ক্ষমতাসীন সরকারের লোকেরা অর্থ বিত্তের পুকুরে সাঁতার কাটছে: রিজভী

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ক্ষমতাসীন সরকারের লোকেরা অর্থ বিত্তের পুকুরে সাঁতার কাটছে: রিজভী

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ডামি সরকারের বাজার লুটের কারণে আজ জনগণ সর্বশান্ত। বাজারে দ্রব্যমূল্যের আগুনে পুড়ছে সাধারণ মানুষ আর অর্থ বিত্তের পুকুরে সাঁতার কাটছে সরকারের লোকজন। নিত্যপণ্যের বাজার সিন্ডিকেট যে সরাসরি শেখ হাসিনা নিয়ন্ত্রিত তা বিভিন্ন সময় ইশারা ইঙ্গিতে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী—নেতারা প্রকাশ্যে বলেছেন। দেশকে পরিণত করা হয়েছে পৃথিবীর এক নাম্বার শব্দ আর বায়ু দূষণের ভাগাড়ে। সব মিলিয়ে কেবল এই রাজধানী ঢাকা নয়, পুরো দেশটাকেই যাতনাময়—বিষাদলোকে পরিণত করেছে ভোট ডাকাতির মাফিয়া সরকার। নিত্যপণ্যের বাজার লুটেরা মাফিয়া—সিন্ডিকেটের হাতে বর্গা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। ক্রমাগত দ্রব্যমূল্যের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে জনগণ। মাহে রমজানকে সামনে রেখে এখন থেকেই সরকারের সিন্ডিকেট চক্র জনগণের পকেট কাটতে বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, সম্পূর্ণ একদলীয়—একতরফা ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মসনদের অবৈধ মেয়াদ প্রলম্বিত করে আরো বেপরোয়া হয়ে জনগণের ওপর নতুন মাত্রায় জুলুম চালাচ্ছে ডামি সরকার। মানুষের বেঁচে—বর্তে থাকার অধিকার, জান—মাল, মানবাধিকার, জননিরাপত্তা লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে। তাদের অনঢ়তা, একগুঁয়েমী ও বৈরিতার আঘাতে গণতন্ত্র কবরে শায়িত। 
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের পেশীশক্তি দিয়ে বিরোধীদল দমনের অভিনব সব পন্থা বিগত দেড় দশক ধরে অব্যাহত আছে। বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবেলা করতে গিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বাড়াবাড়ি বলপ্রয়োগ, একই সময় ক্ষমতাসীন দলের পাল্টা কর্মসূচি সংঘাতময় বিভিষিকার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
রিজভী বলেন, দৃষ্টান্তহীন নতুন মডেলের একদলীয় বাকশাল ২.০ প্রতিষ্ঠার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী—সমর্থক—উচ্ছিষ্টভোগী—দালাল ছাড়া দেশের সাধারণ মানুষ যেন উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। বিরোধীদল নিস্পেষণ—দলন—গ্রেফতার—হত্যা আর সাধারণ জনগণের রক্তচুষে খাওয়াই এখন মাফিয়া সরকারের ব্রত। জনজীবনকে তারা দুর্বিষহ করে তুলেছে। মানুষের জীবনে নেমে এসেছে নাভিশ্বাস দশা। এদেশে স্বস্তিকর জীবন যাপন বলে কিছু নেই। 
তিনি বলেন, একটা ভয়ংকর দু:স্বপ্নের ভেতরে বাংলাদেশকে নিপতিত করা হয়েছে। মানুষ আর সইতে পারছে না। অসহায় মানুষের বুকফাটা কান্নার শব্দ এই লুটপাট টাকা পাচারে ব্যস্ত সরকার শুনতে পাচ্ছে না। গ্যাস নাই, চুলা ঠান্ডা, রাস্তায় যানজট, বিদ্যুতের সীমাহীন লোডশেডিং, পুতি—দুর্গন্ধময় ওয়াসার ময়লা পানি, বাজারে আগুন। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সড়কে মৃত্যু, খুন, ডায়রিয়াসহ নিত্যপণ্যের দাম আওয়ামী সিন্ডিকেট লাগামহীন ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে সভ্যতার জন্য বৈরী সংগঠন ছাত্রলীগ গড়ে তুলেছে নারীর শ্লীলতাহানিসহ সন্ত্রাস আর নৈরাজ্যের অভয়ারণ্য। সকল বিশ্ববিদ্যালয় এখন রক্তাক্ত এবং নারীদের জন্য বিপজ্জনক স্থান। সরকারী দলের প্রশ্রয়ে শহর—নগর—বন্দর—জনপদে দাপিয়ে বেড়ানো কিশোর গ্যাংয়ের ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, হামলা ও খুনাখুনিতে মানুষ আতংকিত। 

রিজভী আরও বলেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমানোর ঘোষনা দিলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব তো পড়েইনি, উল্টো গত ১০ দিনে রমজানসংশ্লিষ্ট কয়েকটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। শুল্ক কমানোর পরে ঐ ৪টি পণ্যের দাম কেজিতে ৪০ টাকা কমার কথা, কিন্তু কমেনি তো বটেই বরং এই চারটি পণ্যের দাম কেজিতে ১০/২০ টাকা বেড়ে গেছে। পাইকারি পর্যায়ে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৪ টাকা দরে, যা এক সপ্তাহ আগে ১৩২ টাকায় বিক্রি হতো। এখন খুচরা বাজারে খোলা চিনির কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ এবং প্যাকেটজাত চিনি ১৪৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এখনও সেই দরে কিনতে হচ্ছে চিনি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বছরের ব্যবধানে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। কোনো কোনো পণ্যের দাম দ্বিগুণ ছাড়িয়েছে। যেমন গত বছর এই সময়ে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। অর্থাৎ দাম বেড়েছে তিন গুণের বেশি। একই অবস্থা মাংস ও মাছের বাজারেও।

রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে আওয়ামী লীগ এখন বাকসর্বস্ব বন্দুক নির্ভর দলে পরিণত হয়েছে। এই দলটির সকল পর্যায়ের নেতাদের কথাবার্তায় আচার—আচরণে জনগণের প্রতি অশ্রদ্ধা—অবহেলা ফুটে ওঠে। আপনারা সম্প্রতি ডামি সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য শুনেছেন। তিনি নিজেই বলছেন—“আমি কালা—কুলা মানুষ, পরীর লাহান দেহায়না, সৌন্দয্যর্ও নাই, ভোট পাবো কী ?”—এই চরম বর্ণবাদী মন্তব্য করে শেখ হাসিনা নিজেই নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। চেহারা কিংবা গায়ের রং নিয়ে তিনি হীনমন্যতায় ভুগছেন কেনো? তবে বাস্তবতা হচ্ছে, কারো গায়ের রং কিংবা চেহারা বিচার করে নয় বরং জনগণ রাজনৈতিক আদর্শ এবং ভিন্নমত প্রকাশসহ সুশাসনের চেহারা দেখে ভোট দেয়। গণতন্ত্রের নামে কায়েমী স্বার্থবাদীরা অপপ্রচারকে হাতিয়ারে পরিণত করেছে। জনগণের অদৃষ্ট যে ভাল নয়, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনলেই সেটি মনে হয়। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নিরুদ্দেশ করে শেখ হাসিনা রাজা—প্রজার শাসন কায়েম করেছেন। তিনি বাংলাদেশের মসনদকে তার পৈত্রিক সম্পদ বলে মনে করেন। এই মসনদে জনগণের কোনো অধিকার নেই। সুতরাং তার পছন্দের বাড়ী গণভবন বরাবরই তার রাজকীয় নিবাস হবে। এই দৃষ্টান্তও তিনি রেখেছেন।

রিজভী বলেন, গত শনিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “দেশে বিএনপি সবচেয়ে বড় উগ্রবাদী দল। দেশে উগ্রবাদের জন্ম বিএনপির হাত ধরে। সরকার আত্মশক্তিতে বলিয়ান।” আসলে ওবায়দুল কাদের সাহেবের কিছু বলার আর করার কিছু নেই। তিনি আওয়ামী লীগের জড়পদার্থে পরিণত হয়েছেন। যেভাবে চালানো হয় তিনি সেভাবেই চলেন। যে দেশে আওয়ামী লীগের মতো একটি দলের অস্তিত্ব থাকে সে দেশে উগ্রবাদ খুঁজতে যাওয়া মূর্খের স্বর্গে বাস করা। জনগণপীড়ক অত্যাচারী, ন্যায়বিচারশুণ্য প্রশাসন, স্বার্থপর—লোভী কুকর্মাসক্ত আওয়ামী লীগ মাত্র তিন মাসেই বেছে বেছে বিএনপির ৩৪ জন নেতাকর্মীকে খুন করেছে। সরকারী মদদে ও অবহেলায় কারাগারে ১৫ জন নেতাকর্মীর মৃত্যু নিশ্চিত করার পরও ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনারা কাকে উগ্রশক্তি বলেন? ওবায়দুল কাদের সাহেবকে জিজ্ঞাসা করি—গণতান্ত্রিক বিশ্বের তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই কেনো? গণতন্ত্রের সূচকে বাংলাদেশের আরও পতন হচ্ছে কেনো? পৃথিবীর বিশ্বাসযোগ্য মর্যাদাসম্পন্ন সংগঠনগুলির জরিপে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়? তার বক্তব্য বরাবরই বিরোধের ছায়াকে প্রলম্বিত করে। তিনি দখলদার মাফিয়া টিমের মুখপাত্র।

রিজভী আরও বলেন, ওমান ওয়াইলজা শাখা বিএনপির সহ—সভাপতি ও চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা বিএনপির সাবেক নেতা মোহাম্মদ মুছা দীর্ঘ ১৬ বছর পর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ভয়ে গভীর রাতে তার বাবার কবর জিয়ারত করার উদ্দেশ্যে রাউজান উপজেলাস্থ তার নিজ বাড়িতে যায়। পরের দিন ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বাড়ীর মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় শেষে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাকে মসজিদ থেকে টেনে—হিচড়ে বের করে জনসম্মুখে নিমর্মভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। আমি আওয়ামী সন্ত্রাসীদ্বারা এই ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি, একইসঙ্গে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার জোর আহ্বান করছি এবং নিহত বিএনপি নেতা মোহাম্মদ মুছার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
বাগেরহাটে শ্রমিকদল নেতা শেখ সুমন, ষাট গম্বুজ ইউনিয়ন বিএনপি নেতা চাকলাদার হাসিবুর রহমান, চিতলমারী থানা শ্রমিকদল নেতা লিটন শেখ ও মুজাহিদ শেখ এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জাসাসের যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহফুজকে পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতারের নিন্দা ও তাদের মুক্তির দাবি জানান রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, ডা. আবদুল কুদ্দুস, সহ দপ্তর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল আলম তেনজিং, কাজী রফিক, বিএনপি নেতা অধ্যাপক ইমতিয়াজ বকুল প্রমুখ।