নির্বাচনে অংশ নিতে নানা প্রলোভন, সাড়া মিলছে কম
তফসিল ঘোষণার মধ্যদিয়ে বেজে উঠেছে নির্বাচনী ঘণ্টা। জোরেশোরে নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: তফসিল ঘোষণার মধ্যদিয়ে বেজে উঠেছে নির্বাচনী ঘণ্টা। জোরেশোরে নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তার মিত্ররাও নির্বাচনী ডামাঢোলে গা ভাসিয়েছে। অপরদিকে সরকার পতনের একদফা দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে বিএনপি, জামায়াত, ডান-বামসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না তারা। ওদিকে বিএনপি নেতাদের নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া হচ্ছে নানা টোপ। টার্গেট করা হচ্ছে বিএনপি’র নিষ্ক্রিয় সাবেক এমপি, দলছুট ও বহিষ্কৃত নেতাদের। এ ছাড়া নবম ও দশম সংসদের বিএনপি’র সাবেক এমপিদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। এমনকি কারাগারে থাকা নেতাদেরও নির্বাচনে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। শুধু বিএনপি নয়, তাদের সঙ্গে আন্দোলনে থাকা সমমনা শরিক দলগুলোর নেতাদেরও এমপি-মন্ত্রিত্বসহ নানা অফার দেয়া হচ্ছে।
শোনা যাচ্ছে, বিএনপি’র শতাধিক সাবেক এমপি ও নিষ্ক্রিয় নেতা সরকারের রাডারে রয়েছেন। তবে দলছুট ও নিষ্ক্রিয় দুই-একজন টোপ গিললেও বেশির ভাগ নেতাই এসব প্রস্তাবে তেমন সাড়া দেননি। সরকারের তরফ থেকে এমন অফার পাওয়ার কথা মানবজমিনের কাছে স্বীকার করেছেন একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক এক এমপি। তিনি বলেছেন, শুধু আমার সঙ্গেই যোগাযোগ করেনি। আমার মতো সাবেক অনেক এমপি’র সঙ্গেই যোগাযোগ করা হচ্ছে। নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য নানা অফার দেয়া হচ্ছে। তবে বিএনপি’র নেতৃত্বের প্রতি সবাই আস্থাশীল।
আড়াইহাজারের সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর মানবজমিনকে বলেন, ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এমপি ছিলাম। আমি বিএনপি করি। বিএনপি’র টিকিটে তিনবার এমপি হয়েছি। বিএনপি যদি নির্বাচনে যায় তাহলেই আমি নির্বাচন করবো। না গেলে করবো না। তবে সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের প্রস্তাব পাননি বলে জানিয়েছেন তিনি। ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কয়েক দফা বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করা হয়। কোনো বারই তা সফল হয়নি। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তৃণমূল বিএনপি ও আগস্টে বিএনএম নামে দুটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন। বিএনপি’র কাছাকাছি নামের এই দুটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয়ায় তখনই বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয় যখন বিএনপি’র সাবেক ও বহিষ্কৃত নেতারা দল দুটিতে যোগ দেন। তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারম্যান হন বিএনপি’র সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও মহাসচিব বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। এ ছাড়া বিএনএমের আহ্বায়ক হন বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুর রহমান, সদস্য সচিব হন বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য মেজর (অব.) মো. হানিফ। দল দুটিতে বিএনপি নেতাদের ভেড়াতে নানা তৎপরতা শুরু হয়। বিএনপি’র নিষ্ক্রিয় ও সাবেক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তৃণমূল বিএনপি’র মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার মানবজমিনকে বলেন, দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতি করেছি। দলটির অনেকের সঙ্গে পরিচয় আছে। দেশে-বিদেশে থাকা বিএনপির অনেক নেতাই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। পরিস্থিতির কারণে তারা প্রকাশ করছেন না। সময় হলে তারা যোগ দেবেন।
সম্প্রতি গুঞ্জন ওঠে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বিএনপি ছেড়ে নতুন দল গড়ছেন। এ ধরনের গুঞ্জন চাউর হওয়ার পর জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে সেই গুঞ্জনে পানি ঢেলে দেন মেজর হাফিজ। তিনি বলেন, বিএনপিতে আছেন, বিএনপিতেই থাকবেন। বিএনপি থেকেই অবসর নেবেন।
এদিকে গত ২৮শে অক্টোবর মহাসমাবেশে সংঘর্ষের পর বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের গণগ্রেপ্তার শুরু হয়। একাধিক শীর্ষ নেতাকে নজরবন্দি করে নির্বাচনে যাওয়ার চাপ দেয়ার গুঞ্জন ওঠে। সরকারের তরফ থেকে নানা প্রস্তাব দেয়ার খবর রটে। ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন মন্ত্রীদের বক্তব্যেও বিষয়টি উঠে আসে। তবে মাঠে এমন আলামত দেখা যায়নি। প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে পাঠানো হয়।
সূত্রমতে, সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় এখন অষ্টম ও নবম সংসদের বিএনপি’র সাবেক এমপিদের নির্বাচনে অংশ নিতে নানা প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। জেলে থাকা এমপিদের দেয়া হচ্ছে টোপ। মাগুরা-২ আসনের সাবেক এমপি সালিমুল হক কামাল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজার পর কারাগারে আছেন। তার ঘনিষ্ঠ এক স্বজন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, কারাগারে থাকা সালিমুল হক কামালকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে, নির্বাচনে অংশ নিলে জামিনে মুক্তি দিয়ে এমপি বানানো হবে। তবে তিনি সেই প্রস্তাবে সাড়া দেননি।
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের সাবেক এমপি নাজিমউদ্দীন মানবজমিনকে বলেন, আমার কাছে এই ধরনের প্রস্তাব আসে নাই। বিএনপি’র টিকিটে দুইবার এমপি হয়েছি। বেইমান হয়ে মরতে পারবো না। তবে বিএনপি নির্বাচনে গেলে অংশ নেবেন বলে জানান তিনি। মাগুরা-৪ আসনের চারবারের সাবেক এমপি শহীদুল ইসলাম বেল্টু বলেন, এমপি-মন্ত্রী কেন প্রধানমন্ত্রী বানানোর প্রস্তাব দিলেও আমি যাবো না। তাছাড়া আমার কাছে কোনো প্রস্তাব নিয়ে কেউ আসেনি।
খুলনা মহানগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, যারা লোভী ও দুর্বল চিত্তের তাদের নানা প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। আমার কাছে কেউ যোগাযোগ করেনি। তবে সরকারের এই তৎপরতা সফল হবে না। তাদের পাতা ফাঁদে কেউ পা দেবে না।
এদিকে সরকারের প্রলোভনের টোপ গিলেছেন বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সাবেক দুই সদস্য এডভোকেট খন্দকার আহসান হাবিব ও ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম। তারা গত বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবি করেছেন- তাদের ঘোষিত স্বতন্ত্র গণতন্ত্র মঞ্চ নামের সংগঠনটির সঙ্গে বিএনপি’র ১২৫ জন নেতা আছেন।