নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নতুন ইসি গঠন করতে হবে: মির্জা ফখরুল

সোমবার (১৭ জুলাই) বিকেলে খুলনায় তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নতুন ইসি গঠন করতে হবে: মির্জা ফখরুল

প্রথম নিউজ, খুলনা: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন বন্ধে তরুণ সমাজকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এই সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচন হবে না। এ সরকার বাংলাদেশের মানুষকে জ্বালিয়ে শেষ করে দিয়েছে। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নতুন নির্বাচনের মধ্যে নতুন সরকার গঠন করতে হবে। এক দফা এক দাবি বাস্তবায়ন না হলে রাজপথেই ফয়সালা হবে।

আজ সোমবার খুলনায় তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সোমবার (১৭ জুলাই) বিকালে সোনালী ব্যাংক চত্বরে এ সমাবেশ হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনে তরুণ প্রজন্মকেও জাগ্রত করতে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদল এ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য দুটি চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়। চেয়ার দুটিতে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি রাখা ছিল।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘লুটেরাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তির আন্দোলনই হলো তারুণ্যের সমাবেশ। এই সমাবেশ ঢাকায় হবে ২২ জুলাই। ঢাকা-১৭ আসনে হিরো আলমের প্রার্থিতা বাতিল করার পর আবার ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে। এ সরকার রাজনৈতিক দেউলিয়া হয়ে গেছে। হিরো আলমেও ভীত। এরাই চিৎকার করে বলে গণতন্ত্র নাকি এদের হাতেই নিরাপদ।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি এই বাংলাদেশের জন্য নয়। একটা কঠিন ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমরা সময় কাটাচ্ছি। এই পরিস্থিতি থেকে দেশ ও দেশবাসীকে রক্ষায় এই তরুণ সমাজকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। খালেদা জিয়া সংগ্রাম করেই তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি এখনও গৃহবন্দি হয়েও দেশ রক্ষার সংগ্রাম করছেন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের ৬০০ নেতাকর্মী ঘুম হয়েছে। শত সহস্র নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছে। আবারও সেই নির্বাচন করতে চায়। সে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সব ধরনের অনিয়ম চলছে। একটা ব্যাংকেও কিছু নেই। সব শূন্য। পাচার করা টাকা ফেরত আনতে কোনও প্রশ্ন ছাড়াই আড়াই শতাংশ ইনসেনটিভ ঘোষণা করেছে সরকার। আর সার চার্জ নিয়ে নিয়ে জনতার পকেট খালি করতেছে। জুট মিলগুলো বন্ধ। পেট চালাতে মানুষ এখন ধর্মঘট করে। ১০ টাকার চাল দেবে ঘোষণা ছিল। কিন্তু ৯০ টাকাতেও চাল হয় না। এখন শুধু কাজ আর কাজ। মানুষকে সংগঠিত করে এ অবৈধ সরকারকে হটাতে হবে। তা না হলে দেশই থাকবে না। সরকারি চাকরি আওয়ামী লীগের লোকেরাই পায়। বিএনপির নাম গন্ধ আছে এমন লোক চাকরি পায় না। স্বাস্থ্য সেবা বলতে কিছু নেই। হাসপাতালে হাসপাতালে মানুষ কাতরাচ্ছে। ডেঙ্গুতে লোক মরছে। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিদেশ সফরে।’

যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, ‘র‍্যাব-পুলিশ বাদ রেখে পারলে সামনে আসো। আর জনতার কাতারে আসো পারলে, জনতা চামড়া খুলে নেবে। এক হিরো আলমের এতটাই ভয় যে তাকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি। সাংবিধানিক অধিকার নেই ভোটারদের। আমরা এই নতুন ভোটারদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় সরব, আন্দোলন করছি।’

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতনের জন্য আর সময় নেই। আমাদেরও ঘরে বসে থাকার সময় নেই। হাসিনার পতন না করা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবো না।

ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘খুলনা থেকে শেখ পরিবারকে হলুদ কার্ড দেখানো হলো। আগামী ২২ জুলাই ঢাকার তারুণ্যের সমাবেশ থেকে শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত করা হবে।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘আজকের তারুণ্য সেই ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের তারুণ্য। সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার তারুণ্য। এই তারুণ্যই আজ ভোটাধিকার বঞ্চিত। অথচ এই তারুণ্য মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় ক্লাস, থিসিস না করে মিছিলে মিছিলে রাজপথ কাঁপিয়েছে, সোনালী দিনগুলো কারাগারে কাটিয়েছে। এই তারুণ্যও আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে।’

প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। বক্তৃতা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা, খুলনা জেলার আহ্বায়ক আমির এজাজ খান প্রমুখ।