চলমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে বিরাজমান বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে সংগঠনটি।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ চাপে বহুমুখী সংকটে পড়েছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা একান্ত জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে সব ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ড পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে বিরাজমান বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে সংগঠনটি। এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা, ডলার সংকট, মূল্যস্ফীতি, বিলাসী পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংক ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, এলসিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা জাতীয় অর্থনীতিকে শঙ্কার দিকে ঠেলে দিচ্ছে উলেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি দেশের সরবরাহ ব্যবস্থাকে (সাপ্লাই চেইন) ভীষণভাবে বিঘিœত করছে। যার প্রভাব পণ্যের উৎপাদন, বাজার মূল্য এবং রপ্তানি ও সেবা খাতের ওপরও পড়ছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে সব ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ড পরিহারের আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিক-কর্মচারীদের চাহিদা অনুযায়ী মজুরি কমিশন গঠন এবং শ্রমিক-মালিক উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে মজুরি পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে- যা অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ। তা সত্ত্বেও তৈরি পোশাক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। প্রকৃত শ্রমিকরা কোনোভাবেই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হতে পারে না বলে মনে করেন তিনি। পাশাপাশি ডলার সংকট সমাধান এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কার্যকরী ভূমিকা পালন এবং শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বর্তমান সহিংস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সারা দেশের সব চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশনকে সঙ্গে নিয়ে ব্যবসায়ী সংহতি সমাবেশ আয়োজনের পরামর্শ দেন।
এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম অর্থনীতির এই সংকটের মুহূর্তে রাজনৈতিক সহিংস কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে বিদ্যমান সহিংস কর্মসূচির বিরুদ্ধে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিদের বিতর্কিত মন্তব্য থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানান তিনি।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআর, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয় আরও জোরদার করতে এফবিসিসিআইকে কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।
এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ডলারের ওপর চাপ কমাতে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের আরও সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রয়োজনে আগামী ৬ মাস থেকে এক বছর অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানির হার আরও কমিয়ে আনতে হবে বলে মত দেন তিনি। অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কাটছাঁটের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তৈরি পোশাক খাতে সৃষ্ট সহিংস ঘটনায় বহিরাগতরা জড়িত উলেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, প্রকৃত শ্রমিকরা কখনো নিজ কারখানায় আগুন দিতে পারে না। উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৈরি পোশাক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, নাসিবের সভাপতি মির্জা নুরুল গণি শোভন, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ প্রমুখ।