বেনজীরের সম্পদ বিস্ময়কর বিষয় নয়, এই রকম ঘটনা এখন স্বাভাবিক
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট আলী রীয়াজ সোমবার (০১ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেনঃ
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট আলী রীয়াজ সোমবার (০১ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেনঃ বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এবং র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এবং তাঁর পরিবারের অঢেল সম্পদের যে হিসেব একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু কমবেশি সকলেই শেষ পর্যন্ত বলছেন যে, এটা খুব বিস্ময়কর বিষয় নয়। এই রকম ঘটনা যে এখন স্বাভাবিক বলে বিবেচিত হয় সেটাই আসল খবর।
এই বিশাল বিত্ত-সম্পদ অকস্মাৎ হয়েছে তা নয়। সরকারি চাকুরিতে থাকাকালেই তা হয়েছিলো এটা তখন কানাঘুষো হিসেবে প্রচলিত ছিল, যে সব সম্পদের কথা বলা হচ্ছে তার অধিকাংশ দৃশ্যমানও ছিলো। কিন্তু তা নিয়ে কোনও রকমের প্রতিবেদন ছাপা হয়নি, সেটাও লক্ষ্য করার মতো। ক্ষমতার আচ্ছাদনের নিচে না থেকে যে এই সম্পদ অর্জন সম্ভব না সেটা জানেন না বাংলাদেশে এমন মানুষ নেই। কিন্ত এই ক্ষমতার আচ্ছাদন নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনও লক্ষণ দেখা যায় না।
আগেও আমরা দেখেছি যে ক্ষমতায় থাকার সময় কার কোথায় কত বিত্ত সেটা জানা যায় না। সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রীর লন্ডনে কত সম্পদ আছে তা জানা গেছে মন্ত্রিসভায় তাঁর মেয়াদ শেষ হবার পরে। এই নিয়ে তাঁর কিছু ব্যাখ্যা আছে, তিনি দাবি করেছেন যে তিনি দুর্নীতি করেননি, দেশ থেকে এক টাকাও নেননি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই যে এতো প্রতিবেদন তারপরে হচ্ছে কী? ক্ষমতার আচ্ছাদনের বিষয়টি যে গুরুত্বপূর্ণ সেটা উপলব্ধি করার জন্যে আরেকটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশের একজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে একটি সংবাদপত্রে অর্থ পাচারের অভিযোগ করে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিলো। এই নিয়ে সারা দেশে হৈচৈ হলো। শেষ পর্যন্ত আদালত বলে দিয়েছে যে, এই নিয়ে আর কথা বলা যাবে না। এখন আদালতের আদেশ শিরোধার্য।
এগুলো তো সামান্য উদাহরণ। এমন ঘটনা অহরহই ঘটে। আপনাদের নিশ্চয় মনে থাকবে যে টেকনাফ থানায় একজন ওসি ছিলেন – প্রদীপ কুমার দাশ। তিনি ক্ষমতায় থাকার সময় তাঁর দিকে আঙ্গুল ওঠানোর সাহস কারো ছিলো না। তিনি একাধিকবার বিপিএম, পিপিএম পদকে ভূষিত হয়েছিলেন। সামরিক বাহিনীর সাবেক একজন কর্মকর্তাকে বিচারবহির্ভূত হত্যার দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায়ও তাঁরা দোষী সাব্যস্ত হন, প্রদীপ দাশ ২০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। এই সব কি আসলেই কারো জানা ছিলো না? কিন্তু ক্ষমতার আচ্ছাদনের শক্তি কেবল তাঁকে টিকিয়ে রেখেছিল তা নয়, তাঁকে পদকের পর পদকে ভূষিত করেছে, যেমন দেখা গেছে বেনজীর আহমেদের ক্ষেত্রেও।
এইসব ঘটনাকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেয়ার যে পরিবেশ-পরিস্থিতি এটাই হচ্ছে বিরাজমান ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সাফল্য। যে ব্যবস্থার কথা বলছি সেটা কী ব্যবস্থা? সেটা হচ্ছে জবাবদিহিহীন শাসন ব্যবস্থা, যেখানে নাগরিকের প্রশ্নের কোনও অধিকার নেই। যারা ক্ষমতায় আছেন তারা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসেনি, তাঁরা এমন ব্যবস্থা করেছেন যে, আগামীতে তাঁদের কারো কাছেই ম্যান্ডেটের জন্যে যেতে হবে না।
এই রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে যে অর্থনীতি চালু আছে, থাকে সেখানে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে যারা আছেন তাঁরা লুটপাট করবেন। প্রতিদিনের ব্যবহার্য জিনিশের নামে আপনার পকেট থেকে শুরু করে ব্যাংক পর্যন্ত কিছুই বাদ যাবে না। ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ যে সব ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছিলো সেগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়। লুণ্ঠনের এই অবারিত উৎসবের অর্থের জোগান দিচ্ছেন এবং দেবেন নাগরিকরা – ক্রমাগতভাবে মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে দেবেন, জ্বালানি খাতে লুটের কারণে বেশি দামে জ্বালানি কিনে দেবেন। নাগরিকদের নামে বিদেশ থেকে ঋণ করা হবে, তার সুদ গুণতে হবে আপনাকে। এইসব অর্থই হচ্ছে ক্ষমতার ছাতার নীচে থাকা মানুষদের ফুলে ফেপে ওঠার, সম্পদের পাহার গড়ার উপায়। এগুলোকে ‘চেরাগ’ বা প্রদীপ বললে শুনতে ভালো শোনায়, কিন্তু আসল কথা হচ্ছে এগুলো হচ্ছে জনগণের অর্থ লুটের কাহিনী। দুই একজনের এই কাহিনী প্রকাশিত হচ্ছে, কিন্তু যে ব্যবস্থা তা সম্ভব করছে তা নিয়ে প্রশ্ন না করলে, তাঁকে মোকাবেলা না করলে যা হবার তা চারপাশেই ঘটছে।
প্রসঙ্গত, রোববার (৩১ মার্চ) দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার লিডনিউজ ছিল "বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ"। প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয় গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নের বৈরাগীটোল গ্রামে নিভৃত পল্লীর মাঝে গড়ে তোলা হয়েছে 'সাভানা ইকো রিসোর্ট' নামের অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র, যেখানে এক রাত থাকতে গেলে গুনতে হয় অন্তত ১৫ হাজার টাকা। সেখানে বিশাল আকৃতির ১৫টি পুকুরের চারপাশে গার্ড ওয়াল, দৃষ্টিনন্দন ঘাট, পানির কৃত্রিম ঝরনা ও আলোর ঝলকানি। পার ঘেঁষে বিলাসবহুল সব ডুপ্লেক্স কটেজ। রাষ্ট্রীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক আইজিপি ও র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের পরিবারের মালিকানাধীন রিসোর্টটির পরিধি (প্রায় এক হাজার ৪০০ বিঘা) এতটাই বড় যে সাহাপুর গ্রামের নাম লিখে গুগলে সার্চ দিলে এই রিসোর্টটিই আগে ভেসে ওঠে পর্দায়। রিসোর্টের নিরাপত্তায় পাশেই বসানো হয়েছে ‘বিশেষ’ পুলিশ ফাঁড়ি। যাতায়াতের জন্য সরকারি খরচে বানানো হয়েছে সাত কিলোমিটারের বেশি পাকা সড়ক।
প্রতিবেদনে বলা হয়ঃ সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বেনজীরের বড় মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর এবং পরিচালক ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর। শুধু এই এক ইকো রিসোর্টই নয়, পুলিশের সাবেক এই প্রভাবশালী শীর্ষ কর্মকর্তা তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের নামে অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে। এর পাঁচটিই নিজ জেলা গোপালগঞ্জে। জেলা সদরের সাহাপুর ইউনিয়নের বৈরাগীটোল এলাকায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি বলে ধারণা পাওয়া গেছে।
রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে রয়েছে বেনজীর আহমদের অঢেল সম্পদ। দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছেই দামি এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে দুই লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরো ১০ বিঘা জমি।
সম্পদের মালিকানায় স্ত্রী ও দুই মেয়েঃ
কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে বলা হয়- সুকৌশলী বেনজীর আহমেদ নিজের নামে কোনো সম্পদ করেননি, করেছেন তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে। গোপালগঞ্জে সাভানা ফার্ম প্রডাক্টস, সাভানা অ্যাগ্রো লিমিটেড, সাভানা ন্যাচারাল পার্ক, সাভানা ইকো রিসোর্ট, সাভানা কান্ট্রি ক্লাব বানিয়েছেন বেনজীর আহমেদ। বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড নামের একটি কোম্পানিতে বড় মেয়ে ফারহিনের নামে এক লাখ, আর ছোট মেয়ে তাহসিনের জন্য কেনা হয়েছে আরো এক লাখ শেয়ার। এম/এস একটি শিশির বিন্দু (রেজি. পি-৪৩০৩৬) নামের ফার্মের ৫ শতাংশের মালিকানায় নাম রয়েছে বড় মেয়ের। আরো ৫ শতাংশের মালিকানা রয়েছে ছোট মেয়ের। একই প্রতিষ্ঠানে বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জার রয়েছে ১৫ শতাংশ অংশীদারি। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটিতে মোট ২৫ শতাংশের মালিকানা রয়েছে বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও মেয়েদের।
