আরেকটি জালিয়াতির নির্বাচন করতে বিরোধী দলকে দমনের পাশাপাশি নির্লজ্জ মিথ্যাচার করছে সরকার: রিজভী

আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

আরেকটি জালিয়াতির নির্বাচন করতে বিরোধী দলকে দমনের পাশাপাশি নির্লজ্জ মিথ্যাচার করছে সরকার: রিজভী

প্রথম নিউজ, ঢাকা: আওয়ামী মন্ত্রীরা ৭ জানুয়ারী আরেকটি জালিয়াতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য বিরোধী দলকে নিষ্ঠুর দমনের পাশাপাশি দেশে-বিদেশ নির্লজ্জ মিথ্যাচারে নিজেদেরকে লিপ্ত রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন  বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী

আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী মন্ত্রীরা ৭ জানুয়ারী আরেকটি জালিয়াতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য বিরোধী দলকে নিষ্ঠুর দমনের পাশাপাশি দেশে-বিদেশ নির্লজ্জ মিথ্যাচারে নিজেদেরকে লিপ্ত রেখেছে। আওয়ামী কারচুপি নির্বাচন কন্টকমুক্ত করতে মন্ত্রীরা দেশে বিদেশে নিজেদের মানসম্মান খুইয়ে অপ-প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের যুক্তরাষ্ট্র ‘ম্যানেজ’ হয়ে যাওয়ার বক্তব্য ডাহা মিথ্যা এবং এটি সরাসরি প্রত্যাখান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা এটিকে ‘ডিপ ফেক নিউজ’ বলে অভিহিত করেছে। মন্ত্রীদ্বয় কতখানি বেহায়া হলে পরে এহেন নির্ভেজাল মিথ্যাকথা বলতে পারে তা নজিরবিহীন। যুক্তরাষ্ট্র ম্যানেজ নয় বরং তারা গণহারে বিরোধীদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মন্ত্রীদ্বয়ের বক্তব্য কুটনৈতিক আচরনের ইতিহাসে এটি একটি বড় ধরনের কেলেঙ্কারী। অর্থবিত্ত, টাকা পাচার, অঢেল সম্পত্তির মালিক, গার্ড অব অনার, নিরাপত্তা বেষ্টনীর মায়া ভুলতে পারছেন না বলেই মিথ্যা, বানোয়াট ও নৈতিক অনাচারমূলক বক্তব্য দিতে বিবেকের অনুতাপ বোধ করেন না অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা। ক্ষমতা ধরে রাখতে এক উন্মার্গগামী বেপরোয়া অবৈধ ক্ষমতাসীনরা গণতন্ত্রকামী মানুষের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজানোর আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন মানুষ হত্যা করে সরকার উৎখাত করা যাবেনা। দেশ ও আন্তর্জাতিকভাবে সবাই জানে যে, হত্যা, নিপীড়ন নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী দল নিশ্চিহ্ন করার ধারাবাহিক কর্মকান্ডে প্রধানমন্ত্রীর অবৈধ সরকারের সুপ্রতিষ্ঠিত নীতি। তিনি কিনা বিরোধী দলের উপর দোষ চাপাচ্ছেন। তাহলে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বতন্ত্রপ্রার্থীর কর্মী নিহত হলেন নৌকার সমর্থকদের দ্বারা কিভাবে?  একটা ‘চিটিং’ নির্বাচন করতে নিজেরা নিজেদের হত্যা করছে এর দায় কি আপনার নয়! এই কারসাজির নির্বাচনকে ঘিরে প্রায় প্রতিদিন হত্যার শিকার হচ্ছেন গণতান্ত্রিক সংগ্রামের কর্মীরা। মানিকগঞ্জের বিপ্লব হাসান বিপুল, কক্সবাজারে ৭ নভেম্বর বিএনপি নেতা জাগির হোসেন, নওগা বিএনপি নেতা কামাল, বগুড়ার আব্দুল মতিন সহ নভেম্বর মাসেই ১৯/২০জন বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নিহত হয়েছেন। এদেরকে হত্যা করেছে আপনার তৈরী করা আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এর দায় কি আপনার নয় প্রধানমন্ত্রী?

