দাম কমেনি ডিম-আলু-পেঁয়াজের, উল্টো পাইকারিতে বাড়তি দরের অভিযোগ
রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার মুদি ও সবজির দোকান এবং স্থানীয় বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে দেশে প্রথমবারের মতো পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের দাম বেঁধে দেয় সরকার। তবে তিন দিনেও বাজারে কার্যকর হয়নি সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম। নির্ধারিত দামে এসব পণ্য তো মিলছেই না, উল্টো পাইকারিতে এগুলোর দাম ২-৩ টাকা বাড়ানোর অভিযোগ খুচরা ব্যবসায়ীদের।
ক্রেতাদের অভিযোগ, এর আগেও চিনি ও সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তবে তা বাজারে কার্যকর হয়নি। সরকারের নজরদারিও ছিল না। এবারও যে বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকর হবে না, এমনটাই মনে করেন তারা।
রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার মুদি ও সবজির দোকান এবং স্থানীয় বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এসব এলাকায় খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯৫ টাকায়, যদিও সরকার নির্ধারিত দাম ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় এবং ১৩ টাকা বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ডিম। তবে প্রতিকেজি আলুর সরকার নির্ধারিত দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা।
মুসলিম বাজারের বি.বাড়িয়া ডিম ঘরের বিক্রয়কর্মী লিটন বলেন, ‘প্রতি ডজন ডিম ১৫০ টাকায় বিক্রি করছি। প্রতি পিস ডিম ১২ টাকা ৫০ পয়সা রাখছি, ৫০ পয়সা তো কারও হাতে নেই। তাই বলা যায়, প্রতি পিস ডিম ১৩ টাকা। আবার ২টা কিনলে ২৫ টাকা রাখছি। সরকার নির্ধারিত দামের সঙ্গে আমাদের খুব একটা পার্থক্য নেই।’
ডিম বাদে অন্য দুই পণ্যের ক্ষেত্রে দোকানি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা দুষছেন পাইকারদের। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই দুই কৃষিপণ্যের বেঁধে দেওয়া দামের বিষয়ে তারা জানলেও এই দাম কার্যকর করা সম্ভব না বলে মনে করেন। কারণ হিসেব বলছেন, বাড়তি দামেই পাইকারদের কাছ থেকে তাদের পণ্য কিনতে হচ্ছে।
মামুন নামের এক মুদি দোকানি তার দোকানে ৩টি পাত্রে আকারভেদে সাজিয়ে রেখেছেন আলু। বড় আকারের আলু ৫০ টাকা, এর চেয়ে একটু ছোট ৪৮ টাকা এবং ছোট আলু ৪৬ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন তিনি। একই দোকানে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে আলুর দাম বেশি চাওয়ায় দোকানি মামুনের কাছে এর কারণ জানতে চান দেলোয়ার হোসেন নামের এক ক্রেতা। এসময় মামুন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দাম ঘোষণার পর পাল্লায় ২ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) ২২০-২৪০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আগে যা ছিল ২১৮-২৩৫ টাকা।’
জবাব শুনে দেলোয়ার বলেন, ‘এটাই চলছে। খুচরা পাইকারকে দোষ দেয়, আর পাইকার খুচরাকে। মাঝখান দিয়ে ক্রেতার পকেট কাটা যায়। নজরদারি আর ভ্রাম্যমাণ আদালত ছাড়া নির্ধারিত দামে এসব পণ্য পাওয়া সম্ভব না। চিনি, তেলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা দেখেছি।’
সরদার ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সরদার আলী আজম বলেন, ‘পেঁয়াজের কেজি ৬৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কীভাবে এটা করা হলো- আমার মাথায় আসে না। কারণ পাইকারিতে আমাদের কেনা ৭৫ টাকার ওপরে।’
গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৩ পণ্যের যে দাম ঘোষণা করেছে, তা কৃষি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। কৃষি বিপণন আইন, ২০১৮–এর ক্ষমতাবলে দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এতদিন আমরা কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেইনি। এই প্রথম তা করে দিলাম। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই তা করা হয়েছে। আশা করছি এটা বাস্তবায়ন করতে পারবো।’