যৌথ মূলধনী ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে পাওয়া নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সাবেক পুলিশ ও র্যাব কর্তা বেনজীর আহমেদ তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে গোপালগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করেছেন সাভানা অ্যাগ্রো। ২০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনধারী সাভানা অ্যাগ্রো লিমিটেডের পরিচালক তিনজন। ১০টি শেয়ারধারী স্ত্রী জীশান মীর্জা চেয়ারম্যান, সমপরিমাণ শেয়ারের অধিকারী ২৯ বছর বয়সী বড় মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর এমডি। আর মাত্র ২৪ বছর বয়সী ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর আছেন পরিচালক হিসেবে। প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে সরেজমিনে যায় কালের কণ্ঠ। সেখানে দেখা গেছে, ২০ কোটি নয়, সাভানা অ্যাগ্রোর রয়েছে কয়েক শ কোটি টাকার বিনিয়োগ ও ব্যবসা।
বেনজীর আহমেদের পরিবারের আরেকটি প্রতিষ্ঠান হলো সাভানা ন্যাচারাল পার্ক প্রাইভেট লিমিটেড। রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানির (আরজেএসসি) তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এই কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন পাঁচ কোটি টাকা। সাভানা অ্যাগ্রোর মতো এই কোম্পানির মালিকানায়ও আছেন স্ত্রী ও দুই মেয়ে। যথারীতি এখানেও স্ত্রী চেয়ারম্যান এবং মেয়েদের একজন এমডি, অন্যজন পরিচালক। প্রত্যেকের হাতে রয়েছে এক লাখ করে মোট তিন লাখ শেয়ার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এই পার্কের আয়তন প্রায় ৬০০ বিঘা। পার্কটি বড় করতে পাশে আরো ৮০০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে। এখন ভরাট করা হচ্ছে।
যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে পাওয়া নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, সাভানা অ্যাগ্রোর নিবন্ধনে ঠিকানা হিসেবে দেওয়া হয়েছে ২২৮/৩, শেখপাড়া রোড, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, ঢাকা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঠিকানাটি বেনজীরের শ্বশুরবাড়ি। বেনজীরের শ্বশুরের নাম মীর্জা মনসুর উল হক ও শাশুড়ির নাম লুত্ফুন নেসা মনসুর।
প্রতিবেদনে বলা হয়ঃ দুই মেয়ে মাত্র ২৯ ও ২৪ বছর বয়সেই কয়েক শ কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেছেন প্রভাবশালী পুলিশকর্তা বাবার অবৈধ আয়ের ওপর ভর করে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। স্ত্রী জীশান মীর্জারও তেমন কোনো বৈধ আয়ের উৎস না থাকা সত্ত্বেও বিপুল বিনিয়োগে গড়ে তোলা ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তিনি। জীশান মীর্জার পৈতৃক সূত্রে এত পরিমাণ সম্পদ পাওয়ার সুযোগ নেই।
ঢাকা ও পূর্বাচলে বিপুল টাকার সম্পদঃ
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর গুলশানে সুবিশাল অভিজাত একটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে বেনজীর আহমেদের। গুলশান ১ নম্বরের ১৩০ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাড়িটির নাম ‘র্যাংকন আইকন টাওয়ার লেক ভিউ’। ভবনের ১২ ও ১৩তম তলায় আট হাজার ৬০০ বর্গফুটের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে তাঁর। সূত্র জানায়, আট হাজার ৬০০ বর্গফুটের এই অ্যাপার্টমেন্টের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।
ভবনটি নির্মাণ করে র্যাংকন ডেভেলপমেন্টস। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ১৯.৭৫ কাঠা জমিতে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্টের আয়তন দুই হাজার ১৫০ বর্গফুট। এখানে রয়েছে ১৩টি ফ্লোর এবং দুটি বেইসমেন্ট। সত্যতা নিশ্চিত করতে সরেজমিনে গেলে ভবনের নিরাপত্তাকর্মী মো. সবুজ কালের কণ্ঠকে জানান, ১২ ও ১৩তম তলায় রয়েছে বেনজীরের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট।
এ ছাড়া রাজধানীর মগবাজার আদ-দ্বীন হাসপাতাল সংলগ্ন ইস্টার্ন প্রপ্রার্টিজের একটি বহুতল ভবনে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছেন বেনজীর আহমেদ।
পূর্বাচলে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ি করেছেন বেনজীর আহমেদ। আনন্দ হাউজিং সোসাইটির দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় পোড়া মোড়ের পাশের এলাকায় অন্তত ৪০ কাঠা জমির ওপর গড়েছেন বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি। জমি ও বাড়ির মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা বলে ধারণা স্থানীয়দের।
রাজধানীর পূর্বাচলের ফারুক মার্কেটের পেছনের দিকে ১৭ নম্বর সেক্টরের ৩০১ নম্বর রোডের জি ব্লকে ১০ নম্বর প্লটের মালিক পুলিশের সাবেক এই আইজি। স্থানীয়রা বলছেন, ১০ কাঠা পরিমাণের এই প্লটের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২২ কোটি টাকা। বেনজীর আহমেদ পুলিশের আইজি থাকাকালে এই প্লট কেনেন। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, পুলিশের এই সাবেক আইজি তাঁর ১০ কাঠার প্লটটি বিক্রির পরিকল্পনা করছেন। এরই মধ্যে বেশ কিছু ক্রেতার সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের নাওড়ায় বেনজীর আহমেদের রয়েছে দুই বিঘা জমি, যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।
"মেয়ের বিশ্রামের জন্য সাড়ে ৩ কোটি টাকার ফ্ল্যাট" শীর্ষক কালের কণ্ঠের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়ঃ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মেয়ে ক্লাসের ফাঁকে একটু সময় কাটাবেন, এ জন্য সাড়ে তিন কোটি টাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনেন বেনজীর আহমেদ। ২০১৭ সালে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এই ফ্ল্যাট কেনেন তিনি। সি ব্লকের ৪০৭ নম্বর প্লটে সাত কাঠা জমির ওপর নির্মিত আটতলা ভবনের পঞ্চম তলায় তাঁর কেনা ফ্ল্যাটের আয়তন সাড়ে তিন হাজার বর্গফুট।
দুই মেয়ের নামে পাঁচতারা হোটেলের মালিকানাঃ
প্রাথমিক গণপ্রস্তাব প্রক্রিয়া (আইপিও) শেষে সম্প্রতি পুঁজিবাজারের ভ্রমণ ও আবাসন খাতে তালিকাভুক্ত হয় বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। এই বেস্ট হোল্ডিংসের অন্যতম প্রকল্প হলো বৈশ্বিক ব্র্যান্ড হিসেবে খ্যাত পাঁচতারা হোটেল ‘লা মেরিডিয়ান’।
তালিকাভুক্তির আগ থেকেই কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন ও প্রসপেক্টাসে তথ্যের ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ থাকলেও একজনের ক্ষমতায় শেষ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় কোম্পানিটি। অভিযোগ রয়েছে, নামে-বেনামে এই কোম্পানির বড় অঙ্কের শেয়ার ছিল বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের হাতে। তাই মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়েই পুঁজিবাজারে আসে কম্পানিটি।
"বেনজীরের বৈধ আয় কত ছিল" শীর্ষক কালের কণ্ঠের অপর প্রতিবেদনে বলা হয়ঃ বেনজীর আহমেদ তার ৩৪ বছর সাত মাস দীর্ঘ চাকরিজীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোট বেতন বাবদ উপার্জন করেছেন এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকা। মূত্র: মানবজমিন।