মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীদের অপ্রয়োজনীয় কথা না বলার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
যার যে দায়িত্ব, যাকে যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তার বাইরে কোনো কথা বলা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রথম নিউজ, অনলাইন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীদের বলেছেন, আপনারা অপ্রয়োজনীয় কোনো কথা বলবেন না। যার যে দায়িত্ব, যাকে যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তার বাইরে কোনো কথা বলা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সম্পৃক্ত সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে সদয় আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে সাধারণ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্র ছাড়া অন্য কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না বলে সতর্ক করেন।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ভেতরে ঢুকে যারা হত্যা, জ্বালাওপোড়াও করেছে, যারা সরকারি সম্পদ ও স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার তেজগাঁও কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন। এদিকে কোটা আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে নিহতদের স্মরণে আজ দেশব্যাপী শোক পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্র জানায়, বৈঠকে দেশের সর্বশেষ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা নানা বিষয় তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী সবার বক্তব্য শোনেন। পরে তিনি মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের যাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সে বিষয় ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে অপ্রয়োজনীয় কথা বলবেন না। নিজ দপ্তরের বাইরের বিষয়ে কথা বলার কোনো প্রয়োজন নেই। শুধু নিজের দায়িত্বটুকু ভালোভাবে পালন করুন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সাধারণ ছাত্ররা ন্যায়সঙ্গত দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলবে। তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি-দাওয়ার বিষয়ে তাদের সঙ্গে সদয় আচরণ করতে হবে। তারা আগামীর ভবিষ্যৎ। তাদের সঙ্গে সব সময় ভালো আচরণ করতে হবে। কোনোভাবে তাদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করা যাবে না। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষে নিহতদের স্মরণে আজ দেশব্যাপী শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাদের স্মরণে মন্ত্রিসভায় শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। শোক পালনের সময় কোলোব্যাজ ধারণ করবে। এছাড়া মসজিদে দোয়া এবং মন্দির, গুরুদুয়ারা এবং প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। বিকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আজকের বৈঠকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান, কোটা আন্দোলন নিয়ে দেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান মন্ত্রিসভার বৈঠকে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। অন্য মন্ত্রীরাও বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন এবং উপস্থাপন করা প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হয়। সেই আলোচনার ভিত্তিতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ এবং মঙ্গলবার দেশব্যাপী শোক পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল রোববার এ ঘটনায় ১৪৭ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিলেন। তারপর আরও তিনজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। অর্থাৎ কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘটিত সংঘাত-সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ১৫০ জন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ২০০০ সালে শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন তিনি একটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন যে, ব্রিটিশ আমলে যেসব আইন করা হয়েছিল সেগুলো যাতে পর্যায়ক্রমে আমরা বাংলায় রূপান্তরিত করি। যেসব আইন প্রয়োজন নেই, সেই আইনগুলো যাতে আমরা বাতিল করি। এরপর ২০১৫ এবং চলতি বছর প্রধানমন্ত্রী আবার একই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। নির্দেশনা পাওয়ার পর বিষয়টিতে আমরা কাজ শুরু করি। এ পর্যন্ত ২৪৪টি আইন চিহ্নিত করি, যেগুলো ব্রিটিশ আমলে করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে ২৫টি আইন বাতিল করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চলতি বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (এপ্রিল-জুন) পর্যন্ত মন্ত্রিসভার সাতটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয় ৬০টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৩৯টি। বাস্তবায়নের হার ৬৫ শতাংশ। সচিব বলেন, এপ্রিল-জুন পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে ৪টি নীতি বা কর্মকৌশল, ৯টি চুক্তি বা প্রটোকল অনুমোদিত হয়েছে এবং সংসদে ৪টি আইন পাশ হয়েছে।
নাম পরিবর্তন করে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় মহেশখালী-কুতুবদিয়া সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, গত ১৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের নীতিগত অনুমোদন হয়। মহেশখালীতে যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে, সেখানকার কার্যক্রম যাতে সমন্বয় করা যায় সেজন্য অথরিটি গঠন করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, নীতিগত অনুমোদনের পর আজকের বৈঠকে বিষয়টিতে চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে সামান্য পরিবর্তন আছে। আগে নাম ছিল ‘মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’। এখন প্রস্তাব করা হয়েছে মহেশখালী-কুতুবদিয়া সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। কুতুবদিয়া শব্দটা যোগ হবে। কারণ যে জমির এলাকা নিয়ে এই অথরিটি হবে, সেখানে কুতুবদিয়ার জমি আছে। ভিসা ছাড়াই থাইল্যান্ড যেতে পারবেন বাংলাদেশের অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা। সে লক্ষ্যে একটি চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশ এবং থাইল্যান্ডের মধ্যে অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়া ৩০ দিন অবস্থানের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসা নিতে পারবে। আগে এ সুবিধা ২৯টি দেশের সঙ্গে ছিল, নতুন করে থাইল্যান্ডযুক্ত হওয়ায় এই নিয়ে আমাদের ৩০টি দেশ হলো। তিনি
আরও জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বেসামরিক বিমান চলাচলের জন্য দ্বিপাক্ষিক বেসামরিক বিমান চলাচল চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ভারতের সঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচলের দ্বিপাক্ষিক বিদ্যমান চুক্তিটি ১৯৭৮ সালে করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) তৈরি করা নতুন ফরম্যাট অনুযায়ী চুক্তি করতে উভয় দেশ সম্মত হয়েছে। ফ্রিডমসহ শর্ত আগের মতোই আছে। চুক্তিটা নতুন ফরম্যাটের জন্য শুধু অনুমোদন চাওয়া হয়েছে, মন্ত্রিসভায় সেটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।