ভারত ও জাপানকে ‘জেনোফোবিক’ আখ্যা দিলেন বাইডেন

ভারত ও জাপানকে ‘জেনোফোবিক’ আখ্যা দিলেন বাইডেন


প্রথম নিউজ, ঢাকা : ভারত ও জাপানকে ‘জেনোফোবিক’ বলে অভিহিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জেনোফোবিক অর্থ হচ্ছে- বিদেশি বা অভিবাসীদের প্রতি ভীতি বা নেতিবাচক মনোভাব।

অবশ্য এই মন্তব্যের মাধ্যমে বাইডেন কোনও দেশের অপরাধের কথা বলেননি বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। শুক্রবার (৩ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জাপান এবং ভারতকে ‘জেনোফোবিক’ বলে অভিহিত করেছেন। মূলত মার্কিন মিত্র এই দুটি দেশকে তিনি রাশিয়া এবং চীনের সাথে একত্রিত করে একই কাতারে এমন দেশ হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছেন যারা ‘অভিবাসী চায় না’।বিবিসি বলছে, জাপানের বিরুদ্ধে বাইডেনের সমালোচনামূলক এই মন্তব্য এমন এক সময়ে সামনে এলো যখন কয়েক সপ্তাহ আগেই প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা রাষ্ট্রীয় সফরের ওয়াশিংটন গিয়েছিলেন এবং সেসময় মার্কিন-জাপান জোটকে ‘অলঙ্ঘনীয়’ বলে অভিহিত করেছিলেন বাইডেন।

এছাড়া মানবাধিকার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে মার্কিন উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও ভারত বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। অবশ্য হোয়াইট হাউস বলেছে, নিজের মন্তব্যের মাধ্যমে বাইডেন কোনও দেশের অপরাধের কথা উল্লেখ করেননি।স্থানীয় সময় গত বুধবার সন্ধ্যায় প্রচারণা তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে কথা বলেন বাইডেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি প্রধানত এশিয়ান-আমেরিকান দর্শকদের উদ্দেশেই কথা বলছিলেন। এসময় বাইডেন বলেন, চলতি বছরের নভেম্বরের মার্কিন নির্বাচন হবে ‘স্বাধীনতা, আমেরিকা এবং গণতন্ত্র’ নিয়ে।

মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘কেন? কারণ আমরা অভিবাসীদের স্বাগত জানাই। এটা নিয়ে ভাবুন। কেন চীন অর্থনৈতিকভাবে এত খারাপভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে? কেন জাপানের সমস্যা হচ্ছে? কেন রাশিয়া? কেন ভারত? কারণ তারা জেনোফোবিক। তারা অভিবাসীদের চায় না।’

বাইডেনের এই বক্তব্যের পর বিবিসি মন্তব্যের জন্য জাপান, ভারত, চীন এবং রাশিয়ার মার্কিন দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করেছে, কিন্তু তাৎক্ষণিক কোনও জবাব পাওয়া যায়নি। অবশ্য এই মন্তব্যটির বিপরীতে মার্কিন পর্যবেক্ষকদের সমালোচনা সামনে এসেছে।

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক মার্কিন উপ-সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী এলব্রিজ কোলবি লিখেছেন, জাপান এবং ভারত ‘আমাদের দুটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ মিত্র’।

তার দাবি, ‘আমাদের তাদের সাথে সম্মানের সাথে কথা বলা উচিত। এটিই তাদের প্রাপ্য। আমাদের মিত্রদের প্রতি সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগ করা বোকামি।’

অবশ্য বাইডেনের এসব মন্তব্য অবমাননাকর অর্থে বোঝানো হয়েছে এমন বিষয় অস্বীকার করেছে হোয়াইট হাউস। জাতীয় নিরাপত্তার মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, তিনি (বাইডেন) মার্কিন অভিবাসন নীতিতে আরও বিস্তৃত বক্তব্য রেখেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মিত্র এবং অংশীদাররা ভালোভাবে জানেন, তাদের বন্ধুত্ব, তাদের সহযোগিতার পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট বাইডেন কীভাবে তাদের মূল্যায়ন করেন। তারা জানে, তিনি জোট এবং অংশীদারিত্বের ধারণাকে কতটা গুরুত্ব দেন।’


ওয়াশিংটন ডিসি-ভিত্তিক আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ সদানন্দ ধুমে বিবিসিকে বলেছেন, বাইডেনের মন্তব্য সম্ভবত ভারতে খারাপভাবে গ্রহণ করা হবে কারণ দেশটি একটি ‘জাতীয়তাবাদী উত্থান’ অনুভব করছে।

তিনি বলেন, ‘এই মন্তব্য ভারতীয়দের একটি অংশের মধ্যে এমন ধারণা নিশ্চিত করবে যে, বাইডেন ভারতের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ নন। তারা চীনের মতো স্বৈরাচারী দেশগুলোর সাথে একই কাতারে নিজেদের দেখতে পাওয়াকে ভালোভাবে নেবে না।’

এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলের শেষের দিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ‘উল্লেখযোগ্য’ ঘটনা ঘটেছে।