বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া, সন্ধ্যা হলে ঘুটঘুটে অন্ধকার ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ

বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় তিনটির মধ্যে দুটি মিটারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এতে ভোগান্তি হচ্ছে চালক-যাত্রীসহ সর্ব সাধারণ।

বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া, সন্ধ্যা হলে ঘুটঘুটে অন্ধকার ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ

প্রথম নিউজ, ফরিদপুর: ভাঙ্গা গোলচত্বরসহ এক্সপ্রেসওয়ের দিনের সৌন্দর্য এক রকম আর রাতের সৌন্দর্য অন্যরকম। তবে গত ৫০ দিন ধরে এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গার মোড় এলাকায় নয়নাভিরাম আলো জ্বলছে না। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় তিনটির মধ্যে দুটি মিটারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এতে ভোগান্তি হচ্ছে চালক-যাত্রীসহ সর্ব সাধারণ।

জানা গেছে, ওই এক্সপ্রেসওয়ের রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখভালের দ্বায়িত্ব পালন করে মুন্সিগঞ্জ সড়ক বিভাগ। গত আট মাস ধরে তারা সড়কের পাশের বাতির বিল পরিশোধ করেনি। জমতে জমতে বকেয়া টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ লাখ ৬৩ হাজার ৫২৫ টাকা। ফলে রাতের বেলায় দেশের একমাত্র এক্সপ্রেসওয়ে হিসেবে স্বীকৃত এ সড়ক পথের বিস্তীর্ণ অঞ্চল অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে থাকে। এক্সপ্রেসওয়ের যে অংশটুকুতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ওই অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো)।

ওজোপাডিকোর ভাঙ্গা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিলের বকেয়ার টাকা জমতে জমতে আকারে বড় হয়ে উঠছিল তখন থেকে তারা সড়ক বিভাগকে বকেয়া টাকা পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছিল। এ পর্যন্ত বিলের টাকা চেয়ে সাত দফা লিখিত চিঠি আকারে জানানো হয়েছে সড়ক বিভাগকে। কিন্তু বিল পরিশোধের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় গত ৬ জুন থেকে ওই এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশসহ আশপাশের বড় বড় বাতির ২ টি মিটারের বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

সড়ক বিভাগ দাবি করেছে, বিদ্যুৎ এর বিল তারা পরিশোধ করবে না এমনটা বলেনি। সময়মত টাকার বরাদ্দ না পাওয়ায় তারা টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। সরেজমিনে দেখা যায়, সন্ধ্যার পর আলো না থাকায় প্রত্যেক পরিবহনের নিজস্ব আলোতে চলছে গাড়িগুলো। অন্ধকারে আর ১০টি মহাসড়কের মতোই এটিকে মনে হয়। রাতের অন্ধকারে আলো না থাকায় এক্সপ্রেসওয়ের সৌন্দর্যকে ম্লান করে দিয়েছে। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার তার মধ্যে দূরপাল্লার বাসগুলো হেড লাইট জ্বালিয়ে দ্রুতগতিতে যাতায়াত করছে। সড়কের পাশে অন্য যানবাহন বা অন্যান্য সময়ের মত গোলচত্বরে ছোট ছোট গাড়িগুলোরও চলাফেরা কম চোখে পড়ে। সব মিলিয়ে সন্ধ্যার পর থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে এক ভৌতিক ও অরক্ষিত পরিবেশ বিরাজ করছে। বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ এলাকাটি দেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন এরিয়া হিসেবে পরিচিতি পায়। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় রাতের বেলা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার অন্যতম প্রবেশ পথ এখন ভুতুড়ে অবস্থায় পড়ে আছে।

ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড (ওজোপাডিকো) ভাঙ্গা কার্যালয় জানায়, ওই এক্সপ্রেওেয়ের ভাঙ্গা গোলচত্বর এবং বগাইল টোল প্লাজার নিচে দুই পাশে দুটিসহ মোট তিনটি ইন্টারচেঞ্জ এলাকায় তাদের মালিকানাধীন তিনটি মিটার রয়েছে। এসব মিটার থেকেই এক্সপ্রেসওয়েতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে গোলচত্বরের মিটারটি সবচেয়ে বড়। এ তিনটি ইন্টারচেঞ্জ মিটারে মাসে গড়ে চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকার বিদ্যুত বিল আসে। শুরু থেকে এ সড়কটির তদারকির দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত মুন্সীগঞ্জ সড়ক বিভাগ এ বিল পরিশোধ করে আসছিল। কিন্তু ২০২২ সালের অক্টোবর মাস থেকে বিল দেওয়া বন্ধ করে দেয় সড়ক বিভাগ। এর ফলে ওই আট মাসে সড়ক বিভাগের কাছে ওজোপাডিকো ভাঙ্গার বিদ্যুৎ বিল বাবদ বকেয়া দাঁড়ায় ৩১ লাখ ৬৩ হাজার ৫২৫ টাকা। বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও বিলের বকেয়া টাকা জমা না দেওয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গত ৬ জুন থেকে এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গার ইন্টারচেঞ্জ এলাকার তিনটির মধ্যে দুটি মিটারের বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এর ফলে এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা গোল চত্বরের সম্পূর্ণ অংশ, গোল চত্ত্বর থেকে বগাইল টোল প্লাজা সড়কের দুই পাশে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে রয়েছে। তবে সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ খরচ হওয়া একটি মিটারের অধীনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করায় শুধু আতাদী উড়াল সড়কের দুই পাশে ৬২টি খাম্বায় আলো জ্বলছে।

ওজোপাডিকো ভাঙ্গার উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, সড়ক বিভাগ বিল এখনও পরিশোধ করেনি। সড়ক বিভাগ মুন্সিগঞ্জ তাদের জানিয়েছে এখনও তারা ফান্ড পাননি। ফান্ড পেলে বিল দেবে। মুন্সীগঞ্জ সড়ক ও জনপথের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ইন্টারচেঞ্জে অনেক টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া টাকার জন্য বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ একাধিকবার অবহিত করেছে। কিন্তু আমরাও নিরুপায়। এই মুহূর্তে বিলের এত টাকা পরিশোধের জন্য ফান্ডে টাকা নেই। টাকা পেলেই বিল পরিশোধ করে দেওয়া হবে।

মন্সিগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহির রেজা বলেন, আমাদের সমগ্র এক্সপ্রেসওয়ের বিষয়টি দেখতে হয়। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহও করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব বিল আমরা ধাপে ধাপে পরিশোধ করি। এটা সরকারি টাকা। এই টাকা আজ হোক বা কাল  পাওয়াই যাবে। বিলের জন্য এত বড় একটা এলাকা বিদ্যুৎবিহীন রাখার ঘটনা দুঃখজনক। তবে কবে নাগাদ বিল পরিশোধ কিংবা বিদ্যুৎ চালু সম্ভব হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।

এক্সপ্রেসওয়ের বগাইল টোলপ্লাজা পার হয়ে ঢাকার দিকের অংশটি পড়েছে পল্লি বিদ্যুতের আওতায়। ফরিদপুর পল্লি বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার ( জিএম) আবুল হোসেন বলেন, বগাইল টোল প্লাজা থেকে এক্সপ্রেসওয়ের ঢাকার অংশে বকেয়া না থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ অব্যাহত রয়েছে। ২০২২ সালের ২৫ মে এক্সপ্রেসওয়েটি চালু হওয়ার পর ভাঙ্গা গোল চত্বরটি একটি দর্শনীয় জায়গা হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন এলাকাবাসীসহ দূর-দূরান্তের ভ্রমণ পিপাসু শত শত মানুষ এ মোড়ে ভীড় করে সময় কাটায়। এদের জন্য কিছু অস্থায়ী ভাসমান দোকানও গড়ে উঠেছে ওই চত্বরে। বিদ্যুৎ না থাকায় দর্শনার্থীদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় তারাও দোকান গুটিয়ে ফেলছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা সুজন মাহমুদ (২৯) বলেন, সন্ধ্যার পর আগে অনেক জায়গার মানুষ এখানে ঘুরতে আসত। তারা এখন আসেন না। এছাড়া এখানে গভীর রাত পর্যন্ত ভাসমান দোকান দোকান খোলা ও যাতায়াতের জন্য রিক্সা অটোরিকশা পাওয়া যেত। এখন সেগুলোও পাওয়া যায় না। আমরা অবাক হয়েছি এতদিন আলো বন্ধ থাকায়। তিনি বলেন, আমরা তো বুঝি কারেন্ট আর রাস্তা সবই সরকারি। তাইলে কে কার বিল দিলো না এজন্য এত দৃষ্টিনন্দন একটা স্থাপনা বিদ্যুৎবিহীন থাকবে?

ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক পান্না বালা বলেন, দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে এটা। এটাকে এতদিন বিদ্যুৎবিহীন রাখা কোনো যুক্তি হতে পারে না। এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। এই বিল পরিশোধের ব্যাপারটা স্থানীয় কার্যালয়ের মাধ্যমে না হয়ে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ও সেতু মন্ত্রণালয় সমন্বয় করলে ভালো হয়।সেখান থেকে বিল পরিশোধ করা হলে এই সমস্যা হত না।সর্বপরী খুব দ্রুত সময়ে এটার সমাধান হওয়া উচিত। ভাঙ্গা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়ারুল ইসলাম বলেন, ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ এলাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা। অনেক গাড়ি, মানুষ ও ভিআইপিদের যাতায়াত হয় এখান দিয়ে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে রাতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সচল থাকা প্রয়োজন।