মদ নয়, কীটনাশক পানেই মৃত্যু হয় রাজশাহীর দুই কৃষকের

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন।

মদ নয়, কীটনাশক পানেই মৃত্যু হয় রাজশাহীর দুই কৃষকের
ফাইল ফটো

প্রথম নিউজ, রাজশাহী: মদ নয়, কীটনাশক পানে মৃত্যু হয়েছে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর দুই আদিবাসী কৃষকের। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার রাতে  বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন। তিনি বলেন, গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউনিয়নের নিমঘুটু গ্রামের আদিবাসী কৃষক অভিনাথ মারান্ডি (৩৬) ও তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডির (২৭) মৃত্যু মদ বা অ্যালকোহলে নয় বরং কীটনাশক পানের কারণেই হয়েছে। এ সম্পর্কিত একটি তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরও করা হয়েছে।

তাদের পরিবার থেকে জানানো হয়, ২৩ মার্চ সন্ধ্যায় তারা দুজন বিষপান করেন। বিষপান করে তারা পরিবারকে এসে জানান। বিষপানের কারণ হিসেবে জমিতে সেচের পানি না পাওয়ার কথা বলেন তারা। অসুস্থ অবস্থায় তাদের রামেক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। ২৩ মার্চ অভিনাথ ও ২৫ মার্চ তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি মারা যান।

অভিনাথ ও রবির পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, অনেক ঘুরেও গভীর নলকূপ থেকে সেচের পানি পাচ্ছিলেন না তারা। তাই ক্ষোভে ওই নলকূপের সামনেই দুজনে বিষপান করেন। আর এ বিষপানের প্ররোচনা দিয়েছিলেন বিএমডিএর পাম্প অপারেটর শাখাওয়াত হোসেন। তার প্ররোচনাতেই তারা বিষপান করেন বলে দুই আদিবাসী পরিবারের অভিযোগ।

এ ঘটনায় অভিনাথের স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম এবং রবির ভাই সুশিল মারান্ডি বাদী হয়ে গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি মামলা করেছেন। গোদাগাড়ী থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার ওই মামলায় গ্রেফতারও হন অভিযুক্ত পাম্প অপারেটর সাখাওয়াত। গ্রেফতারের পরপরই তাকে নলকূপ অপারেটরের পদ থেকে অব্যাহতি দেয় বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ।

এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি তদন্ত কমিটি এই ঘটনা তদন্ত করে এরইমধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তবে মামলার তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে জড়িয়ে রয়েছে দুই আদিবাসী কৃষকের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। তাদের মৃত্যুর বিষয়টি সকলের কাছে অস্পষ্ট ছিল। মদ্যপান নাকি বিষপান এটিই জানার ছিল। সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সকলেই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষা করছিল।

শনিবার এই প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা মৃতের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নমুনা সংগ্রহ করেছিলাম। এরপর সেগুলোর ভিসেরা রিপোর্ট প্রস্তুতের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিলাম ল্যাবে। ওই ভিসেরা রিপোর্ট আমরা হাতে পাওয়ার পর চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করি। ভিসেরা রিপোর্ট অনুযায়ী মৃত দুজনের শরীরে কীটনাশক পাওয়া গেছে। পরীক্ষায় আমরা অর্গানো ফসফরাস যৌগ নামে এক ধরনের কীটনাশক বিষ পাই। এই বিষপানেই তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, প্রতিবেদন আনতে তিনি লোক পাঠিয়েছিলেন। এখনো হাতে পাননি। তিনি বলেন, যেহেতু দুজনই মারা গেছেন, এ কারণে এই মামলায় এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই মামলা কোন দিকে যাবে তা নিশ্চিত করে বলা যাবে। প্রতিবেদন যেহেতু হাতে আসছে এরপর মামলায় গতি পাবে বলেও মনে করেন তিনি।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom