ইউপি সদস্যকে হত্যার পর মধ্যপ্রাচ্যে চলে যান ফাঁসির আসামি
বুধবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: ১৯ বছর আগে ২০০৬ সালে কেরানীগঞ্জের রোহিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আনোয়ার হোসেনকে (৫০) নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীনকে (৬৪) মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। সবশেষ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব।
র্যাব জানায়, ২০০৭ সালে কৌশলে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পালিয়ে যান কামাল উদ্দীন। দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০১৯ সালে বাংলাদেশে আসেন। এরপর নিজের পরিচয় গোপন রেখে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বসবাস শুরু করেন। গ্রেফতার এড়াতে বারবার অবস্থান পরিবর্তন করে আত্মগোপনে থাকতেন। বুধবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেনকে কেরানীগঞ্জের সৈয়দপুর ঘাটে নিয়ে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। ওইদিন রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আনোয়ার।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তখন এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। বিভিন্ন মিডিয়ায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার হয় এ খবর। এরপর ২০০৮ সালের ৩১ মে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিনসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
পরবর্তীতে আদালত ২০০৯ সালের ২৫ আগস্ট বিচার শেষে কামাল উদ্দিনসহ দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৩ জনকে খালাস দিয়ে রায় দেন। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, নিহত আনোয়ার হোসেন ইউপি সদস্যের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে আড়তের ব্যবসা করতেন। এছাড়া বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন তিনি। এ কারণে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও ভূমি দস্যুদের শত্রুতে পরিণত হন।
মামলার প্রধান আসামি কামাল উদ্দীনের বিষয়ে তিনি বলেন, কামাল উদ্দীন ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালীন এলাকায় একটি সন্ত্রাসী দল গঠন করে এবং অবৈধ বালুর ব্যবসা, জোরপূর্বক ভূমি দখল, ত্রাণের মালামাল কুক্ষিগত করা ও এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। নিহত আনোয়ার হোসেন বিভিন্ন সময় এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতেন। ফলে স্থানীয়দের মাঝে জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি।
এ জন্য আনোয়ারের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন কামাল। পরিকল্পনার অনুযায়ী ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সৈয়দপুর ঘাটে মাছের আড়তে যাওয়ার সময় ৮-১০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল আনোয়ার হোসেনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। একপর্যায়ে আনোয়ার হোসেনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে কামালসহ তার সন্ত্রাসী দল নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।