ঠাকুরগাঁও কারাগারে তিন গুণ বন্দি, এক রুমে থাকছেন ৭০ জন

কারাগা‌রে ১৬৮ জন পুরুষ হাজতি ও তিনজন নারী হাজতি থাকার ধারণ ক্ষমতা থাক‌লেও বর্তমানে এর প্রায় তিন গুণ বন্দি রয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও কারাগারে তিন গুণ বন্দি, এক রুমে থাকছেন ৭০ জন

প্রথম নিউজ, ঠাকুরগাঁও: বিএনপি-জামায়াতের চলমান আন্দোলনকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ধরপাকড়ে কারাগারে চাপ বেড়েছে বন্দিদের। ধারণ ক্ষমতার প্রায় তিন গুণ বন্দি রয়েছে ঠাকুরগাঁও জেলা কারাগারে। জেলা কারাগার হি‌সে‌বে প্রতি‌ষ্ঠিত হওয়ার ক‌য়েক ক‌য়েক যুগ পরও উপ-কারাগা‌র হি‌সে‌বেই র‌য়ে‌ গে‌ছে এটি। কারাগা‌রে ১৬৮ জন পুরুষ হাজতি ও তিনজন নারী হাজতি থাকার ধারণ ক্ষমতা থাক‌লেও বর্তমানে এর প্রায় তিন গুণ বন্দি রয়েছেন। এতে গাদাগা‌দি ক‌রে থাক‌তে হ‌চ্ছে ব‌ন্দি‌দের। কারা‌বি‌ধি অনুযায়ী ৬‌ ফুটের এক‌টি কক্ষ প্রতি‌টি ব‌ন্দি‌র জন‌্য বরাদ্দ থাক‌লেও সেখানে থাক‌ছেন ৮-৯ জন। 

জানা যায়, ১৩০ বছরের পুরোনো এই কারাগারটি‌ আধু‌নিকায়ন কর‌তে ২০১৮ সালের শুরুর দিকে সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চব্বিশ টিউবওয়েল এলাকায় ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর মহাসড়‌কের পা‌শে ১৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। অধিগ্রহ‌ণের পাঁচ বছর পে‌রি‌য়ে গে‌লেও এখনো শুরু হয়‌নি এর নির্মাণ কাজ। শুধুমাত্র অবকাঠামোগত কারণে ঠাকুরগাঁওয়ের কারাগারে বন্দিরা হস্তশিল্প, কারিগরি প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। 

কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ১৮৯২ সালে  শহ‌রের স্বর্ণপ‌ট্টি এলাকার সাম‌নে ২ দশমিক ৮৩ একর জমিতে স্থাপন করা হয় উপ-কারাগার । যার মূল ওয়ালের ভেতরে দশমিক ৮২ একর ও বাইরে ২ দশমিক শূন্য ১ একর জমি রয়েছে। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৪ সালে জেলা কারাগার হিসেবে এটির যাত্রা শুরু হয়। কারাগারটিতে ১৬৮ পুরুষ হাজতি ও তিনজন নারী হাজতি থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। থাকার জন্য রয়েছে একটি মাত্র ভবন। নারী হাজতিদের জন্য রয়েছে টিনশেডের একটি রুম। ১৬৮ জন পুরুষ হাজতি ধারণ ক্ষমতার ভবনে এখন থাকছেন ৪২০ জন। তিনজন নারী হাজতির জন্য টিনশেডের সেই রুমে থাকছেন তিন শিশুসহ ৯ জন নারী । এছাড়া জেলায় দুর্ধর্ষ জঙ্গি কিংবা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জন্য আলাদা কোনো সেল নেই। 
 
সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত আবদুল মোত্তালেব বলেন, রাতে এক রুমে ৬০-৭০ জনকে থাকতে হয়। ৬০-৭০ জনের জন্য মাত্র একটি টয়লেট। এক রুমে আমাদের প্রায় ১২-১৩ ঘণ্টা থাকতে হয়। এতে রাতে তেমন ঘুম হয় না। আমরা খুব গাদাগাদি করে ছিলাম।  মুক্তি পাওয়া আরেক আসামি মুহাম্মদ সাদিকুল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলা কারাগারে এক রুমে প্রায় ৭০-৮০ জনকে থাকতে হয়। এতে একজন বন্দি দেড় ফুট জায়গা পায় ঘুমানোর জন্য। রুমের মধ্যে পা ফেলানোর মতো জায়গা থাকে না। একটি বাথরুম ব্যবহার করতে হয় সবাইকে। বেশির ভাগ সময় দেখা যায় বাথরুমে পানি থাকে না। গোসলের জন্য যে পানি দেওয়া হয় সেটাও অল্প সময় থাকে। 

ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট জাহিদ ইকবাল বলেন, কারাগারকে বলা হয়ে থাকে সংশোধনাগার। এখানে যদি একটা মানুষ ভালো করে শুতে না পারে, ঘুমাতে না পারে স্বাভাবিকভাবে যেভাবে থাকার দরকার ছিল সেভাবে থাকতে না পারে, তাহলে তো সে মানসিক রোগী হয়ে যাবে। আমি বিভিন্ন ক্লাইন্টের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা বলেছে যে আমাদের একটা রুমে প্রায় ৬০-৭০ জন করে থাকতে হচ্ছে। এতে আমাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে যে নতুন কারাগারটি করার কথা বলা হচ্ছে এটি যদি দ্রুত করা হয় তাহলে কারাবন্দিদের জন্য সুবিধা হবে। একইভাবে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তাদেরও সুবিধা হবে ।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান বলেন, অর্থ বরাদ্দের জন্য প্রাক্কলন প্রস্তুত করে বার বার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও সেটি পাস হয়নি। আবারও আমরা প্রাক্কলন করে পাঠাব। তবে ইতোমধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে নতুন কারাগারের জন্য  জমি অধিগ্রহণ করেছি। ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবন নির্মাণকাজ শুরু হবে। 

ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে অল্প সময়ের মধ্যে নতুন কারাগার ভবন নির্মাণ হবে।