বাজারে অস্থিরতা চলছেই, ক্রেতারা অসহায়

গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি ডজন ডিম ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। আর ব্রয়লার মুরগির দাম ২০০ টাকা কেজি ছুঁয়েছে।

বাজারে অস্থিরতা চলছেই, ক্রেতারা অসহায়

প্রথম নিউজ, অনলাইন: রাজধানীর বাজারে চলছে অস্থিরতা। বৃষ্টি আর শীতের অজুহাতে বাজারে বেড়েছে সবজির দাম। বেশির ভাগ সবজিই ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে বাড়তি ডিম ও মুরগির দামও। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি ডজন ডিম ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। আর ব্রয়লার মুরগির দাম ২০০ টাকা কেজি ছুঁয়েছে। এ অবস্থায় চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন বাজার করতে আসা মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে এখনো পর্যাপ্ত সবজি আসেনি, যে কারণে দামও তুলনামূলক কিছুটা বেশি। তবে শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে এই দাম কমে আসবে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। 

বাজারে ডিমের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মুরগির দামও। ব্রয়লার মুরগির কেজি ২১০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকা কেজি। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১১শ’ টাকায়। ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ায় বাজারগুলোতে ক্রেতারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। এক ক্রেতা জানালেন প্রতি সপ্তাহেই বিভিন্ন উছিলায় বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে থাকেন। গত সপ্তাহে এবং এর আগের সপ্তাহে ব্রয়লারের দাম বেড়েছে। একবার দাম বাড়ার পর আর কোনোভাবেই তা কমছে না।

ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি ডজনে দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। বড় বাজারে কিনলে ডিমের ডজন পড়ছে ১৬০ টাকা, যা পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানে ১৬৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। অর্থাৎ ভোক্তাদের এখন একটি ডিম কিনতে গুনতে হচ্ছে ১৫ টাকা। অথচ সরকার প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে।

মাছের বাজারে ইলিশ আকারভেদে ১০০০ থেকে ১৬০০ টাকা, রুই ও কাতল আকারভেদে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। চাষের কই ৩০০ টাকায় বিক্রি হলেও দেশি কই বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এ ছাড়া পাবদা ৪০০, তেলাপিয়া ২৫০ এবং পাঙ্গাশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০ টাকায়। তবে অন্য দিনের মতোই চাষের মাছের চেয়ে নদীর মাছের দাম ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি।

বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। সাদা বেগুন ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। আর বেগুনি রঙের গোল বেগুনের দাম ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। সবজির মধ্যে টমেটো ও গাজর বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। করলা, ধুন্দুল, ঝিঙে, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, কচুর মুখী, কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি। ৮০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে হাতে গোনা দু’একটি সবজি। এরমধ্যে পটোল ও ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। তবে বাজারে সবচেয়ে সস্তার সবজি এখন পেঁপে, প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। কাঁচা মরিচের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কমেনি, বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়। আমদানি করা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। সরকার আলু, দেশি পিয়াজ ও ডিমের দাম বেঁধে দিলেও কোনোটিই নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না। 
বাজার করতে আসা সাহেল বলেন, শুক্রবার এলেই সবজি, মাছ-মাংসের দাম বেড়ে যায়। পরশু বাজার করে নিয়ে গেছি, ঢেঁড়স ছিল ৫০ টাকা, আজকে নাকি ৮০ টাকা। দুইদিনেই দেশে কী এমন হয়ে গেল যে, ৩০ টাকা দাম বেড়ে গেল? তার মানে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো দাম বাড়ায়। আর ব্যবসায়ীদের এই অনিয়ম যেন দেখার কেউ নেই।

আকলিমা বেগম বলেন, মুলার কেজি ৮০ টাকা, যা সাধারণত ৩০/৪০ টাকার মধ্যেই থাকে। বাজারে শিম এসেছে অন্তত আরও ১৫-২০ আগে, অথচ দাম এখনো ২০০ টাকা কেজি। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কেনার সামর্থ্য নেই। যে সবজিরই দাম জিজ্ঞেস করি, ৭০/৮০ টাকার নিচে কিছুই নেই। 

গত ১৪ই সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খুচরা বাজারে ডিম, আলু ও পিয়াজের দাম নিধার্রণ করে দেয়। সে হিসেবে গত এক মাসেও এসব পণ্যের বেঁধে দেয়া দর বাজারে কার্যকর হয়নি। ওই দামে প্রতি কেজি পিয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা, ডিমের ডজন ১৪৪ টাকা এবং আলুর কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকার মধ্যে বিক্রি হওয়ার কথা। অথচ বাজারে এখন পিয়াজ ৭৫ থেকে ১০০ টাকা, আলু ৫০ টাকা এবং ডিমের ডজন ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।