আদালতে প্রিজন ভ্যানের সারি, মুখরিত ‘শ্লোগানে’

তাদের গতকাল কয়েকটি প্রিজন ভ্যানে করে নেয়া হয় ঢাকা আদালতে। প্রিজন ভ্যানের এই সারি যখন আদালতে প্রবেশ করে তখন দেখা যায় অন্যরকম দৃশ্য।

আদালতে প্রিজন ভ্যানের সারি, মুখরিত ‘শ্লোগানে’

প্রথম নিউজ, অনলাইন: মহাসমাবেশ ঘিরে বুধবার রাতভর অভিযান। গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি’র কয়েকশ’ নেতাকর্মীকে। তাদের গতকাল কয়েকটি প্রিজন ভ্যানে করে নেয়া হয় ঢাকা আদালতে। প্রিজন ভ্যানের এই সারি যখন আদালতে প্রবেশ করে তখন দেখা যায় অন্যরকম দৃশ্য। ভ্যানের ভেতর থেকে নেতাকর্মীদের মুহুর্মুহু স্লোগান। দলীয় নানা স্লোগান দিয়ে তারা গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানান। গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের সঙ্গে স্লোগান দেন আদালতে উপস্থিত বিএনপিপন্থি আইনজীবীরাও। তবে পুলিশের কড়াকড়িতে অল্প সময় পরেই তাদের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। হাজতখানার বাহিরে স্বজনদের অপেক্ষা করতে দেখা যায়। হাজতখানার সামনে কথা হয় গ্রেপ্তার ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি নেতা ইমরানুর রহমান ইমরানের ভাই রাসেল মিয়ার সঙ্গে।

তিনি বলেন, ভাইকে আসতে নিষেধ করেছিলাম। সে শোনেনি। সে বিএনপি’র ভক্ত। আমার ভাইকে বুধবার বিকালে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা গভীর রাতে জানতে পেরেছি। পরে অনেকবার ফোন করেছি। কিন্তু ফোন বন্ধ পেয়েছি। তখন অনেক চিন্তায় ছিলাম। আবার কি হয়ে যায়। পরিবারে সবাই চিন্তায়। ভাইকে মুক্ত করে বাড়ি ফিরবো। কি মামলা দিয়েছে, এখনো জানতে পারিনি। তবে আইনজীবী বললো নন-জিআর মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। দ্রুত জামিন হয়ে যাবে। কোনো অপরাধ না করেও পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। বিএনপি করা কি কোনো দোষ? তার নামে কোনো মামলাও ছিল না। 

প্রিজন ভ্যান থেকেই কথা বলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন একাংশের নির্বাহী কমিটির সদস্য তালুকদার রুমি। তিনি  বলেন, আমি সাংবাদিক নেতা। আমি তালুকদার রুমি। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী সদস্য। আমি দু’টি পত্রিকার সম্পাদক। অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে পল্টন থেকে পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ আমাকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করেছে। আমার নামে কোনো মামলা ছিল না। রাজনৈতিক কারণে আমাকে গ্রেপ্তার করেছে। গাড়ির ভেতরে যত নেতাকর্মী আছেন সব জাতীয়তাবাদী আদর্শের সৈনিক। কারো কোনো অপরাধ নেই। পুলিশ বিনা কারণে সবাইকে গ্রেপ্তার করেছে।  গ্রেপ্তারের কোনো লজিক ছিল না। কোনো মামলা ছাড়াই ধরে আনা হয়েছে। এই অন্যায়ের বিচার একদিন হবে। আমরা এই জালিমের কারাগার থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করে ছাড়বো। সেই সময় আর বেশিদূর নেই।

প্রিজন ভ্যান থেকে ফেনী জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দাউদুল ইসলাম মিনার বলেন, আমরা যুবদল ও ছাত্রদলের ৫ জন একসঙ্গে ছিলাম। আমাদের বেআইনিভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের কোনো কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। হোটেলে ঢুকেই হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এই স্বৈরাচার সরকারের পতন না ঘটানো পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। গ্রেপ্তার করে আমাদের দমানো যাবে না। জয় নিয়েই ঘরে ফিরবো। বেগম জিয়াকে মুক্ত করেই ছাড়বো। 

সরজমিন দেখা যায়, সকাল থেকেই আদালতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সকাল থেকেই থমথমে ছিল ঢাকার আদালত পাড়া।  বেলা ১টা থেকে গ্রেপ্তার বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে একের পর এক প্রিজন ভ্যান আদালতে প্রবেশ করে। তবে সকাল থেকেই গ্রেপ্তার বিএনপি নেতাদের স্বজনরা আদালতের হাজতখানার সামনে ভিড় জমাতে থাকেন। কেউ কেউ গ্রেপ্তারকৃতদের এক নজর দেখতে প্রিজনভানের দিকে উঁকিঝুকি করছিলেন। স্বজনরা ঢাকার কোন থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে তাও জানতে চাইছেন। প্রিজন ভ্যান থেকে উচ্চস্বরে জবাব দিচ্ছেন কেউ কেউ। স্বজনদের অনেকেই হাজতখানার সামনে কান্না করছেন। আইনজীবীর পেছনে ছুটোছুটি করছেন। 

জানা গেছে, আদালতে নেয়া বিএনপি নেতাকর্মীরা পৃথক পৃথকভাবে জামিনের জন্য চেষ্টা করা হয়। তবে ওকালতনামা ও অন্যান্য তথ্যগত সমস্যার কারণে অধিকাংশই জামিন আবেদন করতে পারেনি। যারা জামিন আবেদন করেছেন আদালত তাদের কাউকেই জামিন দেননি। জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে বিএনপি’র মামলা পরিচালনাকারী ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট খায়রুল কবির মানবজমনিকে বলেন, গ্রেপ্তার কেউই জামিন পাননি। অনেকে ওকালতনামাই রেডি করতে পারেনি। আবার যারা পেরেছে তারা আসামিদের সই নিতে পারেনি। কারণ গ্রেপ্তার আসামিদের পরিপূর্ণ তথ্য দেয়া হয়নি। কাগজপত্র ঠিকমতো দেয়নি। সিএমএম ১৩, ২৬, ২৮ ও ২৫ নম্বরে কিছু শুনানি হয়েছে। তবে আদালত কারো জামিন মঞ্জুর করেননি। সব আসামিকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।