আমরা দুঃশাসন থেকে মুক্ত হতে সরকার পতনে রাজপথে নামতে চাই: হাফিজ উদ্দিন 

আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে রণাঙ্গনের বীরমুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে তিনি একথা বলেন।

আমরা দুঃশাসন থেকে মুক্ত হতে সরকার পতনে রাজপথে নামতে চাই: হাফিজ উদ্দিন 

প্রথম নিউজ, ঢাকা: রাজনৈতিক দলগুলোর কারণে দেশের মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান ভুলতে বসেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম। উপস্থিত রণাঙ্গনের বীরমুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্র কিভাবে চলবে মাথায় ঘামাইনি। আমাদের সিনিয়র অফিসারসহ আমরা সেনাবাহিনীসহ নিজ নিজ পেশায় ফিরে গিয়েছি। কিন্তু এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে- আমরা যেসব মুক্তিযোদ্ধারা এখনো বেঁচে আছি, তারা রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের পলিসিতে হস্তক্ষেপ করতে চাই, দুঃশাসন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য রাজপথে নেমে এসে সরকার পতন আন্দোলনে করতে চাই - এই বিষয়ে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের মতামত চান হাফিজ। জবাবে সমস্বরে হ্যা বলে সবাই চিৎকার করেন। এ সময় হাফিজ বলেন, হ্যা জয়যুক্ত হয়েছে, হ্যা জয়যুক্ত হয়েছে। 
আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে রণাঙ্গনের বীরমুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে তিনি একথা বলেন। ‘৭১ এর মুক্তিযোদ্ধা-প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের অহংকার, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা কারো দয়ার দান নয়!’ শিরোনামে এই সমাবেশ হয়।
রণাঙ্গনের এই মুক্তিযোদ্ধা হাফিজ উদ্দিন আরো বলেন, আমরা রাজনীতিবিদদের মান্য করেছি। কিন্তু কখনো তারা বলেননি ওয়েল ডান মাই বয়েস। তোমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করছ। তখন স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের নামই কেউ নেয়নি।
 হাফিজ উদ্দিন বলেন, ১৯৭১ সালে যুবকরা তরুণরা কত সাহসী ছিল। সেদিন বীর বাঙালিরা যুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করেছিলেন। কিন্তু আজকে বাংলাদেশকে দেখলে বোঝা যায় না - এই দেশ যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে।  তিনি আরো বলেন, কেন এই দেশে মুক্তিযোদ্ধারা অবহেলিত? এর প্রধান কারণ হলো রাজনীতিবিদের চরিত্র। এদেশে যতগুলো রাজনৈতিক দল আছে যত রাজনীতিবিদ আছেন তারা অন্যকে সম্মান দিবে না। তারা নিজের দল, নিজের নেতা, নিজের পকেট অন্য কিছু বুঝতে চায় না।
রণাঙ্গনের এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের ভুল ইতিহাস শিখানো হচ্ছে। ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ কিভাবে সংগঠিত হয়েছিল- যে কোনো নিরপেক্ষ বয়স্ক জ্ঞানী লোক এবং ‘৭১ দেখেছেন এমন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাস করবেন তারা সবাই বলবেন, ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। সেখানে নেতৃত্ব কে দিয়েছেন? বলবে, সাধারণ সৈনিক ও ছাত্ররা এবং বিভিন্ন পেশার মানুষ। কিন্তু এখন একজন তরুন, বই পড়ে ইতিহাস জেনেছেন, ৭১ সালে তার জন্মও হয়নি তাকে জিজ্ঞাসা করেন, সে বলবে একজন নেতা ঘোষণা দিয়েছেন, তাতেই দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। কিন্তু যারা রণাঙ্গনে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন তাদের নাম ইতিহাসে লেখা নেই।    
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরে হাফিজ উদ্দিন বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান একজন বড় মাপের নেতা ছিলেন। পুরো জাতিকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। তাকে আমরা নেতা হিসেবে গ্রহন করি। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে একজন সৈনিক মেজর জিয়াউর রহমান সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা ছিলেন। সেদিন কিন্তু এই ঘোষণা দেওয়ার জন্য কোনো রাজনৈতিক নেতাকে পাওয়া যায়নি। এই সামন্য কৃতিত্বটুকু জিয়াউর রহমানকে আওয়ামী লীগ দিতে চায় না। অথচ তিনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকেই ঘোষণা দিয়েছেন। 
তিনি আরো বলেন, মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে, অনেকে না শুনেই বিশেষ করে জয়দেবপুর, সৈয়দপুর ব্রাক্ষ্মবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, বগুড়া সব ক্যান্টমেন্টে বাঙালি সৈনিকরা বিদ্রোহ করে। প্রতিটি ক্যান্টমেন্টে যুদ্ধ বেধে যায়। এখানে আমাদের সাথে যোগ দেয় হাজার হাজার তরুণ। গঠন করা হয় মুক্তিবাহিনী। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন-এটা মেনে নিলে রাজনৈতিক নেতারা মনে করেন, মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে কৃতিত্ব দিলে আমরা ছোট হয়ে যাবো। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের মন ছোট নয় বলে মন্তব্য করেন হাফিজ।
 তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া একদফা দাবির কথা আওয়ামী লীগ কখনো বলেনি। তারা পূর্বপাকিস্তানের শায়িত্বশাসন চেয়েছিল। একমাত্র মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, তবে সে কথা সেভাবে উঠে আসেনি।
তিনি আরো বলেন, দেশে যত লুটপাট হয়েছে মুক্তিযোদ্ধারা করেনি। এসব লুটপাট করেছে রাজনৈতিক নেতারা। দুর্নীতিবাজ নেতাকর্মীরা রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে।  ‘৭১ মুক্তিযুদ্ধ ছিল গণতন্ত্রের জন্য, সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য, সাম্য প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ আমরা সবাই এটাই চেয়েছিলাম। রাজনীতিবিদরা নিজের নেতা ও দলকে দেশের উপরে স্থানে দিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সরিয়ে দেওয়া হলো। 
দেশ একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন হাফিজ উদ্দিন। তিনি দেশে এখন গণতন্ত্র-সুশাসন কিছুই নেই।   তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ মানুষের সন্তান, সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের কথা কেউ বলে না। অথচ আওয়ামী লীগ করলেই, মন্ত্রী হলেই মুক্তিযোদ্ধা হতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান মন্ত্রীদের ওপরে। তা না হলে কেন এই সরকারের আমলে একজন  মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা হতে চান। ৭১ সালে যার বয়স ছিলো ৭ বছর৷ আওয়ামী লীগ করলেই মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিযোদ্ধারাও মুক্তিযোদ্ধা। এটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অসম্মানের। মুক্তিযুদ্ধ না হলে দেশ স্বাধীন হতো না। দেশকে স্বাধীন করেছে মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু এই কৃতিত্ব কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের দেবে না। সব কৃতিত্ব রাজনৈতিক নেতাদের।

মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক বলেন, আগামী দিনে সরকার গঠন হবে, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে। অনুষ্ঠানে রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, মজিবর রহমান সরোয়ার, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ফজলুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব:) জয়নাল আবদীন, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা সাদেক খানসহ শতাধিক রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom