অনুসন্ধানে নামছে দুদক পছন্দ হলেই জমি দখলে নিতেন মির্জা আজম

 অনুসন্ধানে নামছে দুদক পছন্দ হলেই জমি দখলে নিতেন মির্জা আজম

প্রথম নিউজ, ঢাকা : ময়লার ভাগাড় কিংবা পতিত জমি পছন্দ হলেই তার। পেশিশক্তি আর দলীয় প্রভাব খাটিয়ে একের পর জমি দখলের অভিযোগ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের বিরুদ্ধে।

নবম থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মির্জা আজমের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ সংসদ সদস্যের সম্পদ ১৫ বছরে বেড়েছে ১২২ গুণ।

মির্জা আজমের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গোয়েন্দা শাখা। ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগের ভিত্তিতে মির্জা আজমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করতে যাচ্ছে দুদক।

 পেশিশক্তি আর দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জমি দখলের অভিযোগ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা এ সংসদ সদস্যের সম্পদ গত ১৫ বছরে বেড়েছে ১২২ গুণ।

মির্জা আজমের জন্ম জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জে। ১৯৮০ সালে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে একই কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। ওই সময় থেকে শুরু করেন ব্যবসা এবং সম্পৃক্ত হন রাজনীতিতে। তখন বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সরকারি বরাদ্দের চাল-গমের ডিও কিনে সরকারি-বেসরকারি মিল মালিক, ব্যবসায়ী ও সরকারি গুদামে সরবরাহ করতেন।

১৯৭৯ সালে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের ছাত্র সংসদের আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন মির্জা আজম। এরপর ১৯৮১ সালে জামালপুর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, ১৯৮৭ সালে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক, ১৯৯১ সালে জেলা সভাপতি ও ১৯৯৩ সালে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জামালপুর-৩ আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে।

ময়লার ভাগাড় দখল করে বিনোদন ক্লাব, গ্রাম দখল করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কী নেই তার। জামালপুর শহরের পলাশগড় এলাকায় সাড়ে ৪ একর জমিজুড়ে ছিল পৌরসভার ময়লার ভাগাড়। সেই স্থাপনা সরিয়ে পুরো জমি নামমাত্র মূল্যে ২০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয় জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাব লিমিটেডকে। এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মির্জা আজম। জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানু ক্লাবটির কোষাধ্যক্ষ। মির্জা আজমকে খুশি করতে ক্লাবের উন্নয়নকাজের জন্য পৌরসভার সাবেক মেয়র ছানু কয়েক কোটি টাকার প্রকল্প দেন। প্রকল্পের আওতায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ক্লাবের সীমানা প্রাচীর, নিজস্ব রাস্তা ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। প্রকল্প দিয়েছে জেলা পরিষদও। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ক্লাবটি চালু হয়। রিক্রিয়েশন ক্লাবের সদস্য হওয়ার জন্য গুনতে হতো ৫ লাখ টাকা। দলের প্রভাবশালী অনেক নেতা-কর্মী ক্লাবটির সদস্য। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্লাবটি জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ লোকজন।

    জামালপুরে দেউরপাড় চন্দ্রা এলাকার প্রায় ২৬ শতাংশ জমি দখল করে স্ত্রীর নামে করেছেন আলেয়া গার্ডেন নামের একটি রিসোর্ট। স্থানীয়ভাবে যা ‘রং মহল’ নামে পরিচিত।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্লাবের প্রাচীরের কারণে বন্ধ হয়েছে ২০ হাজার মানুষের চলাচলের রাস্তা। আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের এখন দীর্ঘ পথ ঘুরে শহরে যাতায়াত করতে হয়। সম্প্রতি এসব গ্রামের বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে রিক্রিয়েশন ক্লাব বন্ধ এবং সড়কটি খুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধনও করেন। পরে তারা দেয়াল ভেঙে চলাচলের রাস্তা উন্মুক্ত করেন।

তারা আরও অভিযোগ করেন, ময়লার ভাগাড় সরিয়ে ২০২১ সালে জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাব নামে ভিআইপি বিনোদন ক্লাবটি গড়ে তোলেন মির্জা আজম। এ কাজে তাকে সাহায্য করেন জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানু। এই ছানু আবার আজমের স্ত্রী আলেয়া আজমের ভাতিজিজামাই।

জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন জাগো নিউজকে বলেন, মির্জা আজম সরকারি বরাদ্দের চাল দোকানে দোকানে সরবরাহ করতেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। এরপর থেকেই শুরু হয় তার দখল-অনিয়ম। যে জায়গা পছন্দ হতো, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দখলে নিতেন।

ওয়ারেছ আলী মামুন আরও জানান, ক্লাবটির সঙ্গে পৌরসভার কোনো স্বার্থসংশ্লিষ্টতা নেই। কাজেই পৌরসভার জায়গাটি এভাবে দিতে পারে না। এই প্রাচীরের কারণে হাজারও লোকের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে।

জামালপুরে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলেন মির্জা আজম। ছবি: সংগৃহীতজামালপুরে শেখ ফজিলাতুন্নেছা

২০১৩ সালে জামালপুর শহরের নয়াপাড়া পাঁচরাস্তা মোড় এলাকায় গড়ে তোলা হয় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৯ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় নাওভাঙ্গাচর এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মির্জা আজম। এ কাজের জন্য তিনি নাওভাঙ্গাচরের দেড় শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙে জোরপূর্বক জমি দখল করেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

    ২০১৩ সালে জামালপুরে গড়ে তোলা হয় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৯ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় নাওভাঙ্গাচর এলাকায় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মির্জা আজম। এ কাজের জন্য তিনি নাওভাঙ্গাচরের দেড় শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙে জোরপূর্বক জমি দখল করেছেন বলে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।

গত ২০ আগস্ট মির্জা আজমের বিচার ও দখল হওয়া জমি ফেরত পেতে মানববন্ধন করেন নাওভাঙ্গাচরের মানুষ। তাদের অভিযোগ, জোর করে জমি দখল করেন মির্জা আজম। তার সহযোগী ছিলেন সাবেক পৌর মেয়র ছানোয়ার হোসেন।