বিচারকের প্রতি অনাস্থা: আদালত পরিবর্তনে জাপানি ২ শিশুর বাবার আবেদন, হাইকোর্টে খারিজ

সোমবার (১২ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমানের বেঞ্চ আবেদন খারিজ করেন। এসময় আদালতের শুনানিতে ইমরান শরীফের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট নাসিমা আক্তার লাভলী। আর জাপানি মায়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

বিচারকের প্রতি অনাস্থা: আদালত পরিবর্তনে জাপানি ২ শিশুর বাবার আবেদন, হাইকোর্টে খারিজ

প্রথম নিউজ, ঢাকা: জাপানি দুই শিশু, জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা কার জিম্মায় থাকবে এ সংক্রান্ত আপিল শুনানিতে বিচারকের প্রতি আস্থাহীনতায় আদালত পরিবর্তন চেয়ে বাবা ইমরান শরীফ আবেদন করেন। সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার (১২ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমানের বেঞ্চ আবেদন খারিজ করেন। এসময় আদালতের শুনানিতে ইমরান শরীফের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট নাসিমা আক্তার লাভলী। আর জাপানি মায়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

এ আদেশের পর আবেদনকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাসিমা আক্তার লাভলী জাগো নিউজকে জানান, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করবেন তারা। এর আগে জাপানি দুই শিশু, জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা কার জিম্মায় থাকবে এ সংক্রান্ত আপিল শুনানিতে বিচারকের প্রতি আস্থাহীনতায় আদালত পরিবর্তন চেয়ে বাবা ইমরান শরীফ হাইকোর্টে আবেদন করেন। মঙ্গলবার (৬ জুন) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ইমরান শরীফের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাসিমা আক্তার লাভলী এ আবেদন করেন।

এর আগে একই ধরনের আবেদন করার পরিপ্রেক্ষিতে শুনানিতে উঠলে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কার্যতালিকা (কজলিস্ট) থেকে বাদ দেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার (১ জুন) হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন। মায়েরপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শিশির মনির।

ওইদিন আইনজীবী শিশির মনির বলেন, জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা কার জিম্মায় থাকবে এ সংক্রান্ত আপিল ঢাকার জেলা জজকে তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই আপিল ঢাকার জেলা আদালতে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। কিন্তু শিশুদের বাবা ইমরান শরীফ আপিল জেলা জজের আদালতে শুনানি না করে হাইকোর্টে শুনানির জন্য আবেদন করেছিলেন। হাইকোর্ট ইমরান শরীফের আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। এর ফলে জেলা জজ আদালতে আপিল শুনতে বাধা নেই।

গত ৯ মার্চ জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে বিদেশে নিয়ে যেতে জাপানি মায়ের আবেদন নাকচ করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে দুই শিশু কার জিম্মায় থাকবে এ সংক্রান্ত আপিল জেলা জজ আদালতকে তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন আদালত। এ সময় পর্যন্ত দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা যেভাবে আছেন সেভাবেই থাকবে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে ওইদিন জাপানি মায়ের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ ব্যারিস্টার আখতার ইমাম ও ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম।

সে সময় আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, আপিল বিভাগের অনুমতি ছাড়া দুই সন্তানকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া যাবে না, এই আদেশের বিরুদ্ধে একটি সিভিল রিভিউ পিটিশন ও একটি এক্সপাঞ্জ চেয়ে আবেদন করেন জাপানি মা। আপিল বিভাগের আগে একটি আদেশ ছিল আপিল বিভাগের অনুমতি ছাড়া দুই সন্তানকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া যাবে না। এটা যেন আদেশ থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় সে জন্য আবেদন করেছিলেন জাপানি মা। বাবা ইমরান শরীফ নাকানো এরিকোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেছিলেন। কারণ জাপানি মা দুইবার চেষ্টা করেছেন শিশুদের দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার। মা নাকানো এরিকোও একটা আদালত অবমাননার আবেদন করেন। কারণ বাবা ইমরান একটি শিশুকে তার কাছে নিয়ে এসেছিলেন। এ কারণে তিনি এ আবেদন করেন। এই চারটা আবেদনের শুনানি শেষে আপিল বিভাগ আদেশে বলেছেন, মা নাকানো এরিকো যেন শিশুদের দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা না করে। একই সঙ্গে জেলা জজ আদেশ দেন শিশুদের জিম্মায় রাখা সংক্রান্ত আপিল তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার। এ ছাড়া আরেকটা নির্দেশনা দিয়েছেন, সেটা হলো স্ট্যাস্টাকো (স্থিতিবস্থা) মেনে চলার। যার অর্থ এখন যে অবস্থায় আছে,সেই অবস্থাটা মেনে চলতে হবে যতদিন পর্যন্ত জেলা জজ আদালতে থাকা আপিলটা নিষ্পত্তি না হয়। এর অর্থ দুই শিশুকে দেশের বাইরেও নেওয়া যাবে না। তারা যে যার কাছে আছে, সেখানেই থাকবে।

এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফ ও জাপানি মা নাকানো এরিকোর দুই শিশুকে জাপানি মা নাকানো এরিকোর জিম্মায় রাখার নির্দেশ দেন আদালত। নাবালিকা দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা কোথায় থাকলে কল্যাণ হবে সেদিক বিবেচনায় রেখে এ রায় দেওয়া হয়। ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান এ রায় দেন।