ভাঙচুর ও তছনছ করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মহিলাদেরকে নাজেহাল করছে। কোনো কোনো এলাকায় পুরুষ নেতাকর্মীদের না পেয়ে তাদের স্ত্রী-সন্তানদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এসব কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ বেআইনি ও মানবাধিকার পরিপন্থি।

তিনি বলেন, সরকারের সকল ষড়যন্ত্র বানচাল করে দিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধার এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সেই লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী ঘোষিত ৪ঠা আগস্টের সমাবেশ ও অন্যান্য কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উপায়ে সফল করে তোলার জন্য আমরা দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করছি।