নয়াপল্টনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন, দাঁড়াতে দিচ্ছে না নেতাকর্মীদের
বিএনপি কার্যালয়ের সামনে প্রস্তুত রাখা হয়েছে সাঁজোয়া যান ও জলকামান। সাদা পোশাকের পুলিশও অবস্থান নিয়েছে নয়াপল্টনের অলিগলিতে।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে রাজধানীর নয়াপল্টনে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে। বিএনপি কার্যালয়ের সামনে প্রস্তুত রাখা হয়েছে সাঁজোয়া যান ও জলকামান। সাদা পোশাকের পুলিশও অবস্থান নিয়েছে নয়াপল্টনের অলিগলিতে। নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে বিএনপির কোন নেতাকর্মীকে দাঁড়াতে দিচ্ছে না পুলিশ। যে-ই আসছেন তাকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের বলা হচ্ছে- সমাবেশ আজ নয়, আগামীকাল। আপনারা আগামীকাল আসেন। নয়াপল্টনের পুরো এলাকায় পুলিশ অবস্থান নিয়েছেন। তবে নয়াপল্টন সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টন কার্যালয়ে প্রবেশ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। কার্যালয়ের ভেতর অল্প সংখ্যক নেতাকর্মী অবস্থান করছেন।
ওদিকে বিএনপির শুক্রবারের মহাসমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে দুদিন ধরে চলছে পুলিশের গ্রেপ্তার ও তল্লাশি অভিযান। বুধবার রাতভর রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও বাসাবাড়িতে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়েছে বিএনপির কয়েকশ’ নেতাকর্মীকে। নয়াপল্টনের মিডওয়ে আবাসিক হোটেল থেকেই অন্তত দেড়শ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ঢাকার পার্শ্ববর্তী দুই জেলা নারায়ণগঞ্জ ও সাভারেও ধরপাকড় হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অর্ধশতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক করা হয়।
এদিকে পুলিশের গ্রেপ্তার ও তল্লাশি অভিযানে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল দিনভর নয়াপল্টন এলাকা সরগরম থাকলেও বিকাল থেকে ফাঁকা হয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দলের নেতাকর্মীরা নিরাপদ অবস্থানে চলে যান। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। রাজধানীর ৫০টি থানা এলাকায় এ অভিযান চলছে। তবে কত সংখ্যক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেই তথ্য বলেনি পুলিশ।
ওদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুস, দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মোফাজ্জল হোসেন দুলালসহ ১৫৫ নেতাকর্মীকে হোটেল মিডওয়ে (নয়াপল্টন) থেকে রাতে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। রাতে ঢাকা মহানগরের ২৩ নং ওয়ার্ডের কমিশনার মীর আশরাফ আলী ও তার ছেলে ব্যারিস্টার মুনতাইন আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ । গ্রেপ্তারের সময় কমিশনার মীর আশরাফ আলীর দুই পা ভেঙে গেছে। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া মিরপুর থানা পুলিশ পাংশা উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি সবিজ রাজা, ছাত্রদল নেতা ইমরান হোসেন, কলিমহর ইউনিয়ন ছাত্রদলের জাহিদ হোসেন, মৌরাট ইউনিয়ন ছাত্রদলের কনকসহ ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। কলাবাগান থানায় গ্রেফতার হয়েছেন জয়পুরহাট জেলা শাখা জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সদস্য সচিব মঞ্জুরে মওলা পলাশ ও ছাত্রদল নেতা মশিউর রহমান খন্দকার (এ্যালট)। বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে ডিবি পরিচয়ে ধানমন্ডি থানার পাশে ৬ নম্বর রোডের একটি বাসা থেকে বিএনপির ত্রাণ এবং পুনর্বাসন বিষয়ক সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলনসহ মহাসমাবেশে রাজশাহী থেকে আসা ৯ জনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ধানমন্ডি থানায় পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তারা ডিবি অফিসে যোগাযোগের কথা বলেন। রাত আড়াইটার দিকে উত্তরা পূর্ব থানা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক এস এম মহিউদ্দিনকে সাদা পোশাকে একদল লোক পুলিশ পরিচয়ে জোরপূর্বক বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়।
আজ সকালে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এক বিবৃতিতে বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার মীর আশরাফ আলী ও তার ছেলে ব্যারিস্টার মুনতাহা আলীকে গতকাল রাতে তাদের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের সময় আশরাফ আলী দুই পা ভাঙ্গাসহ গুরুতর আহত হন। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ছাড়া আগামীকাল ২৮ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বিএনপির মহা সমাবেশে যোগ দিতে আসা বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস আকন, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বলসহ প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট।
নয়াপল্টনের কাছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে মিডওয়ে হোটেল ও ভিক্টোরিয়া হোটেলেও অভিযান চালায় পুলিশ। ২৮শে জুলাই মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসা ৩০০ জনেরও বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে তারা। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ হিসেবে সমাবেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে পুলিশের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।