সারাদেশে হাড় কাঁপানো শীত: বাড়তে পারে রাতের তাপমাত্রা
টানা তিনদিনের শৈত্যপ্রবাহ এবং ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন
প্রথম নিউজ, ঢাকা: শীতের তীব্রতা হু হু করে বাড়ছে। সারাদিন বইছে কনকনে ঠান্ডা বাতাস, সেই সঙ্গে হাড় কাঁপানো শীত। টানা তিনদিনের মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। তাপমাত্রা ফের বৃদ্ধির ধারায় ফিরতে পারে। এতে ক্রমান্বয়ে শীত কমে যেতে পারে। রোববারও দেশের ১২ জেলা, এক উপজেলা ও দুই বিভাগে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
আজ রোববার সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি থেকে কিছুটা বেড়ে হয়েছে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শুক্রবার থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়। পরের দিন শৈত্যপ্রবাহের আওতা আরও বাড়ে। তবে একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে রাতের এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। আগামী তিনদিন তাপমাত্রা বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। তিনি আরও জানান, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাঙ্গামাটি, ফেনী, মৌলভীবাজার, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল এবং ভোলা জেলা ও সীতাকুণ্ড উপজেলাসহ রংপুর এবং রাজশাহী বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক। উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
এদিকে শৈত্যপ্রবাহ এবং ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তিস্তাপাড়ের জেলা লালমনিহাটের মানুষের জীবন। প্রচণ্ড শীতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের চলাফেরা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আবার শীতের প্রকোপে বেড়েছে হাঁপানি, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এসব সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
আজ রোববার (৩০ জানুয়ারি) বেলা ১১টা পর্যন্ত কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে জেলার অধিকাংশ এলাকা। মাঝে-মধ্যে সূর্য উঁকি দিলেও ঝলমলে রোদের দেখা মিলছে না। ফলে কনকনে ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।
সকাল ৯টায় কুড়িগ্রাম রাজারহাট উপজেলার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, লালমনিরহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে, লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার তিস্তা, ধরলা তীরবর্তী এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ কয়েক দিন থেকে কাজকর্ম না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় সাধারণ মানুষের শীতের কাপড় না থাকায় খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। মহাসড়কগুলোতে হেডলাইড জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।
হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল জানান, তিস্তা নদীবেষ্টিত এ ইউনিয়নে শীতের তীব্রতা বেশি। সরকারি ও ব্যক্তিগতভাবে এলাকায় প্রায় পাচঁশো শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় জানান, হাঁপানি, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ উপজেলায় ৯০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন ৩০ জন। তবে শীতের তীব্রতা বাড়ায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: