ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যাংক খাতে সংস্কার শেষ হবে: অর্থ উপদেষ্টা

ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যাংক খাতে সংস্কার শেষ হবে: অর্থ উপদেষ্টা

প্রথম নিউজ, অনলাইন: ব্যাংক খাতের বড় সংস্কারগুলো আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যাংক খাতে কিছু সংস্কার হবে। আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এর জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বুধবার (২ জুলাই) রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে ‘এসএমই ফাউন্ডেশন-ইআরএফ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুশফিকুর রহমান। ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও ইআরএফের সভাপতি দৌলত আক্তার মালা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল ভিত্তি এখনো ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত। এ খাতের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থানও হয়। সামনের দিনে এই খাতের সম্ভাবনাও অনেক বেশি। সে জন্য এই খাতের অর্থায়ন সমস্যা দূরীকরণ, প্রযুক্তিগত সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা ও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি করা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে অনেক বয়ান আছে। তবে এখনো মূল ভিত্তি এসএমই। কর্মসংস্থানের বেলায়ও এসএমই এগিয়ে। তবে জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ২৬ শতাংশ, যা পর্যাপ্ত না। অন্যান্য অনেক দেশে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। বলা হয়, উন্নত দেশের শিল্প অনেক বড়, আসলে কিন্তু তা নয়। জাপানের এসএমই বিখ্যাত এবং অনেক বড়। রোলেক্স ঘড়ি তৈরি হয় এসএমইর মাধ্যমে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এসএমইকে এগিয়ে নিতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। হাতুড়ি-বাটালের দিন শেষ হয়ে গেছে। যদিও কিছু কিছু এসএমএস প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তবে এর ব্যবহার আর বাড়াতে হবে।
সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এসএমই খাতের সম্ভাবনা অনেক। এ খাতের প্রধান অবদান—এখানে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ বেশি। নারীর স্বাধীনতা, অংশগ্রহণ বাড়ানো মানে শুধু কথা বলা নয়, নারীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা। সেটি এসএমই খাতের মাধ্যমে হচ্ছে।
এসএমই খাতের অর্থায়ন সমস্যা স্বীকার করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এ খাতের অর্থায়নে বড় সমস্যা রয়েছে। ব্যাংকাররা এসএমই খাত নিয়ে ভাবেন না। তারা বড় ঋণ দিতে চান। ১০ কোটি টাকার ঋণ দিয়ে দিলেন। আদায় হলো কি হলো না, সেটি তাদের ব্যাপার না। ব্যাংকার এবং পলিসি মেকারদের এ নিয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হবে।
তিনি বলেন, এসএমই নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিফাইন্যান্স স্কিম আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে এই স্কিম বাড়াতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় সে ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। জ্বালানিতে ৬০-৬২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে এসএমইতে কিছু ভর্তুকি দিলে অসুবিধা কী?
অর্থ উপদেষ্টা এসএমই খাতের ডিজিটাল তথ্যভান্ডার গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। সে জন্য প্রয়োজন হলে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
এসএমই ফাউন্ডেশনের অর্থায়ন করার সামর্থ্য বাড়ানোর জন্য তিনি পিকেএসএফের মতো উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ভালোভাবে প্রজেক্ট নেন, কর্মকর্তা ঠিক করেন। পিকেএসএফকে বিশ্বব্যাংক, আইএফএডি সবাই অর্থায়ন করে। পিকেএসএফ এখন বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান, সব দাতা সংস্থা এগিয়ে আসছে। এ জন্য আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা রাখতে হবে। কোনো ধরনের আপস করা যাবে না।
তিনি বলেন, এসএমই খাতকে দেশি ও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করে দিতে হবে। কারণ আমাদের রপ্তানিতে বহুমুখীকরণ দরকার। শুধু নির্ভর করে আর চলবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে আর্থিক খাতে কিছু সংস্কার করা হবে। রাজনৈতিক সংস্কার কী হবে, সেটা জানি না। ব্যাংক খাতে কিছু সংস্কার হবে। আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। সে জন্য বাজেটেও বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আমরা শুরু করে যাব। আশা করি, পরের সরকার এসে তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে।