ডেঙ্গু কেড়ে নিলো ব্যাংক কর্মকর্তা শারমিনের প্রাণ

শারমিন দৈনিক সমকালের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক জাহেদুল আলম রুবেলের সহধর্মিণী।

ডেঙ্গু কেড়ে নিলো ব্যাংক কর্মকর্তা শারমিনের প্রাণ

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ফারজানা শারমিন তপি (৪৩)। প্রাইম ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ অফিসার। কর্মরত ছিলেন রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড শাখায়। গত সোমবার জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন শারমিন। পরীক্ষায় ধরা পড়ে ডেঙ্গু। দ্রুত নেয়া হয় হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হলে নেয়া হয় লাইফ সাপোর্টে।  গতকাল শুক্রবার ভোরে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান তিনি (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। শারমিনের মরদেহ নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার জারিয়ার গ্রামের বাড়িতে সমাহিত করা হয়।  শারমিন দৈনিক সমকালের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক জাহেদুল আলম রুবেলের সহধর্মিণী।

হঠাৎ এক ঝড়ে এলোমেলো হয়ে গেছে তাদের ১২ বছরের সাজানো সংসার। স্ত্রীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন রুবেল। মেয়ে ফাতিহা রিদ্বীনের বয়স ১১ ও ছেলে আইয়ান তিহানের বয়স চার।  মাকে হারিয়ে প্রতিনিয়ত কাঁদছে দুই অবুঝ শিশু সন্তান। রুবেল জানিয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সময় শারমিনের সঙ্গে পরিচয়। সেই থেকে দু’জনের একসঙ্গে পথচলা।  ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে ছিল ছোট্ট সুখের ঘর। বিন্দু বিন্দু ঘামে ও পরিশ্রমে কেবল স্বপ্নের কুঁড়ি ফুটতে শুরু করেছে। 

তিনি আরও বলেন, আর্থ্রাইটিসের সমস্যা থাকায় ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার আগে শরীর ব্যথার কারণে তিন দিন ঘুমাতে পারেনি শারমিন। এমন অবস্থায় গত সোমবার হালকা জ্বর দেখা দেয়। জ্বর নিয়ে অফিসও করে। মঙ্গলবার সকালে রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু পজিটিভ আসে। তবে অন্যান্য জটিলতা না থাকায় বাসাতেই ছিল। সন্ধ্যায় হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। জটিলতা বাড়ায় সঙ্গে সঙ্গে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র-আইসিইউতে নেওয়া হয়। তাঁর প্লাটিলেট নেমে যায় ১০ হাজারে। চিকিৎসক চার ব্যাগ প্লাজমা দেওয়ার পরামর্শ দেন। তবে বিভিন্ন সমস্যা থাকায় চারজনের প্লাজমা নেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেন তারা। পরে একজনের প্লাজমা নেওয়া হয়। তবে প্লাজমা দিলেও তাঁর শরীরে প্লাটিলেট বাড়াতে পারেনি। বুধবার দুপুরে ফারজানাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

চিকিৎসকরা জানান, উপসর্গ ছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন শারমিন। জ্বর চলে যাওয়ার পর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। তাই রক্তচাপ ও রক্তে অণুচক্রিকার পরিমাণ অতি দ্রুত কমে যায়। পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হয়ে পড়ে, রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। অন্য অঙ্গগুলো আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় হতে থাকে। পেট ফুলে যায়। ফুসফুসে পানি ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। তারা এটিকে ডেঙ্গুর শক সিনড্রোম বলে জানান। রুবেল বলেন, ছোট এক মশা আমার দুই সন্তানকে এতিম করে দিল। অনেক কষ্ট করে সংসারটা গুছিয়ে এনেছিলাম। ছোট্ট দুই সন্তানকে নিয়ে আমি কীভাবে থাকব? আমার সব শেষ হয়ে গেল। সন্তানদের আমি কী সান্ত্বনা দেব?