পদত্যাগ না করলে জনগণের উত্তাল ঢেউয়ে সরকার ভেসে যাবে: ডা: জাহিদ 

সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বুকে সাহস থাকলে, জনগণের সামনে সামনে আসুন। জনগণকে ভোট প্রয়োগ করার সুযোগ দিন। তত্বাবধায়ক সরকার অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।

পদত্যাগ না করলে জনগণের উত্তাল ঢেউয়ে সরকার ভেসে যাবে: ডা: জাহিদ 

প্রথম নিউজ, মৌলভীবাজার: বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন বুকে সাহস থাকলে আওয়ামী লীগকে জনগণের সামনে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন। তিনি বলেন, বুকে সাহস থাকলে, জনগণের সামনে সামনে আসুন। জনগণকে ভোট প্রয়োগ করার সুযোগ দিন। তত্বাবধায়ক সরকার অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। আপনারা এত উন্নয়ন করেছেন, সেই নির্বাচনে জনগণ যদি আপনাদের ভোট, আমরা আপনাদের সালাম দিব। আর যদি জনগণ আপনাদেরকে লাল কার্ড দেখিয়ে দেয়। তাহলে আর কিছুই করার থাকবে না।

আজ শনিবার ২০ মে বিকেলে মৌলভীবাজার শহরের টাউন ঈদগা প্রাঙ্গণে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে জেলা বিএনপির আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ডা: জাহিদ বলেন, আজকে জনগনের প্রতি আপনাদের(আ.লীগের) এত আস্থা কমেছে কেন? । আজকে কেন আপনারা আইন আদালত -আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের উপর ভর করে চলতে হয়। সাহস থাকলে জনগণের কাতারে আসুন। জনগণের মনের ভাষা বুঝারর চেষ্টা করুন। জনগণকে তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ দিন। তাহলেই বুঝতে পারবেন কতটা উন্নয়ন করেছেন না, লুটপাট করেছেন। আমরা তো চোর বলি, চোর তো অনেক ভাল। আপনারা আওয়ামীলীগ ডাকাতের চেয়েও অধম। আপনারা দেশের অর্থনীতিকে ডাকাতি করে, লোপাট করে ফোকলা করে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আজকে দেশের মানুষ, দেশের ব্যবসায়ীরা ইমপোর্ট করতে পারে না। পত্রিকায় খবর দেখলাম, সেই পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কয়লার জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এই যদি হয় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, তাহলে আজকে দুশ্চিন্তা তো রয়েছেই। আর আপনারা এখন আবোল তাবোল বকছেন। তাই বলবো, সময় থাকতে দেয়ালের লিখন পড়তে শিখুন। এদেশের মানুষ কোন অবস্থাতেই কোন স্বৈরাচারকে মেনে নেয় নাই। কারণ এই দেশের মানুষকে দাবিয়ে রাখা যায় না। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন যেমন পুলিশ দিয়ে দাবিয়ে রাখা যায় নাই, উনোসত্তোরের গণঅভ্যূত্থানকে দাবিয়ে রাখা যায় নাই। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিকে দাবিয়ে রাখা যায় নাই। সর্বশেষ নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে এই বাংলাদেশের নরম মানুষগুলোই জেগে উঠেছিল। সময় আছে এখনও দেয়ালের লিখন পড়তে শিখুন। যত তারাতাড়ি পদত্যাগ করবেন, এদেশের মানুষ আপনাদেরকে তত তারাতাড়ি ক্ষমা করতে পারে। আর যদি পদত্যাগ না করেন, তাহলে জনগনের রোষের মুখে, জনগণের দাবি, জনগণের যে উত্তাল ঢেউ উঠবে তার মধ্যে ভেসে যাবেন। কোন বাহিনী কোনভাবে আপনাদেরকে রক্ষা করতে পারবে না। কারণ সব বাহিনীই জানে জনগণের বিপক্ষে যাওয়া যাবে না, সেদিন সবাই জনগণের পক্ষে চলে আসবে। কাজেই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ এখন জেগে উঠেছে, তাদের গণতান্ত্রিকার অধিকার আদায়ে দেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। বিএনপির বাহিরেও দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। 
কোথাও পালানোর জায়গা থাকবে না। কাজেই এখনও সময় আছে, জনগণের উত্তাল ঢেউ থেকে বাঁচতে হলে পদত্যাগ করুন এবং জনগণের দাবি মেনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দিন। সেই সাথে জনগণের অধিকার জনগন যাতে ফেরত পায়, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন জাতীয় নির্বাচনই হতে পারে শুধু একমাত্র সমাধান। সেই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত, দেশবাসী ও বিএনপির নেতাকর্মীদের বলতে চাই যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ। 
বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান বলেন, দেশের জনগণ এই অবৈধ ক্ষমতা দখলদার সরকারের বিরুদ্ধে আজ ফুঁসে উঠেছে। তাদের অবৈধ শাসনের জাতাকলে পিষ্ট হয়ে মানুষের আজ নাভিশ্বাস। দেশের মানুষ এই সরকারকে সরকার আর সরকার বলে না। এরা মাস্তান দখলদার সরকার। কথায় কথায় বিদ্যুত গ্যাসের দাম বাড়ায়। জিনিস পত্রের দাম বাড়ায়। তারা আজকে পনেরোটা বছর দেশের জনগণের বিনাভোটে অবৈধ ভাবে ক্ষমতায় বসে আছে। ২০০৮ সালে আতাঁত করে নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছে। ২০১৪ সালে বিনাভোটের নির্বাচনে শতকরা পাঁচ ভাগ মানুষও ভোট দেয় নাই। সেই নির্বাচনে ১৫৪ জন অটোপাস এমপি হয়েছে। আর ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এই অবৈধ ক্ষমতা দখলদার, দেশি বিদেশী প্রভুদের মদদে সরকারি সংস্থা আর প্রশাসনকে কুক্ষিগত করে ক্ষমতা দখল করে আছে। এই অবৈধ ক্ষমতা দখলদার সাড়ে সতেরো আটারো কোটি মানুষের ভোটাধিকার আজকে শেষ করে দিয়েছে। জনগনের কি কস্ট হচ্ছে না হচ্ছে এর জন্য তাদের কোন দরদ নেই। আজকে এই ক্ষমতা দখলদারের ক্ষমতায় থাকা আর না থাকার মাঝখানে পুলিশ বাহিনী ছাড়া আর কেউ নেই। 
তিনি বলেন-আওয়ামীলীগকে আজ ভোটের জন্য  জনগণের কাছে যেতে হয় না। তারা দেশ চালায় পুলিশ আর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে। তাদের পুলিশ দরকার আর আদালত দরকার। তাই মানুষ বলে আওয়ামীলীগ কোন রাজনৈতিক দল নয়, আওয়ামীলীগ একটা মাস্তান দল। এই মাস্তান সরকার। আমাদের ঘাড়ের উপরে চেপে বসে আছে। জনগনের ট্যাক্সের টাকায় প্রধানমন্ত্রী যে জাপান, আমেরিকা আর বিলাত ঘুরতে গেলেন, তিনি কি জনগনের কাছে গিয়েছিলেন। এই  সফরের কোন রাস্ট্রের টেলিভিশন কোন পত্রিকা, এর কোন নিউজ দেয় নাই। তাদের কোন লজ্জা শরম নাই। গায়ের জুড়ে যারা ক্ষমতায় থাকে তাদের কোন লজ্জা নাই। গন্ডারের চামড়া থেকেও মোটা চামড়া তাদের। বেহায়া র্নিলজ্জ ক্ষমতায় থাকার জন্য যা দরকার তারা তাই করে। একজনকে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছেন। বেচারা রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে শেখ হাসিনাকে পায়ে ধরে সালাম করতো। আর আজকে তিনি ক্ষমতায় থাকার জন্য সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোক মনে করে উনাকে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছে। এখন এই সর্বপরাক্রমশালী শেখ হাসিনা তাকে কল অন করতে  এখন বঙ্গভবনে যান, তাঁর সাথে দেখা করতে। কোথায় মান ইজ্জত নেমেছে। যে লোক পায়ে ধরে  উনাকে সালাম করতো, ক্ষমতার মোহে তিনি  তাকে প্রেসিডেন্ট বানান। 
জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ফয়সল আহমদ ও প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফখরুল ইসলাম এর পরিচালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি ফয়জুল করিম ময়ুন, শ্রীমঙ্গল পৌর সভার মেয়র মো.মহসীন মিয়া মধু, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুক, আশিক মোশাররফ, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ সভাপতি ও জেলা যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জল, জেলা কৃষকদলের আহবায়ক শামিম আহমেদ, সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান নিজাম, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ রশীদ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এম এ মুহিত, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারণ সম্পাদক জিএম মুক্তাদির রাজু, পৌর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সরোয়ার মজুমদার ইমন, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ আহমেদ মাহফুজ, কমলগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক গোলাম কিবরিয়া শফি, রাজনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি জিতু মিয়া, কুলাউড়া উপজেলা বিএনপি নেতা এমএ মজিদ, আজিজুর রহমান মনির চেয়ারম্যান, বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাফিজ, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকিদুর রহমান সুহান প্রমুখ। 
ডা: এ জেড এম জাহিদ আরো বলেন, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন এই উর্ধ্বগতি যেভাবে চলছে, অর্থাৎ তারা দুইদিন পর পর বিদ্যুৎ এর দাম বাড়ায়। আর বড় বড় বক্তব্য দেয় শতভাগ বিদ্যুতায়িত বাংলাদেশ। আর বাস্তবে কিছুক্ষন পর পর বিদ্যুৎ যায় আর আসে, যায় আর আসে। এই সিলেট এই মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল গ্যাস আছে, অর্থাৎ আপনাদেরই এলাকায় এই অবস্থা হয়, পঞ্চগড় দিনাজপুরের অবস্থা কি আপনারা চিন্তা করে দেখেন। অর্থাৎ উনারা(আ.লীগ) মুখে বলে বিদ্যুতায়িত বাংলাদেশ, আর আজকে বিদ্যুৎ এর যে কি করুণ অবস্থা আপনারা সাবাই টের পাচ্ছেন। দাম বাড়িয়েছে পনেরো গুণ এবং দাম বাড়ানোর সাথে কোন কিছুর মিল নাই। কুইক রেন্টালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়েছে। এর জন্য ইনডিমেনিটি দিয়েছে, অর্থাৎ এর বিরুদ্ধে কোন কথা বলা যাবে না, মামলা করা যাবে না। অর্থাৎ দেশের মানুষের টেক্স এর টাকা ব্যয় করছেন অথচ কথা বলতে পারবেন না। কারণ এই লুটপাটের সাথে সম্পৃক্ত এই সরকারের নিজের লোকেরা। সে জন্যই আজকে দেশের এই দূরবস্থা। আর জনগণ, জনগণের তো প্রয়োজন নাই। ২০১৪ সনে নির্বাচন হলো, ভোট কেন্দ্রে কিছু কিছু চতুষপদ জন্তু ছিল, আর ২০১৮ সনের নির্বাচনে দিনের ভোট রাতেই কভার। অর্থাৎ জনগণের কোন প্রয়োজন নাই। সে জন্য তেলের দাম দুইশো কি, আড়াইশো কি, জনগণের কষ্টে তাদের কিছু আসে যায় না। আটার দাম পঁচাত্তোর টাকা কেজি। তারা টের পায় না। কারণ তাদের তো জনগণের দরকার নাই। দ্রব্যমূল্যের যে কি উর্ধ্বগতির যে অবস্থা, দাম বাড়ায় কমায়। মনে হচ্ছে পৈতৃক সম্পত্তির মতো। কর্তৃত্ববাদী শাসনের একটা সীমা থাকা উচিত। কিন্তু আজকে জনগনের কাছে তাদের কোন দায় নাই। আজকে জনগনের কোন ক্ষমতাই নাই। বিএনপির যে যুগপৎ আন্দোলন রাজনৈতিক দল করছে, বিএনপিকে ক্ষমতায় নেয়ার জন্য নয়। জনগনের অধিকার, জনগনের ক্ষমতা, জনগনকে ফেরত দেয়ার জন্য এই আন্দোলন। 
 আজকে দেশে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি, মানবাধিকারের চরম অবনতি। এসব নিয়ে কোন কথাই বলা যাবে না, বললেই ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট নামে যে আইন বানিয়েছে, কথা বললেই মামলা। আজকে সাংবাদিকরা সব খবর দেখাতে পারে না, দেখালেই মামলা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করলেই মামলা করে দিবে। এই জঙলি শাসনের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন করা হয় নাই। তিনি বলেন- শহীদ রাস্ট্রপতি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, যখন তারা পালিয়ে গিয়েছিল, কেউ আত্মসমর্পন করেছিল। দেশের মানুষ যখন সত্যিকার অর্থে হতাশায় ভূগছিল সে সময় যে মানুষটি সমস্ত জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনিই হচ্ছেন শহীদ জিয়া। স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করেছিলেন। তিনি যুদ্ধ করে পালিয়ে যান নাই, যুদ্ধ করে  তিনি ব্যারাকে ফিরে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ আইনের প্রতি, দেশের প্রতি মমত্ববোধ কতটু শ্রদ্ধা থাকলে, তিনি বলেন নাই আমি ক্ষমতায় বসবো। বরং ব্যারাকে ফিরে গিয়ে তিনি চেয়েছিলেন এই দেশ সুন্দরভাবে চলুক। কিন্তু সাড়ে তিন বছরের মাথায় আমরা কি দেখলাম, উনারা দু একটি পছন্দের পত্রিকা রেখে দেশের  সব পত্র পত্রিকা বন্ধ করে দিলেন। এবং সকল রাজনৈতিক দল বন্ধ করে একটি দল গঠন করলেন। মাত্র এগারো মিনিটের মাথায় গণতান্ত্রীক বাংলাদেশ হয়ে গেল বাকশাল। অর্থাৎ এদেশের আওয়ামীলীগ, যারা মুখে গনতন্ত্রের কথা বলে। অথচ তাদের মনে এবং কাজে গনতন্ত্রের কোন লেশ মাত্র নেই। তারাই শুধু কথা বলবে, অন্য কাউকে কথা বলতে দিবে না। এবং আজকে তারা বড় বড় কথা বলছে, এত উন্নয়ন করছে। আসলে উনারা উন্নয়নের নামে দেশে লুটপাটতন্ত্র কায়েম করেছে।