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, বিরোধীদল হীন একটি এক দলীয় ডামি নির্বাচন মঞ্চস্থ করতে ভোট ডাকাত সরকার গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করছে। আওয়ামীলীগের পক্ষে দালালি এবং শেখ হাসিনাকে তুষ্ট করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে দলদাস পুলিশসহ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনসহ প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দেশ ও জনগনের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা-কর্তব্য -সাংবিধানিক শপথ সব ভূলে নিশিরাতের অটোপাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একনায়কতন্ত্রের পদলেহী হিসেবে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন। পুরো বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার আওয়ামীময় করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো খঁড়গ কৃপান হাতে নিয়ে নেমেছেন। তাদেরকে শেখ হাসিনা যে একটা বিপজ্জনক অনিশ্চিত ফাঁদের ভেতর ফেলছে তা উপলব্ধি করার হিতাহিত জ্ঞানও লোপ পেয়েছে তাদের। পুলিশসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাচন কমিশনসহ প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অনুধাবন করা কর্তব্য যে, তারা সাধারন জনগনের কষ্টার্জিত টাকায় বেতন-ভাতা ভোগ করেন। এই দেশে এই সমাজেই তাদের বাবা-মা-স্ত্রী-সন্তান, স্বজন-পরিজন আপনজনের বসবাস। সাধারন মানুষ সরকারের উৎপীড়ন-দুঃশাসন-জুলুম-নিপীড়ন-বাজার সিন্ডিকেটের করাল থাবায় অশান্তিতে জীবনযাপন করছেন। তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে, আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা এদের মনের মধ্যে আসেনা। এরা শুধুই ব্যাক্তি স্বার্থে কাজ করছেন। কারন শেখ হাসিনার সরকারই শেষ সরকার নয়। আজ হোক-কাল হোক বিদায় তাদের অনিবার্য পরিণতি। বশংবদসহ পৃথিবীর প্রতিটি স্বৈরাচারে পতন হয়েছে নিদারুন করুনভাবে। আজ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনগনের শত্রতে পরিণত করা হয়েছে। বিএনপি’র নেতা-কর্মীকে জেলে পুরে, ভিটেমাটি-ঘরবাড়ী-ছাড়া করে তাড়িয়ে পোড়ামাটি নীতির বাস্তবায়ন প্রকল্পে এই সকল প্রাতিষ্ঠানিক কর্তা ব্যাক্তিরা সহযোগিতা করছেন। গোটা দেশই এখন বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোর জন্য এক শ্বাশরুদ্ধকর কারাগারে পরিণত করা হয়েছে এই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিয়ে। শেখ হাসিনার নীতি হলো যাকে যখন যতক্ষন প্রয়োজন ততক্ষন তাকে নীতিভ্রষ্ট-অন্যায় অপকর্ম সাধনে ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া। পেছনে ফিরে দেখুন এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি। সুতরাং পুলিশসহ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাচন কমিশনসহ প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারীরা এখন শেখ হাসিনার পুতুল মাত্র। একাত্তরের চেয়ে ভয়াবহ একটা সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রিয় মাতৃভূমি। এখানে দেশের ১৮ কোটি মানুষ এবং গনতান্ত্রিক বিশ্বের বিপক্ষে দাড়িয়ে আওয়ামী ডামি, আওয়ামী স্বতন্ত্র, আওয়ামী নৌকা, মনোনীত নৌকা, অনুমতিক্রমে স্বতন্ত্র, বিদ্রোহী নৌকা আওয়ামী জোট, আওয়ামী পার্টির এক অদ্ভুত কিম্ভুতকিমাকার নির্বাচনের আয়োজন চলছে। এক ক্লাবের খেলা! খেলোয়াড়ও একই দলের। যেটা লাউ সেটাই কদু। নিজেরাই নিজেদের বিরোধী দল! ভোটারদের কাছে আহ্বান জবরদস্তি করলেও ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। ভোট বর্জন করুন। শেখ হাসিনার ভোটরঙ্গ রুখে দিন।
তিনি বলেন, গত দেড় মাসের বেশী সময় ধরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। নয়া পল্টনের ত্রিসীমায় যেতে পারেন না আমাদের নেতারা। বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশানের  কার্যালয়েও নজরদারী করছে শেখ হাসিনার দলদাস আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল গভীর রাতে পুলিশ গুলশানস্থ কার্যালয়ে তান্ডব চালিয়েছে। একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে প্রবেশ বা তল্লাশী করতে গেলে অনুমতি নেয়ার নিয়ম রয়েছে। পুলিশ সেখানে হানা দিয়ে কক্ষে কক্ষে তল্লাশী চালিয়েছে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য সেখানে রাখা পুস্পস্তবকসহ আনুসঙ্গিক সবকিছু নিয়ে যায়। আবার হুমকীও দিয়েছে কেউ অফিসে গেলে গ্রেফতার করবে। বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে বাধার সৃষ্টি এবং মহান বিজয় দিবসের বিজয় র‌্যালী করার অনুমতি দিতেও তারা টালবাহানার মাধ্যমে তারা একাত্তরের হানাদার বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন,, স্বাধীনতা যুদ্ধের চুড়ান্ত ক্ষণে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হ্ত্যা করেও মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ঠেকানো যায়নি, বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার গুম, খুন ও শ্বেত সন্ত্রাসের মাধ্যমে পাতানো প্রহসনের নির্বাচনের পায়তারা করলেও নিজেদের পতন ঠেকাতে পারবেনা। পাক হানাদারেরা যখন দেখলো তাদের পরাজয় অবধারিত তখন তারা কাপুরুষোচিত কায়দায় রাতের অন্ধকারে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হ্ত্যা করে আমাদের মনোবল ভেঙ্গে দিতে চেয়েছিলো। সেদিনকার বর্বরোচিত হত্যাকান্ড বাংলার মানুষকে আরও বেশী সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিল। একই পদ্ধতিতে গুম, খুন, গ্রেফতার ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষকে দমন করতে চায় শেখ হাসিনা। তারা মনে করেছে তাদের দূর্নীতি, লুটপাট ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সব আওয়াজকে তারা থামিয়ে দিবে। প্রহসনের নির্বাচনও স্বৈরতন্ত্রের পতন ঠেকাতে পারবেনা ইনশাআল্লাহ। এই বিজয়ের মাসে হানাদার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিজয় হবে জনতার।