রাশিয়ায় যোগ দিতে গণভোট চলছে ইউক্রেনের চার অঞ্চলে, দেশ ছাড়ছেন রুশরা

এই ভোটকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্ব।

রাশিয়ায় যোগ দিতে গণভোট চলছে ইউক্রেনের চার অঞ্চলে, দেশ ছাড়ছেন রুশরা
রাশিয়ায় যোগ দিতে গণভোট চলছে ইউক্রেনের চার অঞ্চলে, দেশ ছাড়ছেন রুশরা

প্রথম নিউজ, ডেস্ক: রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের চার অঞ্চলে গণভোট শুরু হয়েছে। আগামি পাঁচ দিন এই ভোট চলবে। এতে স্থানীয়রা ভোট দিয়ে জানাবেন যে, তারা রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে চান কি চান না। এই ভোটকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্ব। ধারণা করা হচ্ছে, এই ভোটের পরই ইউক্রেনের এই অংশগুলোকে নিজের সঙ্গে যুক্ত করে নেবে রাশিয়া। বিবিসি জানিয়েছে, যে চারটি অঞ্চল লুহানস্ক, খেরসন, দনেতস্ক ও জাপোরিঝিয়ায় ভোট হচ্ছে তার দু’টি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় এবং দু’টি দক্ষিণাঞ্চলীয়। এগুলো এখনই রাশিয়ার সেনাদের অধীনে রয়েছে। এগুলো রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হলে আনুষ্ঠানিভাবে এটাই হবে রাশিয়ার সীমান্ত। ফলে ইউক্রেনের এ অংশে কোনো হামলা হলে তাকে রাশিয়া নিজের উপরে হামলা বলে দাবি করতে পারবে এবং সেই অনুযায়ী পাল্টা জবাবও দিতে পারবে। এতে যুদ্ধ আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।  সাত মাস ধরে চলা যুদ্ধের প্রথম অংশে ইউক্রেনে বেশ ভালো সফলতা পেয়েছে রাশিয়া। তবে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে বেশ কিছু এলাকা পুনরায় দখলে নিতে সক্ষম হয় ইউক্রেন।

গত এক সপ্তাহ ধরে যদিও দুই পক্ষের অগ্রগতিই থমকে আছে। তবে ইউক্রেনের হাতে জায়গা হারানো নিয়ে ব্যাপক চাপে রয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অনেক রাশিয়ানই আশঙ্কা করছেন যে, ইউক্রেন হয়তো গুরুত্বপূর্ণ লুহানস্ক অঞ্চলও দখল করতে শুরু করবে। তাই পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই গণভোট আয়োজন করছে রুশপন্থীরা। এতে করে রাশিয়া আরও শক্তি নিয়ে ইউক্রেনের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে পারবে এবং প্রয়োজনে নতুন নতুন অঞ্চল দখলে নিতে পারবে। 

যেসব অঞ্চলে ভোট হচ্ছে তা ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের ১৫ শতাংশ। এগুলো রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হলে রাশিয়া এর নিরাপত্তায় আরও পদক্ষেপ নিতে পারবে। ইউক্রেন যদি পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার করে এখানে আক্রমণ করে, তাহলে রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলোকেও টার্গেট করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। রাশিয়া আরও তীব্র সংঘাতের প্রস্তুতিও নিয়েছে। ইউক্রেনের রুশপন্থী অঞ্চলগুলো থেকে নির্বাচনের ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গেই রিজার্ভ সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এছাড়া ইউক্রেনে আরও সেনা পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। 

পুতিনের এই ঘোষণার পর অনেক রাশিয়ানই দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। দেশত্যাগের জন্য রাশিয়ার সীমান্তে দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, তাদেরকেও যুদ্ধে ডাকা হতে পারে। যদিও ক্রেমলিন বলছে, যুদ্ধ করতে সক্ষম ব্যক্তিরা দেশ ত্যাগ করছে বলে যেসব খবরা-খবর প্রকাশিত হচ্ছে সেগুলো অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে। রাশিয়ার সাথে জর্জিয়ার সীমান্তে দেখা যায় গাড়ির সারি কয়েক মাইল পর্যন্ত দীর্ঘ হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বিবিসিকে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘোষণা পরপরই তিনি শুধু পাসপোর্ট সাথে নিয়ে দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে বর্ডারের দিকে রওনা দেন। তিনি কোন জামা-কাপড়ও নেননি। সে ব্যক্তি আশংকা করছেন, রিজার্ভ সৈন্য হিসেবে যাদের যুদ্ধে পাঠানো হবে তিনি সে দলে পড়ে যেতে পারেন।

কিছু প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, আপার লারস সীমান্ত চেকপয়েন্টে গাড়ির সারি পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কিছু চালক তাদের গাড়ি সেই দীর্ঘ সারিতে রেখে চলে যাচ্ছেন। রাশিয়ার সাথে জর্জিয়ার সীমান্ত আছে। রাশিয়া থেকে জর্জিয়া যেতে কোন ভিসার প্রয়োজন হয় না। এছাড়া রাশিয়ার সাথে ফিনল্যান্ডের ১,৩০০ কিলোমিটার সীমান্ত আছে। তবে ফিনল্যান্ডে যাবার ক্ষেত্রে রাশিয়ানদের ভিসার প্রয়োজন হয়। ফিনল্যান্ডও বলছে, তাদের সীমান্ত দিয়েও রাশিয়ানদের আসা গতরাতে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সেটি এখনো সামাল দেবার পর্যায়ে আছে।

রাশিয়া থেকে ইস্তাম্বুল, বেলগ্রেড এবং দুবাই যাবার জন্যও অনেকে বিমানের টিকেট কিনেছেন। এসব টিকিটের চাহিদা বাড়ায় দামও বেড়ে গেছে।  কোন কোন গন্তব্যের সব টিকিটিও বিক্রি হয়ে গেছে। এমন সময়ে জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যুদ্ধ এড়িয়ে যেতে যেসব রাশিয়ান দেশ ছাড়ছেন তারা জার্মানিতে স্বাগত। কিন্তু লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া, এস্তোনিয়া এবং চেক রিপাবলিক ভিন্নভাবে কথা বলছে। তারা জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের তারা আশ্রয় দেবে না।

রাশিয়ার কাছ থেকে প্রায় ছয় হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা ইউক্রেন পুনরায় দখল করে নেবার দু'সপ্তাহের মধ্যেই রাশিয়ার তরফ থেকে রিজার্ভ সৈন্য সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হলো। রিজার্ভ সৈন্য তলব করার পর রাশিয়ায় বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভের দায়ে পুলিশ প্রায় ১৩০০ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে। ক্রেমলিনের দাবি পশ্চিমাদের প্রভাবেই এসব আন্দোলন ও বিক্ষোভ হচ্ছে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom