দেশে আ’লীগের অধীনে আর কোন নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না: মির্জা ফখরুল 

ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিলে বিএনপি মহাসচিব

দেশে আ’লীগের অধীনে আর কোন নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না: মির্জা ফখরুল 
বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

প্রথম নিউজ, ঝিনাইদহঃ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগের অধীনে এ দেশে আর কোন নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়াও হবে না। এই ভোট ডাকাত ও মাফিয়া সরকারকে হটিয়ে নিরপেক্ষ সরকার কায়েম করা হবে। আর নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন গঠিত নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীন নির্বাচন হবে। 
তিনি বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল ঘরে ঘরে চাকরি দিবে, বিনা পয়সায় সার দিবে, আর দশ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে। টাকা ছাড়া ঘরে ঘরে কেও চাকরী পায়নি। তাও আ’লীগ না করলে কারো চাকরী হয়নি। দেশের মানুষ সর্বোচ্চ মুল্য দিয়ে এখন চাল কিনে খাচ্ছেন। কোন কৃষক সারও বিনা পয়সায় পয়নি। এ সরকার প্রতারণা ও ভাউতাবাজীর সরকার।
মির্জা ফখরুল ইসলাম শনিবার ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল উপলক্ষ্যে সদর উপজেলার ডাকবাংলা আব্দুর রউফ কলেজ মাঠে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। সম্মেলন চলাকালে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান লন্ডন থেকে দুপুর ১২.৩০ টায় ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন। 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করে মাফিয়া রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রিয় সম্পদ লুটপাট করেছে। তাই সীমাহীন লুটপাট ও চুরির কারণে তারা মাথা নিচু করে থাকে। তিনি বলেন এ সরকারের চোরদের তাই মাথা নিচু করেই ক্ষমতা ছাড়তে হবে। তারপরও তাদের রেহাই নেই। ভোট ডাকাতি, গণতন্ত্র হত্যা, বিপন্ন মানবাধিকার, মানুষ হত্যা, খুন ও গুমের কারণে তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, চরম দুঃশাসনে দেশবাসি যখন দিশেহারা তখন আলোকবর্তিকা হয়ে আমাদের মাঝে মুক্তির ঝান্ডা নিয়ে এসেছেন তারেক রহমান। তার নেতৃত্বে এই ফ্যাসিষ্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে সত্যিকার জনগনের প্রতিনিধিত্বমুলক সরকার কায়েম করা হবে। মিজা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, এ সরকার নির্বাচতি সরকার নয়। এরা আধিপত্যবাদ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে। তারা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করেছে। ভোট ও কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান আন্দোলন নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগরে অস্ত্রধারী গুন্ডারা ছাত্রদলের ছেলেদের উপর ঝাপিয়ে পড়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি, তারা নারীদের নির্যাতন করেছে। অনেক নারী আইসিউতে চিকিৎসাধীন। তারদের উপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগ তাদের ফ্যাসিষ্ট রুপ আবোরা প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন সন্ত্রাস ও পুলিশকে কাজে লাগিয়ে এই ভোট ডাকাতির সরকার খুলনা ও পটুয়াখালীতে বিএনপির উপর হামলা করেছে। 
বিএনপি মহাসচিব আগত নেতাকর্মী ও ডেটিগেটদের আশ্বস্ত করে বলেন, আওয়ামীলীগ আর পারবে না। এবার জনগন জেগে উঠেছে। জনতার উত্তাল ক্ষোভ শক্তিতে পরিণত হয়েছে। দেশ নায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে নেতাকর্মী ও দেশের মানুষ এখন উজ্জীবিত। তিনি বলেন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের যে মুক্তির পতাকা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান উত্তোলন করেছিলেন, তা এখন তারেক রহমানের হাতে।
বিএনপি চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা সাবেক হুইপ মসিউর রহমান বলেন, এই ফ্যাসিষ্ট সরকারের দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে হলে রক্ত দিতে হবে। ত্যাগ না করলে মুক্তি নেই। তিনি বলেন, বৃদ্ধ বয়সে আমার নামে ২৮টি গয়েবী মামলা। ১০ বছরের জেল নিয়ে আমি রাজনীতি করছি। জানি না এটাই আপনাদের সঙ্গে শেষ দেখা কিনা। তিনি বলেন, আমার মৃত্যুর খবর পেলে অন্তত সবাই দেখতে আসবেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক দল। তাই এই দলের নেতা নির্বাচতি হচ্ছে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে। তিনি বলেন, এ সরকার ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু ৩০ হাজার কোটি টাকা করে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি। তিনি বলেন, ঝিনাইদহের মানুষ রক্ষিবাহিনীর অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছে। তাই এই জেলার নেতাকর্মীদের যতক্ষন শ্বাস আছে, ততক্ষন স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বিপন্ন বাংলাদেশকে জাগিয়ে তুলতে আমাদের পাশে আছেন জননায়ক তারেক রহমান। কাজেই আমাদের ভয় নাই।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, গণতন্ত্র আসলে কি তা ঝিনাইদহের কাউন্সিল হওয়ার পর শেখ হাসিনা ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন শিক্ষা নিতে পারে। তিনি বলেন, এ সরকারের মুখে গনতন্ত্রের ছবক মানায় না। তারা বিশ্ব ভোটচোর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। অমিত আরো বলেন, অবিচার যখন আইন হয়, তখন প্রতিরোধ কর্তব্য হয়ে দাড়াই। 
কাউন্সিলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থাকাবস্থায় পুলিশের গুলিতে নিহত মহেশপুর উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের বিএনপি কর্মী ইন্তাজুলের মেয়ে সুমাইয়া খাতুন, নিহত পলাশের পিতা আরাপপুরের গোলাম মোস্তফা ও শহরের কলাবাগান পাড়ার যুবদল নেতা মির্জার মা তারেক রহমানের দেওয়া আর্থিক সহায়তা গ্রহন করেন। বিএনপি কর্মী ইন্তাজুলের মেয়ে সুমাইয়া খাতুন ও পলাশের পিতা গোলাম মোস্তফা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়ে বলেন, কি দোষ ছিল তাদের। দোষ একটাই তারা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার দল করতেন। শনিবার বিকালে ডাকবাংলা আব্দুর রউফ কলেজ অডিটোরিয়ামে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির কমিটি গঠন পক্রিয়া চলছিল।  
জেলা বিএনপির আহবায়ক এড এস এম মশিয়ূর রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব এড এম এ মজিদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি মসিউর রহমান, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খাঁন শিমুল, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির জেলা যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল মালেক, জেলা যুগ্ম আহবায়ক আক্তারুজ্জামান, নির্বাহী সদস্য আব্দুল ওহাব, নির্বাহী সদস্য মীর রবিউল ইসলাম লাবলু, সদর উপজেলা সভাপতি এড মুন্সি কামাল আজাদ পান্নু, মহেশপুর, পৌর সভাপতি আমিরুল ইসলাম চন্নু, মহেশপুর উপজেলা সভাপতি মেহেদী হাসান রনি, শৈলকূপা পৌর সভাপতি আবু তালেব, উপজেলা সভাপতি আবুল হোসেন, কোটচাঁদপুর পৌর সভাপতি সালাউদ্দিন বুলবুল সিডল, উপজেলা সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, হরিণাকুন্ডু পৌর সভাপতি জিন্নাতুল হক খাঁন ও উপজেলা সভাপতি আবুল হোসেন মাস্টার প্রমুখ। 

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom