স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের সুদ বাড়ল
আমদানির বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রায় নেওয়া এসব ঋণের বিপরীতে সুদহার বেড়েছে দশমিক ৫০ শতাংশ।
প্রথম নিউজ, অনলাইন : আমদানির বিপরীতে বাণিজ্যিক অর্থায়নের জন্য স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের সুদ হারের সর্বোচ্চ সীমা বৃদ্ধি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন মুদ্রার সুদ হারের করিডোরের সঙ্গে আরও সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ যোগ করে এখন ঋণ নেওয়া যাবে। আগে যোগ করা যেত সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ শতাংশ। আমদানির বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রায় নেওয়া এসব ঋণের বিপরীতে সুদহার বেড়েছে দশমিক ৫০ শতাংশ। ডলার সংকট নিরসন ও বাজারে এর প্রবাহ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই বিধান অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের জানানোর জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সূত্র জানায়, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেড় বছর ধরে সুদহার বাড়াচ্ছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সব ধরনের ঋণের সুদহার দশমিক ৫৪ শতাংশ করে বেড়েছে। ফলে ব্যাংকে সাধারণ ঋণের সর্বোচ্চ সুদ ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ, ভোক্তা ঋণে ১৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ, পল্লী, কৃষি ও রপ্তানি ঋণে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ সুদ দিতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণ ঋণে সর্বোচ্চ সুদ হবে ১৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং ভোক্তা ঋণে ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আমানত সুদ দিতে হবে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। তবে ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদ হারের কোনো সীমা নেই। ফলে ব্যাংকগুলো নিজস্ব বিবেচনায় আমানতের বিপরীতে সুদ দিতে পারবে। স্থানীয়ভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদহার বাড়ানোর এক দিন পরেই স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের সুদ বাড়ানো হয়েছে দশমিক ৫০ শতাংশ।
আগে যুক্তরাজ্যের মুদ্রা বাজারে চালু লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেটকে (লাইবর) ভিত্তি ধরে ঋণের সুদ হার নির্ধারিত হতো। করোনার পর থেকে লাইবর রেটে যথেষ্ট অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এ কারণে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে লাইবর রেটকে খুব কম ভিত্তি সুদ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। লাইবরের স্থান দখল করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা বাজারে চালু হওয়া সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (সোফর)। এছাড়া সীমিত আকারে প্রচলিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুদ্রা বাজারে চালু হওয়া ইউরো ইন্টার ব্যাংক অফার রেট (ইউরিবোর)। এসব বাজারে ৬ মাস মেয়াদি ইউরো, পাউন্ড বা ডলার বন্ডের গড় সুদের হারের সঙ্গে নির্ধারিত সুদ যোগ করে স্বল্পমেয়াদি ঋণের সুদ নির্ধারণ করা যাবে। আগে সোফরের সঙ্গে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ শতাংশ যোগ করে ঋণের সুদ নির্ধারিত হতো। এখন যোগ করা যাবে ৪ শতাংশ। এ খাতে সুদহার বাড়বে দশমিক ৫০ শতাংশ। এছাড়া বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন মুদ্রার সুদহারও বেড়েছে। এসব কারণে সুদ হার দশমিক ৫০ শতাংশের বেশি বাড়বে।
বর্তমানে মার্কিন মুদ্রা বাজারে ৬ মাস মেয়াদি ডলার বন্ডের সোফর রেট ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ। এর সঙ্গে ৪ শতাংশ যোগ করলে সুদহার দাঁড়াবে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। ইউরোপীয় মুদ্রা বাজারে ইউরিবোর রেট এখন ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এর সঙ্গে আরও ৪ শতাংশ যোগ করলে সুদহার দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
যুক্তরাজ্যের মুদ্রা বাজারে লাইবর রেট এখন ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এর সঙ্গে ৪ শতাংশ যোগ করলে সুদ দাঁড়াবে ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আগে স্বল্পমেয়াদি ঋণ পাওয়া যেত সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে। এখন গড়ে সুদহার ৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
এদিকে সুদহার বাড়ায় আমদানি খরচ বাড়বে। ফলে আমদানি পণ্যের দামও বাড়বে। এর প্রভাবে বাড়বে অন্যসব পণ্যের দাম। ডলারের পাশাপাশি স্থানীয় মুদ্রায় ঋণের সুদও বাড়ানো হয়েছে। এতে আমদানির জন্য এলসি খুলতে নেওয়া ঋণের খরচ বাড়বে। এর প্রভাবেও আমদানি ব্যয় ও পণ্যের দাম বাড়বে। অর্থাৎ ডলার ও টাকা দুদিক থেকেই সুদহার বাড়ানোর প্রভাব পড়বে পণ্যের দামে। বেড়ে যাবে ব্যবসা খরচ। এসব মিলে সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির হারে চাপ বাড়বে।
সূত্র জানায়, বৈদেশিক ঋণের সুদহার বাড়ার কারণে এখন কম হারে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে দেশে এখন আমদানিতে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের প্রবাহ কমে গেছে। এতে ডলারের সংকট আরও বেড়েছে। বৈদেশিক ঋণের প্রবাহ বাড়িয়ে ডলার সংকট নিরসনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ঋণের সুদ বাড়িয়েছে। ফলে উদ্যোক্তারা আমদানিতে বাড়তি ঋণ পাবেন। এতে নগদ ডলারের তাৎক্ষণিক চাহিদা কমবে। ফলে ডলারের ওপর চাপও কমে যাবে।