হামলা-মামলায় জর্জরিত ৩৫ প্রত্যাশীদের আন্দোলন

প্রায়শই পালন করছেন নানা কর্মসূচি মহাসমাবেশ থেকে শুরু করে মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন তারা।

হামলা-মামলায় জর্জরিত ৩৫ প্রত্যাশীদের আন্দোলন

প্রথম নিউজ, অনলাইন: সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছেন একদল চাকরিপ্রত্যাশী। প্রায়শই পালন করছেন নানা কর্মসূচি মহাসমাবেশ থেকে শুরু করে মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। এই আন্দোলন চালিয়ে নিতে নানা সময় হয়েছেন হামলার শিকার। মাথায় মামলার বোঝা নিয়েই চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলন। গত বছর এক শিক্ষার্থী আন্দোলনে জনসম্মুখে বিষপান পর্যন্ত করেন। এ ছাড়াও এক আন্দোলনকারী পোড়ান সার্টিফিকেট। আন্দোলনের মাঝে হঠাৎ আলোচনায় ঘি ঢালেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি আন্দোলনকারীদের পক্ষে সুপারিশ করেন। এনিয়ে আলোচনা হয় সংসদেও। তবে আন্দোলনকারীদের পক্ষে মত দেননি জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, আপাতত বয়সসীমা বাড়ানোর চিন্তা নেই সরকারের।  

গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মহাসমাবেশের ডাক দেয় ‘চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদ’। এই সমাবেশ শেষে দাবি সম্বলিত চিঠি নিয়ে গণভবনে যাওয়ার সময় পুলিশের বাধার সম্মুখীন হন। এরপর শাহবাগ অবরোধ করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেয় তাদের। এরপর ১৩ জনকে আটকসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখপূর্বক ৫০০ জনের নামে মামলা দেয়া হয়। এর আগে ২০২৩ সালেও কারাগারে যেতে হয়েছিল আন্দোলনকারীদের। শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করার জেরে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেই মামলার রেশ এখনো রয়েছে। তারা নিয়মিত দিয়ে যাচ্ছেন হাজিরা। আন্দোলনকারীদের ভাষ্যমতে সাতবার তারা পুলিশের লাঠিচার্জের শিকার হয়েছেন। তারা বলছেন এরমধ্যে তিন থেকে চারবার বেধড়ক মারধর করা হয় তাদের। তারা বিভিন্ন দেশের চাকরিতে প্রবেশের বয়সের সীমা উল্লেখ করে বলেন, গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সীমা বৃদ্ধি করা উচিত। সেইসঙ্গে তারা আওয়ামী লীগের ইশতেহারে উল্লেখিত বয়স বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনায় আনার দাবি জানান।

আন্দোলনকারীদের ভাষ্য অনুযায়ী কর্মসূচিতে লাঠিচার্জ করা হয় ২০২২ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর। এদিন শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করেছিলেন তারা। এ সময় পুলিশ লাঠিপেটা করে তাদের সরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে শাহবাগ ছাড়ার জন্য আন্দোলনকারীদের বলা হয়। এরপরও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় সরিয়ে দেয়া হয় তাদের। হামলা হয়েছিল গত বছরের ১০ই জুন। এদিনও আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে অবস্থান করছিলেন। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই মোড়টিতে দীর্ঘ সময় অবস্থানের পর তাদের সরাতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। আন্দোলনকারীরা জানান, ৩০ থেকে ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ১০ আন্দোলনকারীকে আটক করে পুলিশ। 

সবশেষ গত শনিবার আন্দোলনকারীদের লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেয়া হয়। আন্দোলনকারীরা জানান, লাঠিচার্জে তাদের বেশকিছু সদস্য আহত হয়েছেন। নারীদের ওপরও হামলার অভিযোগ তোলেন তারা। সেময় ১৩ জনকে আটক করা হয়। যার মধ্যে ৩ জন নারী সদস্য ছিলেন। এরপরও পুলিশের পক্ষ থেকেই একই বক্তব্য দেয়া হয়। বলা হয়, সড়ক অবমুক্ত করতেই সরিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের। মামলার এজহারে বলা হয়, অবৈধভাবে সড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ ও সরকারি কাজে বাধা, আত্মহত্যার হুমকিসহ ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা হয়। এসআই এসএম এলিস মাহমুদ বাদী হয়ে এ মামলা করেন। 

গত শনিবারের হামলার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। ‘চাক‌রি‌তে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদ’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে জয়ন্ত রায় লেখেন, জনগুরুত্বপূর্ণ একটি অরাজনৈতিক আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য কতো যে মাস্টারপ্ল্যান হয়েছে তা সাধারণ মানুষের কল্পনার বাইরে। সুন্দর সুন্দর আশাব্যঞ্জক কথা বলে গাছে তুলে দিয়ে পরে মইটা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সুন্দর সুন্দর কথা বলার কারণ হলো আন্দোলনটা যেন তাদের বিপক্ষে না যায়। আন্দোলনের ঠিক আগে বিসিএস পরীক্ষার রেজাল্ট এবং আন্দোলনের পরদিন এসএসসি’র রেজাল্ট দেয়ার কারণ কি সেটা বুঝতে হলে সুপার জিনিয়াস হওয়ার প্রয়োজন নেই। দেশটা এখন চাটুকারে ভরে গেছে। সরকারি লোকজনও এখন তাদের ওপর মহলে সুবিধা পাওয়ার জন্য তিলকে তাল বানিয়ে রিপোর্ট প্রেরণ করছে। দেশের কর্তা ব্যক্তিদের হাতে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি প্রত্যাশীদের নিয়ে যে রিপোর্ট সমীক্ষাগুলোকে পাঠানো হচ্ছে তা কিন্তু মাঠ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের হাত থেকে অনেক হাত ঘুরে ঘুরে সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছাচ্ছে এবং প্রতিটা হাত বদলের সময় বিষয়টি তিল থেকে একসময় তালে বা তাল থেকে তিলে পরিণত হয়ে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছাচ্ছে।

হ্যাপি আক্তার নামে আরেক আন্দোলনকারী বলেন, আমার বোনের অপরাধটা কি বলুন তো? আমার বোন চেয়েছিল চাকরির আবেদনের বয়সসীমা যেন ৩৫ বছর করা হয় এটাই। সে একটা যুক্তিগত অধিকার দাবি চেয়েছে এটাই কি তার দোষ? আর আমাদের দেশের পুলিশ যারা নাকি জনগণের বন্ধু। একটা পুরুষ পুলিশের কি এটা করা ঠিক হয়েছে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আন্দোলনকারী বলেন, হ্যা আন্দোলনে অর্থের প্রয়োজন হয়। এই অর্থ আমরা নিজেদের মধ্যে থেকে সংগ্রহ করে থাকি। আমাদের আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের সদস্য ও শুভাকাক্সক্ষীরা এই অর্থ দিয়ে থাকেন। তিনি আরও বলেন, অনেক ছাত্রলীগ নেতাও আমাদের পক্ষে সমর্থন দিয়ে আসছেন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তারা প্রকাশ্যে কথা বলেন না।

আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে চাক‌রি‌তে আবেদ‌নের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক শরিফুল হাসান শুভ বলেন, আমরা সবসময় হামলার ভয় ও মামলার শঙ্কা নিয়েই আন্দোলন করে আসছি। আমরা নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছি সেইসঙ্গে আন্দোলনও চালিয়ে যাচ্ছি। হামলাগুলোয় আমাদের দু’জন সহযোদ্ধা গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তাদের দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। একাধিকবার আমাদের থানা থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আমার নামেও মামলা চলমান। নিয়মিত হাজিরা দিতে হয়। কিন্তু আমরা দাবি আদায়ে অবিচল। আমাদের যৌক্তিক এই আন্দোলন চলমান থাকবে। আমরা আমাদের দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরবো।