নির্বাচনে কী পদক্ষেপ নেয়া যায়, ভাবছে আমেরিকা

ওয়াশিংটনে রাইট টু ফ্রিডমের আলোচনা

নির্বাচনে কী পদক্ষেপ নেয়া যায়, ভাবছে আমেরিকা
র্বাচনে কী পদক্ষেপ নেয়া যায়, ভাবছে আমেরিকা

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: রাষ্ট্রীয় প্রায় সব প্রতিষ্ঠানসমূহকে দলীয়করণ এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর অব্যাহতভাবে দমনপীড়নের মুখে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকট। যুক্তরাষ্ট্র সরকার নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার অংশ হবে না। দেশটি বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারত সরকারের সাথে কথা বলছে। বাংলাদেশে চীনের ঘনিষ্ঠতার মূল কারণ দুর্নীতি। সম্প্রতি ওয়াশিংটন ভিত্তিক অধিকার সংগঠন-রাইট টু ফ্রিডম আয়োজিত 'বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় বক্তারা এমন সব মন্তব্য করেছেন। সংগঠনের প্রেসিডেন্ট অ্যাম্বাসেডর উইলিয়াম বি মাইলামের সঞ্চালনায় এতে প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন উড্রো উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান, পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এম মনসুর (ভার্চুয়ালি অংশ নেন) এবং ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ডেপুটি চিফ অফ মিশন জন এফ ড্যানিলোভিজ।

আলোচনার এক পর্যায়ে বিরোধী দলগুলো কর্তৃক ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করাকে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভুল বলে বর্ণনা করেন অ্যাম্বাসেডর মাইলাম। অনুষ্ঠানে একটি প্রশ্ন ছিল এমনঃ এর আগেও সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল আগের রাতেই উদযাপন করা হয়েছিল। সব কিছুই কারচুপিতে ভরা ছিল। এরপর সারা বিশ্বের সবাই বলেছিল, আপনাদের অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা উচিত, আর কখনো এমনটা করা উচিত নয়! সামনের নির্বাচনে এর ভিন্ন আর কী হতে পারে? উক্ত প্রশ্নের জবাবে জন ড্যানিলোভিজ বলেন, "আমরা যা করতে পারি তা হল নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার জন্য যেসব জিনিস অবদান রাখে সেগুলো নিয়ে ভাবতে পারি৷ সেগুলোকে ঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করতে পারি। একটা ইস্যু রয়েছে পর্যবেক্ষক, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই। তাছাড়া, নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনের পরে আমরা কী কী পদক্ষেপ নিতে পারি।"

একজন মানবাধিকার কর্মী বলেন, "র‍্যাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় তারা জঙ্গি দমন করেছে, এটা, সেটা। নির্বাচনে পর্যবেক্ষকরা কিইবা করতে পারবেন যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রায় সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করা হয়েছে? এ প্রশ্নের এক অংশের উত্তর দেন মাইকেল কুগেলম্যানঃ র‍্যাব কর্তৃক নির্যাতনের বিষয়ে আমরা সকলেই অবগত। অনেকদিন পর্যবেক্ষণের পর যুক্তরাষ্ট্র যখন দেখলো কোনো ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে না, বড় পদক্ষেপ নিতে হবে তখনই তারা স্যাংশন দিলো। এটা অনেক বড় পদক্ষেপ কারণ বিগত বছরগুলোতে তালেবান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার কারো উপর দেশটির নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার নজির নেই।

অন্য অংশের উত্তর দেন অ্যাম্বাসেডর মাইলামঃ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর বিপক্ষে কিছু করা হলে তা তাদেরকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেবে। তখন মানুষের সব প্রশ্নের উত্তরই হবে 'সহিংসতা'। আমার মনে হয় না কোনো সরকার, বিশেষ করে আমেরিকান সরকার সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার অংশ হবে।

চীন ও ভারত সরকারকে টিকিয়ে থাকতে সাহায্য করছে এমন প্রসঙ্গ উঠলে জন ড্যানিলোভিজ বলেন, "বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরকার সমর্থকরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। সে কারণেই চীন বাংলাদেশে 'খেলতে' এসেছে। এখানে চীনের প্রকল্প এবং বিনিয়োগের সাথে দুর্নীতির সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া, আমি চীনের এই রেজিমের পিলার হওয়ার মতো কিছু দেখি না। ভারতের সমর্থন অনেকটা নৈতিকভাবে এবং সেটা দৃঢ়। এটা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভারত সরকারের সাথে কথা বলছে। আশা করি, আমরা স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে (বাংলাদেশকে) দেখবো, ভারতও তাই করবে। একেপেশে ভাবে দেশটিকে দেখলে তা যে দীর্ঘমেয়াদে তাদের জন্য নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেবে তা তারা ভেবে দেখবে। কিন্তু, আমি জানি এই চ্যালেঞ্জটি জটিল।

উল্লেখ্য, ন্যাশনাল প্রেসক্লাব ওয়াশিংটনের ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, স্কলার, কূটনীতিক, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ইউএসআইপি, এনডিআই, সিআরআই, নেড, বিশ্বব্যাংক, ফ্রিডম হাউস, এনপিআরসহ নানা সংস্থার প্রতিনিধির অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত ওই আলোচনা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিল রাইট টু ফ্রিডমের ফেসবুক পেইজসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনুষ্ঠান শেষে এরকম এক আয়োজনের জন্য রাইট টু ফ্রিডম এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মুশফিকুল ফজল আনসারীর প্রতি আলোচকরা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:।