জাতীয় স্টেডিয়াম: গোঁজামিলে চলছে ১৬০ কোটি টাকার কাজ

প্রথম নিউজ, খেলা ডেস্ক: ক্রীড়াঙ্গনের প্রাণকেন্দ্রখ্যাত জাতীয় স্টেডিয়াম। পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর কিংবা দক্ষিণ—যে ফটক দিয়েই স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সে প্রবেশ করুন না কেন, রুগণ চিত্র চোখে পড়বেই। বাইরে জরাজীর্ণ অবস্থা, খানাখন্দে ভরা পথ মাড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করলে হয়তো আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে। ঝকঝকে নতুন অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক, গ্যালারিতে বাহারি রঙের চেয়ার, নতুন করে নির্মাণ করা শেড, যত্নের ছোঁয়া পাওয়া প্রেসবক্সকে স্টেডিয়ামের বাইরের চিত্রের সঙ্গে কিছুতেই মেলাতে পারবেন না। এ চাকচিক্যের আড়ালেই থাকছে রুগণদশা। বড় হাঁকডাক দেওয়া হলেও মাঠের অবস্থার খুব বেশি উন্নতি করা যায়নি। ঘাস নিয়ে একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা চলছে এখনো। ফ্লাডলাইটকে টেনেটুনে পাস মার্ক পাওয়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে ফিফা স্বীকৃত ভেন্যুর ন্যূনতম মানদণ্ড দাঁড় করানো যায়। বাইরের অংশে চাকচিক্য থাকলেও বিপুল সমাগমে দর্শকদের প্রবেশ ও বের হওয়ার ব্যবস্থাকে নির্বিঘ্ন করা যায়নি। স্টেডিয়াম মার্কেটের দোকানিদের দৌরাত্ম্যে বিভিন্ন ফটকে আগের ঘিঞ্জি অবস্থাই বিদ্যমান। বাহ্যিক চাকচিক্য দেখার পর স্টেডিয়ামের বিভিন্ন সুবিধার গভীরে প্রবেশ করলে ওপরের প্রবাদটা আবার ঠিকভাবেই পড়তে হবে—‘ওপরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট’।
সংগত কারণেই প্রশ্ন আসছে, দীর্ঘ চার বছরে প্রায় ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে কী সংস্কার হলো এ ভেন্যুতে! ঐতিহ্যবাহী এ ভেন্যু সংস্কারে যে সময় ব্যয় হয়েছে, তার এক বছরের কম সময়ে সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কথা ক্যাম্প ন্যু-এর। চলমান সংস্কার কাজ শেষে দর্শক ধারণক্ষমতার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও স্টেডিয়ামকে টপকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ স্টেডিয়ামের মর্যাদা পাবে বার্সেলোনার হোম গ্রাউন্ড। দর্শক ধারণক্ষমতা ৯৯ হাজার ৩৫৪ থেকে ১ লাখ ৫ হাজারে উন্নীত করা হচ্ছে। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধায় এ ভেন্যুকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে; যা বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল ভেন্যুর মর্যাদা পাবে।
অথচ ২০২১ সালে কাজ শুরুর পর জাতীয় স্টেডিয়াম নিয়ে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে কাজ শেষে এ ভেন্যু ব্যবহারের সুযোগ পেলেই যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কর্মকর্তারা। সম্প্রতি ভেন্যুতে আন-অফিশিয়াল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন একাধিক বাফুফে কর্মকর্তা। স্টেডিয়ামের মালিকানা প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) কর্মকর্তারা চাচ্ছিলেন আরও কিছুদিন পর যাতে পরিদর্শনে যান বাফুফে কর্মকর্তারা। চলমান সংস্কার কাজের বড় অসংগতি দেখে না আবার লজ্জায় পড়তে হয়—হয়তো এ কারণেই আরও কিছুদিন পর পরিদর্শনের পরামর্শ দিয়েছিলেন স্থানীয় ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক সংস্থার কর্মকর্তারা।
দীর্ঘ প্রায় চার বছরের কর্মযজ্ঞেও ম্যাচ কমিশনারের কক্ষ প্রস্তুত করা যায়নি। এখনো চলছে ফ্লাডলাইট সংক্রান্ত কাজ। মাঠে কয়েক দফা ঘাস লাগানোর কাজ হয়েছে। তাতেও অবস্থা আশানুরূপ হয়নি। এ কারণে এখনো চলছে বাফুফের তত্ত্বাবধানে ঘাস বিন্যাসের কাজ। এ ভেন্যুতেই এএফসি এশিয়ান কাপের প্রথম হোম ম্যাচ আয়োজনের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে বাফুফে। ১০ জুন সিঙ্গাপুরকে আতিথ্য দেওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের।
‘এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের পরবর্তী ম্যাচ আমরা জাতীয় স্টেডিয়ামে আয়োজন করতে চাই। এ ভেন্যুতে এখনো ছোটখাটো কিছু কাজ বাকি রয়েছে। প্রয়োজনে সেগুলো আমরা নিজস্ব উদ্যোগে করে নেব’—কালবেলাকে বলছিলেন বাফুফে সহসভাপতি ফাহাদ করিম। সংস্কার কাজের গুরুত্বপূর্ণ খাত ছিল ফ্লাডলাইট। এ জন্য প্রথমে বাজেট ধরা হয়েছিল ১৩ কোটি টাকা, পরে সেটা ৪০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে; কিন্তু গোঁজামিলে ফ্লাডলাইট স্থাপন করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ফাহাদ করিম বলছিলেন, ‘অত্যাধুনিক ফ্লাডলাইট তো পাচ্ছি না। আমরা এনএসসি কর্মকর্তাদের বলেছি, ফ্লাডলাইট যাতে ফিফার মানদণ্ড অনুযায়ী হয়। আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, সেভাবেই কাজ করা হচ্ছে।’
দীর্ঘ ‘সংস্কারযজ্ঞ’ ভেন্যুর ভেতরের অবস্থায় চাকচিক্য আনলেও বাইরের বিষয়ে উদাসীন মালিকানা প্রতিষ্ঠান এনএসসি। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ ক্রীড়া স্থাপনার ভেতরে-বাইরের বিপরীত চিত্র সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চলমান সংস্কার কাজে জড়িত এনএসসির ইঞ্জিনিয়ার কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘ভেন্যুর বাইরের চিত্রটা বড্ড করুণ। বিদেশি যে কোনো দল এখানে এ স্টেডিয়ামে এলে প্রথমে ধাক্কা খাবে। বাইরের চিত্রটা পরিবর্তন করা জরুরি।’ শুধু বাইরের চিত্র নয়, ঢেলে সাজানো উচিত ছিল স্টেডিয়ামের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও। বাজেট সেভাবেই করা হয়েছিল; কিন্তু আদতে কাজের কাজ কতটুকু হলো—বোঝা যাবে ভেন্যু ব্যবহারের পর।