ক্ষমতা ছাড়তেই হবে, কোন ফন্দি-ফিকির, কূট কৌশলে আর কাজ হবে না: রিজভী
প্রথম নিউজ , ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহল কবির রিজভী বলেছেন,গত ১৫ বছর ধরে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে থাকা নিশিরাতের সরকারের এখন ত্রিশঙ্কু অবস্থা। প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের নিশিরাতে ভোট ডাকাতির নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে রাখতে পারলেও এবার আর সম্ভব হচ্ছে না, এটা আওয়ামী লীগ প্রধান ও দলের সাধারণ সম্পাদক নিজেরাই স্বীকার করে নিয়েছেন। সারাদেশে জনগণের দূর্বার আন্দোলন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহবানের কারণে শেখ হাসিনা কোন উপায় না দেখে এখন আবোল-তাবোল বলতে শুরু করেছেন। কোন ফন্দি-ফিকির, কূট কৌশলে আর কাজ হচ্ছে না। আজ নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, শেখ হাসিনা টের পাচ্ছেন যে, কখনো ভোট ডাকাতি কখনো বিনা ভোটে আবার কখনো রাতের অন্ধকারে জনগণের ভোটাধিকার লুট করে ক্ষমতায় থাকার দিন শেষ। এখন চরম আতংক বোধ করছে সরকার। সেজন্য বেপরোয়া নতুন ষড়যন্ত্রে মেতেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর অসংলগ্ন কথাবার্তা, হুমকি এবং ২০১৮ এর নির্বাচনের প্রাক্কালে গায়েবী মামলা আর গ্রেফতার এর হিড়িকের সুষ্পষ্ট লক্ষণ আবারও এখন ফুটে উঠছে।
সবকিছু ধ্বংস করে ক্ষমতায় থাকতে চান শেখ হাসনিা: রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম সফর করে এসে রীতিমতো প্রলাপ বকছেন। তাতে মনে হয় গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছ থেকে তাঁর দুঃশাসনের পক্ষে স্বীকৃতি পাননি। শেখ হাসিনা গত কয়েকদিন লাগাতার অজান্তেই তাঁর আসন্ন পতনের আশঙ্কা করছেন। শেখ হাসিনা নিজেই বলছেন। দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র হচ্ছে, কোন একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তাঁকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না বলে তিনি বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন “আমি বলে দিয়েছি, যে দেশ স্যাংশন দেবে তাদের কাছ থেকে আমি কিচ্ছু কিনবো না।” প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর দেশে রফতানী খাতের কি অবস্থা হবে তা সহজেই অনুমেয়। তিনি সবকিছু ধ্বংস করে ক্ষমতায় থাকতে চান। তাঁর এই সমস্ত বক্তব্য পতনের সাইরেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রতিটি গণতন্ত্রকামী দেশ আমাদের দেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়েছে। ঐ নির্বাচনে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে সে দল সরকার গঠন করবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শুনলেই নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রীর গলা শুকিয়ে যায়। আতংকে ঘুম হারাম হয়ে যায়। কারণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এখন তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রু। এ কারণে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে শেখ হাসিনা এবং তাঁর মন্ত্রীদের কথাবার্তা অসংলগ্ন ও বেসামাল। তবে এখন সরকারের দিবাস্বপ্ন দেখে লাভ হবে না। তাদের সামনে পরিত্রানের সোজাসাপ্টা একটাই পথ এবং তা হলো পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর।
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উর্ধগতি আর অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেশের অনেক মানুষ বর্তমানে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। ডলারের অভাবে অনেক ব্যবসায়ী এলসি খুলতে পারছেন না। ডলারের অভাবে আমদানি রপ্তানিতে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ডলার সংকটে অনেক শিক্ষার্থীর বিদেশ পড়তে যাওয়াও বিঘিœত হচ্ছে এমনকি হজ¦ গমনেচ্ছুদেরকেও ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। অথচ এমন পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা বিশাল লাটবহর নিয়ে অকারণে কয়েকটি দেশ সফর করে এসেছেন। প্রতিটি দেশ সফর শেষে সফরের ফলাফল নিয়ে শেখ হাসিনাকে নির্লজ্জ মিথ্যচারের আশ্রয় নিতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য সফরের পর সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষ্য আর শেখ হাসিনার ভাষ্য সম্পূর্ণ বিপরীত। বর্তমান সংকটের কারণ রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির বেপরোয়া লুটপাট, মহাদুর্নীতির মহাধুমধাম এবং ক্ষমতাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অর্থপাচার। এই সমস্ত লুটসহ নানা অনাচারের জন্য যারা দায়ী তাদের বিষয়ে মন্ত্রীদের মুখ থেকেই কথা বেরিয়ে আসছে। ওবায়দুল কাদের সাহেব যতই ধমক দিয়ে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করুন না কেন, আপনাদের অপকর্ম আপনারা শত চেষ্টা করলেও ঢাকতে পারবেন না। কারণ আপনার লোকরাই সেগুলো ফাঁস করছে।
