১০ সেকেন্ডে হাত-পা বেঁধে ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে ৩৬ লাখ টাকা লুট

দিনে-দুপুরে ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি

১০ সেকেন্ডে হাত-পা বেঁধে ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে ৩৬ লাখ টাকা লুট

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ইসরাত ফ্যাশনের এমডি জাকির হোসেন। গত বছরের ৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের রুপসার একটি ব্যাংকের ব্রাঞ্চ থেকে ১০ লাখ টাকা উঠান। গাড়িতে ছিল তিন লাখ টাকা। আরও ২৩ লাখ টাকা উঠান যমুনা ব্যাংকের সাব ব্রাঞ্চ থেকে। যৌথভাবে একটি জমি কেনার জন্য মোট ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যাওয়ার পথে ডেমরার সুলতানা কামাল ব্রিজের উপরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ধারী ডাকাতদের খপ্পর পড়েন তিনি। গাড়িতে থাকা ভাগ্নেসহ ব্যবসায়ী জাকিরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সবগুলো টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। হাত-পা বেঁধে তাদের পূর্বাচলে ফেলে চলে যায় ডাকাত দল।

সেসময় ব্যবসায়ী জাকির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দিনের বেলায় কেউ পেছন থেকে ফলো করবে ভাবিনি। আমার সঙ্গে ভাগনে ছিল। একটি জমি যৌথভাবে কেনা ও রেজিস্ট্রেশনের জন্য ঢাকায় যাচ্ছিলাম। ডেমরার সুলতানা কামাল ব্রিজের উপরে থাকা অবস্থায় পেছন থেকে ফলো করে আসা ঢাকাগামী একটি কালো রঙের গাড়ি আমাদের গতিরোধ করে। সামনে দাঁড়িয়ে ওয়াকি-টকি, পিস্তল হাতে দেখে গাড়ি থেকে নামায়। নামার মাত্র ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে আমাকেসহ ভাগ্নের হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলা হয়।

আমাদের গাড়িতেই তারা আমাদের জিম্মি করে বিভিন্ন সড়ক ঘোরঘুরি শুরু করে। গাড়িতে কত টাকা আছে জানতে চায়। ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার সব হাতিয়ে নেওয়ার পর বিকেল ৫টার দিকে পূর্বাচল বাণিজ্য মেলা সংলগ্ন সারুলিয়া এলাকায় রাস্তার পাশে হাত-পা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় আমাদের ফেলে চলে যায়।

পরবর্তীতে স্থানীয়দের কথামতো এলাকার নাম জেনে নিজ এলাকায় যাই। এরপর ডেমরা থানায় মামলা দায়ের করি। মামলা দায়েরের পর ছায়া তদন্ত ও ডাকাত দলের সন্ধানে নামে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগ। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি হতে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা অভিযানে রাজধানীর ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী থানা এলাকা এবং পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ডাকাত দলের দুই সদস্য আবুল কাশেম ওরফে জাহিদ (৪৫) এবং মোস্তাফিজুর রহমানকে (৩৯) গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।

আবুল কাশেমের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস এবং তিনটি গাড়ি, একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। তবে লুণ্ঠিত টাকার মাত্র ২০ হাজার টাকা উদ্ধারে সমর্থ হয় ডিবি পুলিশ। দুই সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবির কর্মকর্তারা।

জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, ধরা পড়ার ভয়ে ডাকাত দল ডাকাতির টাকা যাতে ফেরত দিতে না হয় বা নষ্ট না হয় সেজন্য ইনভেস্ট করে। ডাকাতির টাকায় তারা কিনেছে গাড়ি ও জমি। ডাকাতির টাকায় কেনা গাড়ি ব্যবহার করে আবার নামে ডাকাতিতে।

এ ব্যাপারে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার(ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদেশ থেকে আসা কোনো ব্যক্তি বা কোনো নতুন গাড়ি আসলে বা কেউ ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করলে, জমি বিক্রি করলে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে টাকা, স্বর্ণালংকার লুণ্ঠনের অভিযোগ আসে। এরকমই একটি অভিযোগ করেন একজন ব্যবসায়ী।

অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করতে গিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান (৩৯) ও আবুল কাশেম ওরফে জাহিদ (৪৫) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করি। মোস্তাফিজের নামে পাঁচটি মামলা, কাশেমের নামে তিনটি। এসব ডাকাতি ও অস্ত্র মামলায় একাধিকবার তারা জেলে গেছে।

গ্রেপ্তার দুজন গতকাল সোমবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে উল্লেখ করে হারুন বলেন, টাকার খুব একটা অংশ আমরা উদ্ধার করতে পারিনি। তখন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, ডাকাতির ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় তারা কি করেছেন? জিজ্ঞাসাবাদে ও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে তারা বলেছে, দুজনের নেতৃত্ব একটি ডাকাত দল দীর্ঘ কয়েক বছর দরে ডাকাতি পেশায় জড়িত। তারা ধরা পড়ার ভয়ে ডাকাতির টাকা নষ্ট বা বণ্টন না করে ইনভেস্ট করে। তারা তিনটা গাড়ি কিনেছে, একটা মোটরসাইকেল কিনেছে।

তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস এবং পটুয়াখালী জেলার মহিপুর থানা এলাকা হতে ডাকাতির লুণ্ঠিত টাকায় কেনা একটি অ্যাম্বুলেন্স, একটি প্রাইভেটকার, একটি মাইক্রোবাস এবং একটি মোটরসাইকেল উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়। হারুন অর রশীদ বলেন, ডাকাতিকালে ব্যবসায়ী জাকিরকে কবজা করে টাকা সব লুণ্ঠনের পর হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে ছবি তুলে। কাউকে না জানানোর হুমকি দিয়ে বলে তুমি যে অস্ত্রবাজ এই ছবি প্রকাশ করব। তুমিই হবে তখন অস্ত্রবাজ ডাকাত। একই সঙ্গে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করা হয়।

হারুন বলেন, এর আগেও এয়ারপোর্ট ফ্লাইওভারের ওপর ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সেখান থেকেও আমরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলকে গ্রেপ্তার করেছিলাম। এ ধরনের ঘটনায় প্রথম কাজ হচ্ছে ডিবি পুলিশকে অবহিত করার আগে থানায় অবহিত করা, জিডি বা মামলা করা। তাহলে পুলিশের পক্ষে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতিতে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা সম্ভব।