নাগরিকদের অধিকারের জায়গা ক্রমশ সংকুচিত হয়েছে- ইউএসএআইডি

ইউএসএআইডি-এর ‘কান্ট্রি ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন স্ট্রাটেজি (সিডিসিএস)’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ইস্যুতে এসব কথা বলা হয়েছে।

নাগরিকদের অধিকারের জায়গা ক্রমশ সংকুচিত হয়েছে- ইউএসএআইডি

প্রথম নিউজ, অনলাইন: বাংলাদেশ সরকারের নীতির কারণে এক দশক ধরে নাগরিকদের কথা বলার জায়গা (সিভিক স্পেস) ক্রমশ সংকুচিত হয়েছে। স্বাধীনভাবে সভা-সমাবেশ ও কথা বলতে দেয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে একধরনের বিধিনিষেধ। এক দলের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার কারণে সরকারের সঙ্গে নাগরিক সমাজ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর যোগাযোগের সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ সরকারকে সংস্কারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ইউএসএআইডি-এর ‘কান্ট্রি ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন স্ট্রাটেজি (সিডিসিএস)’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ইস্যুতে এসব কথা বলা হয়েছে। গত ২০শে মে এই প্রতিবেদনটি আপডেট করা হয়েছে। এতে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করা হয়।

বলা হয়, ফরেন ডোনেশন্স রেগুলেশন অ্যাক্ট এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো আইন পাস করার কারণে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সীমিত সক্ষমতা, দুর্বল শাসন ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে তদারকির অভাবে জনগণের সেবা পাওয়ার সুযোগ কমে গেছে। দেশের বিচারিক খাতে দেওয়ানি এবং ফৌজদারি মামলাগুলোর জট লেগে আছে। এক্ষেত্রে বিকল্প সমাধানের পথ সীমিত। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর দেশে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে একটি রাজনৈতিক দলের কাছে। তাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার উন্নতি এবং তার সুরক্ষা প্রয়োজন। 

এ জন্য রাজনৈতিক দল, নাগরিক এবং নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোর সঙ্গে কাজ করছে ইউএসএআইডি। এর আওতায় আছে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারী, যুবসমাজ ও সংখ্যালঘুদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এবং রাজনীতিতে বহুত্ববাদ। উন্নত সুশাসনের দক্ষতা এবং জ্ঞান উন্নত করতে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে ইউএসএআইডি। এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অতি উচ্চ মাত্রায় দুর্বল শাসন কাঠামো। এর ফলে দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর নয়। সম্পদের ব্যবস্থাপনা অকার্যকর। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা কারখানা ধসের ফলে বাংলাদেশে শ্রম অধিকার ও এক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত সুরক্ষার ঘাটতির বিষয় বিশ্বের নজরে এসেছে।

 গত এক দশকে শ্রম অধিকার এবং শ্রমিক ইউনিয়নের স্বাধীনতায় অগ্রগতি করার ওপর প্রভাব ফেলেছে নাগরিক সমাজের স্থান সংকোচন। এখানে জিডিপি মন্থর হয়েছে। রপ্তানি আয় দ্রুত কমে গেছে। সরকারের আর্থিক বছরে বেসরকারি এবং সরকারি বিনিয়োগ হার কমেছে। এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশের টাকার মান সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছে। এর ফলে দেশের বর্তমান অর্থ ঘাটতির ওপর আরও চাপ বৃদ্ধি করেছে। উপরন্তু করোনা সংক্রমণের ফলে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স কমেছে। এতে আমদানি খাতে অর্থায়নে সংকট দেখা দিয়েছে। বিদেশিদের কাছে ঋণের অর্থ পরিশোধও কঠিন হয়েছে।

ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র্যে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন হয়েছে। টাকার মান পড়ে গেছে শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ। ২০২২ সালের নভেম্বরে বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৮ ভাগ। মুদ্রাস্ফীতি ক্রমশ বাড়ছেই। বিশেষ করে খাদ্য, সার এবং জ্বালানিতে তা বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২২ সালের আগস্টে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ। 


রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের  ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ইউএসএআইডি তার সক্ষমতা শক্তিশালী করতে চায় ইন্দো-প্যাসিফিক অংশীদার হিসেবে। একই সঙ্গে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব কমাতে চায়। সম্প্রতি বাংলাদেশের সর্বচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে উঠেছে চীন। একই সঙ্গে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের দ্রুততম উৎস হয়ে উঠেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের শতকরা ২৫ ভাগ কিনে নিয়েছে চীন। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে বাংলাদেশকে অবকাঠামো এবং অন্য প্রকল্পগুলোর জন্য ২৬০০ কোটি ডলার ঋণ  দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বাংলাদেশের অনুন্নত এবং দুর্বল শাসন ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে চীন এমন সব চুক্তি বাগিয়ে নিয়েছে, যা বাংলাদেশ সরকার বা এর জনগণের পক্ষে যায় না। তারা একই সঙ্গে দুর্নীতিপরায়ণ নেতাদের, সরকারের কর্মকর্তাদের কাজে লাগিয়েছে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তাদের পক্ষে যায় এবং অর্থনৈতিক এজেন্ডার সুবিধা পায় এমন ব্যবস্থা করেছে। স্পল্প মেয়াদে এর প্রভাব হবে বড়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির ওপর বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে যখন বেইজিংকে তার পাওনা পরিশোধের বিষয় আসবে।