আমরা মনে করি, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে শেখ হাসিনা খেই হারিয়ে ফেলেছেন। তাই শেখ হাসিনার কাছে গণতন্ত্র, মানুষের ভোটের অধিকার আর নিরাপদ নয়। দেশের স্বার্থও নিরাপদ নয়। তাই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান ইতোমধ্যেই ‘টেইক ব্যাক বাংলাদেশ’ আন্দোলনের ডাক দিয়ে বলেছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আর এবারের যুদ্ধ দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতার রাখার জন্য।
মাফিয়া সরকারের পতনের দিনগননা যে শুরু হয়েছে :বিএনপি রিজভী বলেন, মাফিয়া সরকারের পতনের পতনের দিনগননা যে শুরু হয়েছে তার আরেকটি প্রমান হলো এই সরকারের মন্ত্রী এমপিরাও এখন সত্য কথা ফাঁস করতে শুরু করেছে। সরকারের লুটপাট সিন্ডিকেট, গুম, খুন, দুর্নীতি দুঃশাসনের কথা জনসম্মুখে ফাঁস করে মাফ চাচ্ছেন কোন কোন মন্ত্রী।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বৃহস্পতিবার বলেছেন, নিত্যপণ্যের দামের কারণে বাজারে গিয়ে অনেককে কাঁদতে দেখেছেন তিনি৷ কারণ মানুষের পকেটে টাকা নেই৷ সিন্ডিকেটের কারণে সবকিছুরই দাম বেড়েছে। এই মন্ত্রী মাফিয়া সরকারের সিন্ডিকেটের নাম বলতেও ভয় পান। তিনি বলেছেন, মন্ত্রীদের ভেতর একটা সিন্ডিকেট আছে। ‘খামাখা নামটাম জিজ্ঞাসা করে আমাকে ভেজালে ফেলবেন না। সব কথা বলতে গেলে দেখবেন আমার লাশটা রাস্তায় পড়ে আছে। পণ্যমূল্য সামাল দেওয়া সম্পর্কে বললেন, এটা বাণিজ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করুন। তার নিজেরই তো ব্যবসা আছে। খাদ্যমন্ত্রী নিজেই চাল মিলের মালিক, আড়তের মালিক। স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করা উচিত। যাদের গোডাউনে হাজার হাজার বস্তা চাল, চিনি পাওয়া যায় তাদের ধরবে। তাদের ছাড় দেবে না। শেয়ার কেলেঙ্কারিতে কারা ছিল ? তাদের অনেকেই এখন মন্ত্রী।কাশিমপুর কারাগারে আমিসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা একসঙ্গে ছিলাম। বললে তো এখন সমস্যা। এদের মধ্যে দুজন ঘুমাতে যাওয়ার আগে নেত্রীকে এক গালি, ঘুম থেকে উঠে আরেক গালি দিতো। আজকে তারা কোথায়, আমরা কোথায় ?’
রিজভী আহমেদ বলেন, কামাল মজুমদারের এসকল সত্য উন্মোচন বিলম্বিত বোধোদয়! শেষ সময়ে হয়তো এসব কথা ফাঁস করছেন। তবে আমরা গত দেড় দশক ধরে এসব সত্যকথা বলার কারনে সরকার আমাদের ওপর অত্যাচার নিপীড়ন জেলজুলুম চালিয়ে আসছে। সামনে ক্রমেই সব সত্য মাফিয়া সরকারের মুখ থেকেই বেরুবে। তারা একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে অপকর্মের সাক্ষ্য দিবে। জনগণের কাঠগড়ায় তাদের বিচার হবেই।
নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার নির্যাতনের নিন্দা: রিজভী আহমেদ বলেন, অসত্য, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় বগুড়া জেলাধীন গাবতলী উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক গত ৭ মে ২০২৩, আদালতে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ১৬ মে ২০২৩ তারিখে আবারও তিনি জামিন আবেদন করলে তা বাতিল করেছে আদালত। তিনি এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেনএবং অবিলম্বে তার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহবান জানান। এছাড়াও গত ১৬ মে কোর্টে হাজিরা দিয়ে বের হওয়ার পর বংশাল থানা বিএনপি নেতা ইয়াকুব সরকারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এছাড়াও গতরাতে কুমিল্লা জেলাধীন বুড়িচং উপজেলায় পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ীতে-বাড়ীতে তল্লাশি চালিয়ে বুড়িচং উপজেলা যুবলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ পারভেজ, বুড়িচং উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া ও মোকাম ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব এমরান হোসেনকে গ্রেফতার করে। অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার এবং নিঃশর্ত মুক্তির আহবান জানান তিনি।
কর্মসূচি:উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে অধীনস্থ আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবী মামলায় নির্বিচারে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানী, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোড শেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দূর্নীতির প্রতিবাদে এবং ১০ দফা দাবী বাস্তবায়নে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ব্যতিরেকে দেশব্যাপী সকল মহানগরে বিএনপি’র উদ্যোগে আগামী ২৩ মে ও ২৮ মে ২০২৩ তারিখে পদযাত্রা অনুষ্টিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুল ইসলাম খান আলিম, খান রবিউল ইসলাম রবি, তারিকুল আলম তেনজিং, মৎস্যজীবী দলের মো. আবদুর রহিম, মুক্তিযোদ্ধা দলের মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার, স্বেচ্ছাসেবক দলের ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ প্রমুখ।