দুদকের মামলায় ২২ দিন কারাগারে কর্মচারী, অফিস জানে, ‘অনুপস্থিত’
ঝিকরগাছা উপজেলা শিক্ষা অফিস
প্রথম নিউজ, যশোর: যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক আরজু খাতুনের গোপনে ২২ দিন কারাবাসের খবর ফাঁস হয়েছে। জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চার্জশিট দেওয়ায় তাকে কারাগারে যেতে হয়। কিন্তু অফিস এই কারাবাসের তথ্য জানে না। হাজতবাসের তথ্য গোপন করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি।
অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হলেও কারাগারে অবস্থানের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি বহাল তবিয়তেই আছেন। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন পাঁচ স্কুলের প্রধান শিক্ষক। এরপরই বিষয়টি জানাজানি হয়। তবে জেলা শিক্ষা অফিসার বলছেন, অনুপস্থিত থাকায় বিভাগীয় মামলা হয়েছে। তথ্য গোপন করে কারাবাসের বিষয়টি কিছুদিন আগে তিনি জেনেছেন। পরে অধিদপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ঝিকরগাছা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক আরজু খাতুনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বর্হিভূত ৫২ লাখ ৬৭ হাজার ৭৪৯ টাকার সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপন করার অভিযোগে ২০২২ সালে ৫ এপ্রিল যশোরের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। এরপর ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন আরজু। তখন আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। ২২ দিন কারাবাস শেষে গত ২২ জানুয়ারি জামিন লাভ করেন।
তিনি ২২ দিন হাজতবাস করলেও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কিংবা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করেননি। জানুয়ারি মাসের হাজিরা খাতায় একদিনের ছুটিসহ ২২ দিন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬ এর (২) ও ২৭ এর (১) ধারায় চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন।
এ বিষয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক আরজু খাতুন বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা মামলার দুটি ধারা বাতিল হয়েছে। মামলাও খারিজ হয়ে যাবে। তথ্য গোপন করে কারাবাস প্রসঙ্গে আরজু খাতুন বলেন, আমি যেখানেই থাকি, সেটি কোনো বিষয় নয়। আমার বিরুদ্ধে কোনো ওয়ারেন্ট হয়নি। এটা ফৌজদারি অপরাধের মধ্যে পড়ে না। আর কারাবাসের বিষয়টি আমার ডিপার্টমেন্ট দেখবে।
জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের উপ-পরিচালক আল-আমিন বলেন, আরজু খাতুনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬ এর (২) ও ২৭ এর (১) ধারায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুস সালাম বলেন, আরজু খাতুনের অনুপস্থিতির বিষয়ে বিভাগীয় মামলা চলমান আছে। তথ্য গোপন করে ২২ দিন কারাবাসের বিষয়টি কিছুদিন আগে আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি অধিদপ্তরও অবগত হয়েছে। আমরা আদালত ও দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দিয়ে তার মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চেয়েছি। ওই চিঠির জবাব পেলে সেটি মহাপরিচালকের দপ্তরে পাঠিয়ে দেবো। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে মহাপরিচালকই ব্যবস্থা নেবেন।