‘আমাগো বাড়ি আছেলে ওই গাঙ্গের মাঝখানে’

‘আমাগো বাড়ি আছেলে ওই গাঙ্গের মাঝখানে’

প্রথম নিউজ, পটুয়াখালী: ‘আমাগো বাড়ি আছেলে (ছিল) ওই গাঙ্গের (নদী) মাঝখানে, ভাঙতে ভাঙতে পাঁচবার বাড়ি পাল্ডাইছি। এখন তো আর যাওয়ার জায়গা নাই, সব তো নদীতে যাইতে আছে। এই তো দেহেন হোস্যাডা (রান্নাঘর) ভাঙতে আছে। কী করমু, মাইয়া পোলা লইয়া কোম্মে যামু।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা ময়না বেগম। কচাবুনিয়া নদীর ভাঙনে তিনি গত কয়েক বছরে হারিয়েছেন বসতবাড়ি, কৃষিজমিসহ মূল্যবান গাছপালা। এখন যে কোনো সময় বিলীন হতে পারে ময়না বেগমের বর্তমান ঘরটিও। এই এলাকার নদীপাড়ের অধিকাংশ মানুষের জীবনচিত্র এমনই।

একই এলাকার গৃহবধূ মাসুমা আক্তার বলেন, ‘আমার বিয়ের বয়স এই ১৪ বছর, আমি এ পর্যন্ত তিনবার বাড়ি পাল্ডাইছি। নদীর এই পাড় ভাঙে ওই পাড় গড়ে। কী আর করমু, বাচ্চাকাচ্চা লইয়া বিপদে আছি। সরকার যদি আমাগো দিগে একটু চাইতো হেলে নিজেগো ভিডাডায় হয়তো থাকতে পারতাম।’

পটুয়াখালী সদর উপজেলার কচাবুনিয়া নদীর ভাঙনে দিন দিন নিঃস্ব হচ্ছেন বদরপুর ও মৌকরন ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ। সম্প্রতি ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে ইউনিয়নের প্রধান সড়কসহ জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের খুঁটি। গত কয়েক দশক যাবত এই ভাঙন চললেও প্রতিকারে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা।

সম্প্রতি ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভাঙনের কারণে মৌকরন ইউনিয়নের চলাচলের প্রধান সড়কটির অবস্থাও বেহাল। সড়কের অর্ধেক এরইমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে পটুয়াখালী-বরিশাল ১৩২ কেভি জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ১৫৭নং স্টিল এইচ-পোল ফাউন্ডেশন।

মৌকরন ইউনিয়নের নদীর পাড়ের সড়ক ব্যবহার করে মৌকরন বিএলপি ডিগ্রি কলেজসহ ইউনিয়নের প্রধান বাজার, বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় চলাচল করা যায়। ফলে সড়কটি ভেঙে গেলে এই ইউনিয়নের মানুষকে দীর্ঘমেয়াদী বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হবে। পাশপাশি কচাবুনিয়া নদীর ওপর নির্মিত মৌকরন ব্রিজের পূর্ব ও পশ্চিমপাশে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় ব্রিজটিও হুমকির মুখে পড়েছে।

বদরপুর এলাকার বাসিন্দা বশির হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে দশ করা জমি ছিলে, ভাঙতে ভাঙতে এখন দুই করা আছে। আমার এহন থাহার মতো কোনো জমি নাই। এই বয়সে আমি চারবার বাড়ি ভাঙছি। আমরা সরকারের কাছে আর কিছু চাই না, শুধু পাইলিংয়ের (সিসি ব্লক) ব্যবস্থা চাই।’

জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন হুমকির বিষয়ে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান পলাশ বলেন, ঝুঁকি বিবেচনা করে ওই খুঁটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নদীপাড়ে বালুর বস্তা এবং পাইল করার জন্য এরইমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। নদীর পানি কিছুটা কমলে কাজটি শুরু করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন জানান, গুরুত্ব বিবেচনা করে এরইমধ্যে ওই এলাকায় স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সার্ভের কাজ শুরু হয়েছে। পরিকল্পনা ও ডিজাইন তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। অনুমোদন পেলে প্রয়োজনীয় টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু করা হবে।