“জনগণকে ক্যান্সারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তামাক কোম্পানি”
প্রথম নিউজ, ঢাকা: সরকারের প্রচেষ্টায় জনগণের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেলেও এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ক্যান্সার ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগীর সংখ্যা। এর পিছনে রয়েছে তামাক কোম্পানির কালো হাত। গবেষণায় ইতিমধ্যে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ সিগারেট, জর্দা, গুলসহ সকল প্রকার তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার। ধোঁয়াবিহীন এবং ধোঁয়াযুক্ত উভয় তামাকজাত দ্রব্যই ক্যান্সারের জন্য দায়ি। তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকার দেশে আইন ও সহায়ক নীতি প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত আইন লংঘন করে তামাক ব্যবহারে জনগনকে উৎসাহিত করছে। এছাড়াও কোম্পানিগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণে নতুন পলিসি তৈরির ক্ষেত্রেও নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। ফলে তামাকের ব্যবহার কাঙ্ক্ষিত হারে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় অনিয়ন্ত্রিত হারে ক্যান্সারের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে তামাক সেবনের ভয়াবহতাকে গুরুত্ব দিয়ে করে আজ ৬ ফেব্র্রুয়ারি (মঙ্গলবার)বিকেল ৩.০০ টায় বইমেলা প্রাঙ্গনে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সহযোগী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে একটি অবস্থান কর্মসূচি ও লিফলেট বিতরণ ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ এর নেতৃত্বে উক্ত ক্যাম্পেইনে দিশারী এর নির্বাহী পরিচালক শামীমা আক্তার, কান্দিভিটা সমউন্নয়ন মহিলা সমিতির (কসমস) নির্বাহী পরিচালক মেহনাজ পারভীন মালা, ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (আইডিএফ) এর নির্বাহী পরিচালক শফিউল আযম, ডাসের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মোয়াজ্জেম হোসেন, ডাসের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মোয়াজ্জেম হোসেন টিপু, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের হেড অব প্রোগ্রাম (স্বাস্থ্য অধিকার বিভাগ) সৈয়দা অনন্যা রহমান, এইড ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার আবু নাসের অনিক, আইডিএফ এর প্রোগ্রাম অফিসার এনায়েত রাজীব, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটির পার্টনারশীপ এন্ড নেটওয়াকিং ম্যানেজার আলী আজমান, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা সামিউল হাসান সজীব, মানসের সিনিয়র প্রজেক্ট এন্ড কমিউনিকেশন অফিসার মোঃ আবু রায়হান, টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ (টিসিআরসি) এর প্রকল্প কর্মকর্তা জুলহাস আহমেদ, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্য, টিসিআরসি এর প্রকল্প কর্মকর্তা বিভূতী ভূষণ মাহাতো, বিএনটিটিপি এর প্রকল্প কর্মকর্তা ইব্রাহীম খলিল, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের নেটওয়ার্ক কর্মকর্তা আজিম খান, বিএনটিটিপি এর গবেষণা সহযোগী ইশরাত জাহান ঐশী, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা নাজমুন নাহার, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের সহকারী লজিস্টিক কর্মকর্তা মো: শাওন মিয়াসহ তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত অন্যান্য সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন প্রত্যাশিত ফল অর্জনে যুগের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আইন ও নীতিগুলোকে যুগোপযোগী করা প্রয়োজন হয়ে পড়লেও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতিসহ আইন প্রণয়ন, আইন বাস্তবায়ন, সারচার্জ পলিসি প্রণয়ন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান গাইডলাইন প্রণয়নসহ নানা ক্ষেত্রে তামাক কোম্পানি অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করছে। গবেষণায় দেখা যায় ৯০-৯৫ শতাংশ ফুসফুস ক্যান্সার, ৮০-৯০ শতাংশ মুখগহ্বর ক্যান্সারসহ মোট ক্যান্সারের ৫০ ভাগের জন্য দায়ি তামাক । তামাক এবং বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়ায় উপস্থিত ৭০০০ এর বেশী ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে ৭০টি মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্যান্সার সৃষ্টিতে দায়ি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়া রোগীদের সর্বোচ্চসংখ্যক (২১%) হলেন ক্যান্সারের রোগী,এবং ১৮ শতাংশ যাচ্ছেন হৃদরোগের চিকিৎসা নিতে। যার পিছনে তামাকের ব্যবহারই প্রধান কারণ হিসেবে প্রমাণিত। উল্লেখ্য প্রতি বছর ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে বিদেশগামী রোগীদের মোট ব্যয় হয় ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
বক্তারা আরও বলেন, তামাকের বহুমাত্রিক ক্ষতি থেকে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় এবং তাদের আগ্রাসী প্রচার প্রচারণার কবল থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষায় আইনটি দ্রুত সংশোধিত হওয়া প্রয়োজন। বক্তারা অনতিবিলম্বে তামাক কোম্পানি থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহারের পাশাপাশি কোম্পানির হস্তক্ষেপ প্রতিহত করার লক্ষ্যে দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি সংশোধন করার আহবান জানানো হয়। সকল ধরনের রাষ্ট্রীয় পুরুস্কারের তালিকা থেকে তামাক কোম্পানির নাম বাদ দেওয়াসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে টাস্কফোর্স কমিটির সভা নিয়মিত এবং সিদ্ধান্তসমুহ ফলোআপ করা এবং তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত সংগঠনগুলোকে সরকারের মনিটরিং কার্যক্রমের সাথে যুক্ত করার বিষয়ে দাবি জানানো হয়। উল্লেখ্য প্রতি বছরের মতো এবছরও বইমেলা প্রাঙ্গণ শতভাগ ধূমপান ও পলিথিনমুক্ত করায় বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষকে ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রেস বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট।