দুদক আইন অনুসারে কাজ করে, ব্যক্তি পরিচয় দেখে না
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন এবং বিধি অনুসারে কাজ করে, এখানে ব্যক্তি পরিচয় দেখার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এদিন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সকাল ৯টা ৩৭ মিনিট থেকে বেলা ১০টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত প্রায় সোয়া এক ঘণ্টাব্যাপী ড. ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। সংস্থাটির পরিচালক বেনজির আহমেদের নেতৃত্ব একটি টিম এ জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উপস্থিত সাংবাদিকরা প্রশ্ন কলেও তিনি আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেননি। তার আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন বক্তব্য দেন।
দুদক সচিব বলেন, যখন কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে তার অবস্থান তিনি যেন পরিষ্কার করতে পারেন, সেজন্য তাকে ডাকা হয়। ইউনূসকে নিয়ে আপনারা কোনো চাপে আছেন কি না এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন এবং বিধি অনুসারে কাজ করে। এখানে ব্যক্তি পরিচয় দেখার সুযোগ নেই।
আইনজীবীর বক্তব্য অনুসারে এটি শ্রম আদালতের ফৌজদারি অংশ, দুদক কী কারো ইশারায় কাজ করছে? প্রশ্নের উত্তরে সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আমি একটু আগে বললাম, কলকারখানা প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর প্রাথমিকভাবে এই অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে, এটি আমাদের তফসিলভুক্ত। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এই বিষয়ে বাড়তি কমেন্ট করার সুযোগ নেই।
অভিযোগ ভিত্তিহীন কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব বলেন, অভিযোগটি দুদক করেনি। গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারীদের পাওনার যে বিষয়টি ছিল, তারা যেটি পাননি সেই মর্মে তারা অভিযোগ করেছেন। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কাছে আপত্তি করে অভিযোগ করেন। কলকারখানা পরিদর্শন পরিদপ্তর সত্যতা পাওয়ার পর এটি দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে প্রেরণ করে। দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় তদন্ত চলছে এখানে হয়রানির কোনো সুযোগ নেই। আইনগতভাবে এখানে হয়রানির সুযোগ নেই। প্রাথমিকভাবে কলকারখানা প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর এই অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগটা এখানে এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন পরবর্তী অনুসন্ধান শেষে মামলাটি হয়েছে।
ইউনূসের দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে মাহবুব হোসেন বলেন, বিষয়টিতে যেন ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পান সেজন্য আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তা চিঠি দিয়ে তাদেরকে তলব করেছেন। ওনারা ওনাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি ওনাদের মতো করে বলেন। আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তা বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করবেন। শেষ পর্যায়ে প্রতিবেদন দেবেন। প্রতিবেদন পাওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। মামলা হওয়ার পর একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা কার্যবিধি সম্পন্ন করেন। তদন্ত শেষ না হওয়ার আগে এটি আমাদের কোনোভাবেই জানার সুযোগ নেই।
যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তারা জামিনে আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যতদূর জানি একজন আদালতে গিয়ে জামিন পেয়েছেন। অন্যরা জামিনে আছেন কি নেই এই মুহূর্তে হালনাগাদ তথ্যটি আমার কাছে নেই।
গ্রেপ্তারের বিষয়ে সচিব বলেন, দুদকে মামলা হওয়ার পরে গ্রেপ্তার কখন কীভাবে হবে, সেটা আইনে আছে। যার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তিনি যদি সাক্ষী প্রমাণ বা আলামত নষ্ট করার উদ্যোগ নিয়ে থাকেন এবং দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাহলে তদন্তকারী কর্মকর্তা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বা তার সহযোগীদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেবেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা যদি মনে করেন আদালতের মাধ্যমে বিদেশ যাত্রার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকেন, প্রয়োজন হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। গত ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সংস্থার উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এস. এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী। এছাড়া অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।