বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কি বিপ্লবে রূপ নিচ্ছে?

নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন

বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কি বিপ্লবে রূপ নিচ্ছে?

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক:  কোটা নিয়ে অশান্তির ফলে ২০০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট কোটা হ্রাস করেছে। এর এক সপ্তাহ পরও দেশটি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে কারণ কর্তৃপক্ষ সমস্যা সৃষ্টিকারী বলে সন্দেহ করছে এমন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে 'ব্লক রেইড' চালাচ্ছে। ১৯৭১ সালে দেশটির জন্মের পর থেকে এ অবস্থাকে সবচেয়ে খারাপ বলা হচ্ছে।

"এটা এক ধরনের অচলাবস্থা। ক্ষমতাসীন দল এবং সরকার পুলিশ, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এবং সশস্ত্র বাহিনী ব্যবহার করে আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করছে। আমার ২৫ বছর বয়সী ছাত্র আবু সৈয়দ বুলেট বিদ্ধ হয়েছে। 'ব্লক রেইড'-এর অজুহাতে তরুণ-তরুণীদের আটক করে সেলের মধ্যে আটকে রাখার কারণে পরিস্থিতি এখনও উত্তেজনাপূর্ণ", নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলছিলেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভাষ্যকার প্রফেসর নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ।

আবু সৈয়দের পরিবার সাড়ে ৯ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। রিপোর্ট বলছে, সম্পূর্ণভাবে সশস্ত্র পুলিশ যাদের সমস্যা সৃষ্টিকারী বলে মনে করছে তাদের ধরতে চিরুনি অভিযান চালিয়ে হুটহাট দরজায় কড়া নাড়ছে।

"আমাদের পরিসংখ্যান (আমাদের কাছে সম্পূর্ণ তালিকা আছে) নিশ্চিত করছে যে, এই বিক্ষোভ চলাকালীন ২৬৬ জন মারা গেছে। আমরা বর্তমান সরকারকে বৈধ মনে করি না। তারা নৃশংস শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা বজায় রাখছে যার ফলে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। বিরোধীদেরও নীরব করা হয়েছে। নিছক ছাত্র বিক্ষোভ থেকে এটি শীঘ্রই সরকারের বিরুদ্ধে বিপ্লবে পরিণত হচ্ছে," নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলছিলেন নির্বাসিত বাংলাদেশি ব্লগার এবং মানবাধিকার কর্মী পিনাকী ভট্টাচার্য।

নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস দিল্লিতে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলেও কোন সাড়া পাওয়া যায় নি। "মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনকে পাঁচ স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা দিয়ে দুর্গে পরিণত করা হয়েছে। 

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিক্ষোভের সময় হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছে। শীর্ষস্থানীয় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের  মধ্যে পাঁচজনকে নিরাপত্তা হেফাজতের নামে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একটি আইনি বিধান রয়েছে যে, যদি কোনও ব্যক্তিকে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে (উদ্দেশ্যহীন) ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় তবে তাকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা যেতে পারে,'' বলছিলেন প্রফেসর কলিমুল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, চারপাশে এত গুজব ছড়িয়ে আছে যে কেউ নিজেকে বাস্তবতায় আটকে রাখতে পারছে না। দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলছিলেন, "এটি সকল স্টেকহোল্ডারদের সম্মিলিত ব্যর্থতা। বিবাদমান দলগুলো যদি সম্বিৎ ফিরে না পায় তবে আমরা জটিল সমস্যায় পড়বো"।

ওদিকে, বিক্ষোভ সহিংস হয়ে উঠার পর থেকে বাংলাদেশে বসবাসকারী প্রায় ৭০০০ জন ভারতীয় (মোট ১৫০০০ জনের মধ্যে) দেশে ফিরে এসেছেন। ভারত বলেছে, বাংলাদেশে যা ঘটছে সেটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

['ইজ দ্য স্টুডেন্ট প্রটেস্ট ইন বাংলাদেশ টার্নিং ইনটু আ রেভ্যুলেশন?' শীর্ষক উক্ত প্রতিবেদনটি ভারতের ইংরেজি দৈনিক 'দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস' এ ২৮ জুলাই প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন পত্রিকাটির জ্যেষ্ঠ সম্পাদক ইয়েশি সেলি। বাংলায় অনুবাদ করেছেন মানবজমিনের তারিক চয়ন]