দুই ছাত্রলীগ নেতার হাতে লাঞ্ছিত ইবির নিরাপত্তা কর্মীরা
বন্ধ ক্যাম্পাসে বাইক নিয়ে ঢুকতে নিষেধ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ প্রধান ফটকে অবস্থানরত নিরাপত্তা কর্মীদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে দুই ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে।
প্রথম নিউজ, ইবি প্রতিনিধি: পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বন্ধ রয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বন্ধ ক্যাম্পাসে বাইক নিয়ে ঢুকতে নিষেধ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ প্রধান ফটকে অবস্থানরত নিরাপত্তা কর্মীদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে দুই ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্তরা হলেন- বাংলা বিভাগের তরিকুল ইসলাম তরুণ ও ইংরেজি বিভাগের সামিউল ইসলাম। তারা উভয়ই শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী বলে জানা গেছে। বুধবার (২৬শে এপ্রিল) বিকেল ৫টার দিকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে এই ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী নিরাপত্তা কর্মীদের অভিযোগ, আগে থেকেই বাইক নিয়ে বাইরে কাউকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দেয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া ছিলো নিরাপত্তা কর্মীদের। বিকেল ৫টার দিকে ক্যাম্পাসে প্রবেশের জন্য বাইক নিয়ে আসেন তরুণ ও সামিউল। তাদের সঙ্গে স্থানীয় বহিরাগতরাও ছিল। এসময় মেইন গেইট বন্ধ থাকায় তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারছিলেন না। এ সময় তাদেরকে বাইক নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে নিষেধ করায় নিরাপত্তা কর্মীদের মারতে উদ্যত হন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম সেলিম বলেন, যেহেতু ক্যাম্পাস বন্ধ, এজন্য নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা মেইন গেট বন্ধ রাখি। এলাকার বিশ্ববিদ্যালয় আর আশেপাশে তেমন ঘোরার জায়গা না থাকায় ঈদের দিন ও ঈদের পরেরদিন তৎপরতার সঙ্গে দর্শনার্থীদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে আজকে সকাল থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাইরের কাউকে ভিতরে ঢোকাতে নিষেধ করা হয়েছিলো। আজকে (বুধবার) বিকেল ৫ টার দিকে তরুন আর সামিউল মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছিল। তাদেরকে ঢুকতে বাঁধা দিলে নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। তাদের সঙ্গে বহিরাগতরাও ছিল।
নিরাপত্তা কর্মকর্তা সেলিম আরও বলেন, ঘটনা শোনার পর আমি সেখানে গেলে তারা নিজেদেরকে ছাত্রলীগ কর্মী পরিচয় দিয়ে বলে আমরা সেক্রেটারি নাসিম আহমেদ জয় ভাইয়ের লোক। পরে আমি তাদেরকে সভাপতি অথবা সেক্রেটারি কাউকে ফোন দিতে বলি। পরে ছাত্রলীগকর্মী শাহিন আমাকে ফোন করে বললে তাদের ক্যাম্পাসের ভিতরে ঢুকতে দেয়া হয়। এরপর তারা আমার সঙ্গে ও আমার নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করে। একপর্যায়ে তারা আমাদের মারতে উদ্যত হয়। এই বিষয়টি আমি পরবর্তীতে প্রো-ভিসি, ট্রেজারার ও প্রক্টরকে জানিয়েছি।
অভিযুক্ত তরিকুল ইসলাম তরুণ বলেন, শিক্ষার্থী পরিচয় দেয়ার পরেও তারা (নিরাপত্তাকর্মীরা) ক্যাম্পাসে ঢুকতে দিচ্ছিল না। তখন একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে। এর বেশি কিছু হয়নি। আরেক অভিযুক্ত সামিউল ইসলাম বলেন, তেমন কোনো ঝামেলা হয়নি। পরিচয় দেওয়ার পরেও সেলিম ভাই বলছিল ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ২৮ তারিখের পর। আমাদের সঙ্গে এলাকার দুইজন বড় ভাই ছিল। পড়ালেখা শেষ হয়ে গেছে, ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসছিল।
ইবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় সাংবাদিকদের বলেন, শুনেছি বিষয়টা। তেমন কোনো ঝামেলাই হয়নি। আসলে এখন তো সব প্রবেশ নিষেধ। রানিং শিক্ষার্থী ওরা, ওদের ঢুকতে দিচ্ছিল না। পরে কথা বলে ঠিক করে নেয়া হয়েছে। তার রেফারেন্সে ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় তো ঘোরার জায়গা কম। ঈদের ছুটিতে যারা এসে আমার নাম বলে এটা তো সম্পূর্ণ প্রশাসনের ব্যাপার। আমার কাছে এমন ফোন আসলেও বলি যে, প্রশাসনের লোকজন আছে। ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ। বাইরে থেকে ঘুরে চলে যাও। এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, একটা পত্রিকার মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। আমি বাড়িতে ছিলাম। আসছি মাত্র। এ বিষয়ে প্রক্টরকে ফোন দিলে উনি ভালো বলতে পারবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, বিষয়টি শুনেছি। ক্যাম্পাসে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে সবার সঙ্গে বসবো। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ঈদের ছুটিতে ক্যাম্পাসে অনেক লোকজন আসছে। তাই নিরাপত্তার স্বার্থেই মেইন গেট বন্ধ ও বাইক প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।