মিয়ানমারে ধ্বংসস্তূপ সরাতেই বেরোচ্ছে একের পর এক লাশ

মিয়ানমারে ধ্বংসস্তূপ সরাতেই বেরোচ্ছে একের পর এক লাশ

প্রথম নিউজ, অনলাইন:   মিয়ানমারের সামরিক সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শনিবার পর্যন্ত সেখানে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা এক হাজার ৬৪৪ জনে। আহত প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ। এখনো অনেকের খোঁজ মেলেনি। ধ্বংসস্তূপ সরাতেই বেরোচ্ছে একের পর এক লাশ।

ভূমিকম্পে তছনছ হয়ে গেছে বাংলাদেশের এই প্রতিবেশী দেশটির বিস্তীর্ণ এলাকা। মৃতের সংখ্যা ১৬০০-র গণ্ডি ছাড়িয়ে গেছে শনিবারই। খবর রয়টার্সের।

এই পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের বিরোধী গোষ্ঠী সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধারকাজ যাতে সুষ্ঠু ভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ। 

জান্তা-বিরোধী পিপল্‌স ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) জানিয়েছে, ৩০ মার্চ থেকে আগামী দু’সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে। এই সময়ের মধ্যে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে উদ্ধারকাজ এবং ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলবে।

মিয়ানমারে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধারের কাজ চলছে। অনেকেই এখনো ধ্বংসস্তূপে আটকে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয় ভূমিকম্পে বিপুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

বহু বাড়ি, মসজিদ এবং অন্যান্য ভবন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মান্দালয়ের অনেক এলাকায় এখনও উদ্ধারকারী দল পৌঁছোতে পারেনি। উদ্ধারকাজে প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতিও সেখানে নেই। শনিবার সেখানে খালি হাতেই ধ্বংসস্তূপ সরানোর মরিয়া চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে অনেককে। 

যারা আটকে আছেন, তাদের বাঁচাতে বহু মানুষ উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন। আমেরিকার জিওলজিক্যাল সার্ভিসের অনুমান, মিয়ানমারে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে ১০ হাজারের গণ্ডি।

শুক্রবার ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে মিয়ানমার। তার পর কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ‘আফটারশক’ হয় ৬.৭ মাত্রার। ওই দিন ১০ ঘণ্টায় পর পর ১৪টি ‘আফটারশক’ হয়।

ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে জাস্তা সরকার। জান্তা সরকারের প্রধান আং লাইং শনিবার মান্দালয়ের বিধ্বস্ত এলাকাগুলি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। 

প্রতিবেশীদের মধ্যে মিয়ানমারে প্রথম সাহায্য পাঠিয়েছে ভারত। শনিবার সকালে ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিমান ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ইয়াংগুন পৌঁছে যায়। প্রথম দফায় ১৫ টন ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে ভারত। আরও চারটি বিমান পাঠানো হতে পারে। 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ড সরকারকে এই কঠিন পরিস্থিতিতে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।

ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত মিয়ানমারে উদ্ধার কাজে সহায়তা দিতে আজ রোববার (৩০ মার্চ) দেশটিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি দল। শনিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

আইএসপিআর বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি ভিত্তিতে ওষুধ, ত্রাণসামগ্রী, উদ্ধার ও মেডিকেল সহায়তা প্রদানের জন্য বিশেষ বিমানে রোববার মিয়ানমারে যাচ্ছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর উদ্ধারকারী দল।

বাংলাদেশ ও ভারতের পাশাপাশি চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, আমেরিকা, ইরান, মালয়শিয়াসহ বহু দেশ সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে। চীন থেকে ৮২ জনের একটি উদ্ধারকারী দলকে পাঠানো হয়েছে মিয়ানমারে। 

সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। মিয়ানমারকে প্রয়োজনীয় সাহায্যের বার্তা দিয়েছেন তিনি। 

দক্ষিণ কোরিয়াও ২০ লাখ ডলারের ত্রাণ পাঠানোর কথা জানিয়েছে।মিয়ানমারে ৪৯ জনের উদ্ধারকারী দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালয়েশিয়া। পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছে ইরান এবং ইন্দোনেশিয়া।

২০২১ সালে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল সামরিক জান্তা সরকার। পিডিএফ সেই থেকে তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে। চার বছর ধরে গৃহযুদ্ধে দীর্ণ এই দেশটির অনেক অংশ বিরোধীদের দখলে। 

সেখানে জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে সেই অংশে উদ্ধারকার এবং ত্রাণসামগ্রী পাঠাতে সমস্যা হচ্ছিল। ওই সব অংশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও এখনো স্পষ্ট হয়নি। পিডিএফ যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।