দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার ব্যর্থতায় ক্ষমতা ছেড়ে দিন: সরকারকে বিএনপি
বক্তরা বলেন, ‘ক্রয়ক্ষমতা বাড়লে টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইন কেনো। হাসিনা সরকারকে দাফন না করতে পারলে সরাতে না যে ধরনের সরকারই চান তা হবে না। না। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের পতন ঠিক করি, তারপরে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করি, তারপরে দেশটা মেরামত করি…।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে ক্ষমতাসীনদের ‘সিন্ডিকেট’ই দায়ী অভিযোগ করে এর ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার আহবান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পাঁচ ঘন্টার এই গণঅনশন কর্মসূচিতে তিনি এই আহবান জানান।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তর ও দক্ষিনের যৌথ উদ্যোগে এই অনশন শুরু হয় সকাল ১০টায়। বিকাল তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য্ অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী বিএনপির মহাসচিব এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসনকে পানি খাইয়ে অনশন ভঙ্গ করান। গত ফেব্রুয়ারি থেকে বিএনপি দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতির প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ, জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ, লিফলেট বিতরনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার জেলা জেলায় প্রতীক অনশনের কর্মসূচি করেছে তারা। রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে মহানগরসহ অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ফুটপাত ও রাস্তায় পলিথিন ও মাদুর বিছিয়ে এই অনশনে অংশ নেয়। ব্যাপক মানুষের উপস্থিতিতে গণঅনশন সমাবেশে পরিণত হয়।
অনশনের সূচনাতে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের পত্রিকায় আছে, চাল, ডাল, তেল, আটা, সবজীসহ সমস্ত জিনিসের যেহারে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে যা এখন মানুষের সহ্যের বাইরে চলে গেছে। এর মধ্য দিয়ে যে ভয়াবহভাবে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এই অনির্বাচিত সরকারকে যদি পরাজিত করতে না পারি, তাদেরকে যদি ক্ষমতা থেকে সরাতে না পারি তাহলে এদেশের মানুষের অস্তিত্ব থাকবে না। আসুন আমরা আজকে এই গণঅনশনের মধ্য দিয়ে আমাদের যে প্রতিবাদ তা দেশের সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। এই গণঅনশনের পালন করে এই সরকারকে জানিয়ে দেন যে, তোমাদের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই। ব্যর্থতায় দায় স্বীকার করে আপনারা সরে যান, ক্ষমতা ছেড়ে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সব কথার এক কথা সরকারের পদত্যাগ, সবার একথা সুষ্ঠু নির্বাচন। এই লক্ষ্যেই আমাদের মধ্যে বিভেদ নেই। এখন জাতীয় সরকার-কেউ আগে কেউ পরে। এই তর্কেরও বোধহয় প্রয়োজন নাই। কারণ এই সরকারকে বিতাড়িত করি। হাসিনা সরকারকে দাফন না করতে পারলে সরাতে না যে ধরনের সরকারই চান তা হবে না। না। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের পতন ঠিক করি, তারপরে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করি, তারপরে দেশটা মেরামত করি…।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, লৈগি-বৈঠা আমাদের অস্ত্র নয়। এই অস্ত্রের প্রয়োজন আছে আজকে যারা সরকার চালায়। আমাদের অস্ত্র লৈগি-বৈঠা নয়। বিএনপির অস্ত্র হচ্ছে জনগণ। এই জনগণকে নিয়ে আমরা এই সরকারের পতন ঘটিয়ে এদেশে জনগণের সরকার পুণঃপ্রতিষ্ঠা করবো।
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এটা সত্যি যে জিনিসপত্রের দাম এতো বেড়েছে যে, মানুষ বেকুব হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী দুইদিন আগে সংসদে বলেছেন, দ্রব্যমূল্য জনগণের সহ্যের মধ্যে আছে। বুঝেন। ১০ টাকা চাল খাওয়ানোর কথা ছিলো সেই চালের দাম আজকে ৭০ টাকা। তারপরেও লজ্জা নাই। বলে কিনা এমন কোনো দাম বাড়ে নাই, মানুষের টাকা আছে কেনার ক্ষমতা বেড়েছে, তিন গুন ক্ষমতা বেড়েছে যে মানুষ কিনে কিনে খেতে পারে। মানুষের কেনার ক্ষমতা যদি বাড়ে তাহলে বাজার করবার জন্য কলকাতা যায়, দিল্লী যায়, ব্যাংকক যায়, সিঙ্গাপুর যায়। টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইন দেয় না। তারপরেও এক মন্ত্রী বলেন যে, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা তিনগুন বেড়েছে। ও একটা মূর্খ বেয়াদব।
তিনি বলেন, একটাই কাজ করতে হবে, এমন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে সরকার যাতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং পালাবার কোনো পথ না পায়। আমি বলি, মানুষ আপনাদের দিকে তাঁকিয়ে আছে। আরো যদি সোজা সাপ্টা বলি, মানুষ বিএনপির দিকে তাঁকিয়ে আছে। আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন করছি ১৭ কোটি মানুষ আপনাদের পেছনে সেই দল সরকারের নির্দেশের অপেক্ষার আর প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। ওরা অনুমতি দেবে না, আমি অনুমতি চাইও না। আমি যদি জনগণের জন্য আন্দোলন করি, ন্যায্য আন্দোলন করি মানুষের কাছে যাবো, মানুষের সাথে বসব, তার সাথে কথা বলব। ডাক দেবো আপনাদের, সারা বাংলাদেশ বন্ধ হয়ে যাবে, বন্ধ হয়ে যাবে ওদের ক্ষমতার আস্ফালন, ওদের ক্ষমতার লাঠি ঘুরানোও বন্ধ হবে, ক্ষমতার দাপট দেখানো বন্ধ হবে, পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে। এজন্য সকল গণতান্ত্রিক দলগুলোকে এক হয়ে সরকার পদত্যাগের আন্দোলনে নামার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহবানও জানান মান্না।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় গণঅনশনে আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সমাজ কর্যান বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, স্চ্ছোসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ গণশিক্ষাি বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুদকার খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান , যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, ঢাকা মহানগরের ইশরাক হোসেন, নবী উল্লাহ নবী, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা সুলতানা আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদিকা হেলেন জেরিন খান, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, জাসাসের আহবায়ক হেলাল খান, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, তাঁতী দলের সদস্য সচিব মজিবুর রহমান, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুল রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ। ।
এই গণঅনশনে সংহতি প্রকাশ করে বক্ততৃা করেন জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, জামায়াতের নুরুল ইসলাম বুলবুল, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার খন্দকার লুতফুর রহমান, এনডিপির আবু তাহের, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি, পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক লুতফুর রহমান, অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, অধ্যাপক আব্দুস সালাম, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, এম আবদুল্লাহ, কাদের গনি চৌধুরী প্রমূখ নেতারা। এই অনশন কর্মসূচি উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews