ঢামেকের প্যাথলজি বিভাগ : ‘অনিয়ম’ যেখানে নিয়ম
মানি রিসিট ছাড়া প্যাথলজি টেস্ট, রোগী বাইরে নিলে মেলে কমিশন, উৎসাহ দেন কতিপয় চিকিৎসক, বলা হয়, রিপোর্ট ভুল আসে ঢামেকে
প্রথম নিউজ, ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত এ বিভাগের সরকারি স্টাফ ও আনসার সদস্যরা! শুধু অনিয়ম নয়, হাসপাতালের প্যাথলজি পরীক্ষার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজদের কাছে রেখে দিচ্ছে অসাধু একটি চক্র। ফলে রোগীরা যেমন প্রতারিত হচ্ছেন, তেমনি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢামেক হাসপাতালের স্টাফদের কমিশন দিয়ে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। এছাড়া অনেক চিকিৎসক ‘হাসপাতালে ভালো রিপোর্ট আসে না’ এ যুক্তিতে বিভিন্ন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্লিপে প্যাথলজি পরীক্ষার নাম লিখে দিচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, যথাযথ নজরদারি না থাকায় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন এখানকার কর্মচারীরা। অন্যদিকে, ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
কথা হয় মিরপুর থেকে আসা মামুন নামে এক রোগীর সঙ্গে। তিনি জ্বর নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসক তাকে কয়েকটি টেস্ট দেন। টেস্ট স্লিপ নিয়ে মামুন ঢাকা মেডিকেলের নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলায় যান। সেখানে অফিস সহায়ক কামরুল হাসান মুরাদ তার কাছ থেকে ব্যাংকে জমা দেওয়ার ৬৫০ টাকা নিয়ে রক্ত সংগ্রহ করেন। এক ঘণ্টা পর তাকে রিপোর্ট নিয়ে যেতে বলেন। মামুনের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হলেও তাকে কোনো টাকার রিসিট (রসিদ) দেওয়া হয়নি।
হাসপাতাল কোষাগারে টাকা জমা না দিয়ে তিনি রিপোর্ট দিতে পারেন কি না। অফিস সহায়ক হিসেবে ব্লাড নিতে পারেন কি না? জবাবে অফিস সহায়ক কামরুল হাসান মুরাদ বলেন, ‘ভাই আমার ভুল হয়ে গেছে। গরিবের পেটে লাথি দিয়েন না। আমরা ১০০-২০০ টাকা পাই। এমন ভুল আর হবে না। ভুক্তভোগী এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এমন অনিয়ম শুধু এক দিনের নয়, ঢাকা মেডিকেলের প্যাথলজি বিভাগের প্রতিদিনের চিত্র। এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্যাথলজি বিভাগের সরকারি স্টাফ নাজিম উদ্দিন আপেল, মো. শহীদ, মো. সেলিম ও রিয়ন। তাদের সঙ্গে আছেন দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করা রাজিব, মিনহাজ, সাইফুল ও রাজু।
এছাড়া প্যাথলজি বিভাগ-কেন্দ্রিক সরাসরি দালালচক্রে জড়িত আরিফ (সরকারি স্টাফ নাজিম উদ্দিন আপেলের ভাতিজা), ইব্রাহিম, শুভ, গফুর, রনি ও রানা। আচার-আচরণ দেখলে মনে হবে তারা ঢামেকের স্টাফ, আসলে তারা দালাল! রোগীর কাছ থেকে চিকিৎসাপত্র নিয়ে তারা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করে দেন। এসব পরীক্ষা তারা বাইরে থেকে করিয়ে আনেন। রোগীকে বাইরে যেতে হয় না। রোগীর বেডে গিয়ে নমুনা নিয়ে তারা রিপোর্ট করিয়ে আনেন। এক্ষেত্রে গ্রাম থেকে আসা অসহায় রোগী ও তাদের স্বজনদের টাকা দেওয়ার কোনো রসিদ দেওয়া হয় না।
সম্প্রতি মেডিসিন বিভাগের বেশ কয়েকজন অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রারকে রাজনৈতিক প্রভাব ও অবৈধ টাকার জোরে অন্যত্র বদলি করা হয়। তারা অথেনটিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী পাঠাতে রাজি ছিলেন না। এ কারণে তাদের অন্যত্র বদলি করা হয়। তাদের স্থলে ডা. রানার অনুগত ও অথেনটিক ডায়াগনস্টিকের বেনামি শেয়ারহোল্ডার কিছু নবীন চিকিৎসককে বদলি করে আনা হয়। অভিযোগ আছে, অনৈতিক এ কাজে সহায়তা করেন সেখানে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা। ঢাকা মেডিকেলের প্রতিটি ওয়ার্ডে বেসরকারি প্যাথলজির দালালরা ঘোরাফেরা করেন। তারা চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ড বয়দের ম্যানেজ করে রোগীদের প্যাথলজি পরীক্ষা বাইরে থেকে করিয়ে আনেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আশেপাশে অবস্থিত বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাগজে দালালদের নাম ও মোবাইল নম্বরসহ সিল দেওয়া থাকে। এসব কাগজে চিকিৎসক নিজেই ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ডিসকাউন্ট লিখে দেন। রোগীর স্বজনরা সেই কাগজে থাকা মোবাইল নম্বরে কল দিলে দালালরা এসে সব ব্যবস্থা করে দেন। চিকিৎসকদের পছন্দের তালিকায় থাকা বেসরকারি প্যাথলজি সেন্টার এবং সেখানে নিয়োজিত দালালরা হলেন- অথেনটিক ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন লিমিটেডের মনিকা আক্তার মনি (সিল নং- ২১২), রাসেল, দেলোয়ার (বহির্বিভাগ), রাজন, নাঈম, শাকিল (সিল নং- ৭০১, ৮০২), সাইফুল, রোকন ( সিল নং- ৭০১, ৮০১), মানহা, হাবিব, শাকিল, মনির, নাইম ও মাহবুব।
ঢাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিয়া, মাহি, নাদিয়া, লতা, লাভলু-রেজাউল, লিমা, চাঁদনী, রানু বেগম, জনি, লাভলু, নাদিয়া- ২, ইতি, তামিম ও মাজহারুল। অ্যাডভান্স হেলথ এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার মনির, তৌহিদ, ফরহাদ, আমিনুল, সাইদুল, সোহেল, হযরত আলী, রূপা, চাঁদনী, কান্তা, সোনালী, মাইনুল, উসমান, ইসমাইল, লিটন, মুন্না, সুমন, পিংকি আক্তার, সাগর ও সোহাগ। পিওর ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ফাহিম মৃধা, মামুন, মনির, আলামিন, আরাফাত, লাভলী, শ্রাবন্তী, প্রমি, নূর আলম, শাকিল, রিয়াদ, রাহাত, সাগর, ইনসান, আকাশ ও মিথিলা।
রিলায়েন্স ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার লিমিটেডের সজীব, ইমন, সজল, হারুন, রাকিব, ফারহান, সিরাজুল ইসলাম সবুজ ও খোকন। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেডের আশিষ, রিপন, সাইদুর, জসিম উদ্দিন ও সুমন। মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাইফুল, এনামুল বোরহান, মশিউর রহমান, রূপা, রহমান, মানিক, রিতা, সবুজ ও রুবিনা।
অনেক রোগী আছেন, যারা টাকার বিনিময়ে হোম সার্ভিস চান। আমাদের এখানে কিন্তু হোম সার্ভিসের ব্যবস্থা নেই। এমন অনেক টেস্ট আছে যা আমাদের এখানে হয় না। তখন দালালদের টেলিফোন করে এখানে আনা হয়, টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়। আপনারা জানেন, আমাদের এখানে অনেক জটিল রোগী আসেন। তাদের কিছু বিরল টেস্ট থাকে, যার ক্যাপাবিলিটি আমাদের এখানে নেই। সেক্ষেত্রে এখান থেকে তাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বা আইসিডিডিআর,বিতে পাঠানো হয়। চক্রটি তখন এ সুযোগ নেয়।
মেডিপ্যাথ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আবিদ, শামীম রিয়াজ, চাঁদনী, সাকিব, নাইম ও রিয়া। অ্যাকটিভ ব্লাড ব্যাঙ্ক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সুজন, মতিউর রহমান, শান্ত, তমাল, জুবায়ের ও নিলয়। আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মিজান, হাসান ও জুলহাস। ল্যাব সাইন্স ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জালাল, বাপ্পী ও জহুরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢামেক হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী বলেন, চিকিৎসকরা তাদের পছন্দ মতো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের পরীক্ষা করাতে পাঠান। তারা অন্য কোথাও পরীক্ষা করালে সেই রিপোর্ট না দেখে রোগীর স্বজনদের মুখের ওপরে তা ছুড়ে ফেলেন। এটা ঢাকা মেডিকেলের নিত্যদিনের ঘটনা। অসহায় এসব গরিব রোগীর স্বজনরা তখন কী করবেন? চোখের সামনে এমন অন্যায় হয়। ছোট চাকরি করি বলে কিছুই বলতে পারি না। তারা জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের বিপরীত পাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সেসবের মধ্যে কয়েকটির মালিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিছু চিকিৎসক। এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা পড়েছে। এ সংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকা মেডিকেলের পরিচালকের কাছেও এসেছে। তারপরও এসব চিকিৎসক তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এটা কীভাবে সম্ভব— প্রশ্ন তাদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢামেক পরিচালক অবৈধ এসব প্যাথলজি সেন্টারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করেছেন। কিন্তু কিছুদিন পর তারা আবার সক্রিয় হন। ঢামেকের অসাধু কিছু চিকিৎসক রোগীর স্বজনদের হুমকি দেন এটা বলে যে, এখানে (ঢাকা মেডিকেল কলেজ) প্যাথলজি রিপোর্ট ভুল আসে। আপনাদের যেখানে বলেছি সেখান থেকে করে আনেন। তারা কখনও চিন্তা করেন না রোগীদের সামর্থ্য আছে কি না বা তারা করাতে পারবেন কি না!
‘কিছুদিন আগেও ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক নতুন ভবনে এ বিষয়ে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন, আমাদের এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভালো ব্যবস্থা আছে। রোগীদের যেন হয়রানি করা না হয়। তাদের যেন বাইরে পাঠানো না হয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা! অসাধু চিকিৎসকরা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন’— অভিযোগ কর্মচারীদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে অথেনটিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একটি অভিযোগপত্র জমা পড়ে। তার একটি কপি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে। ওই অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে, অথেনটিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ডিএমসিএইচ- ২) সামনে অনৈতিকভাবে বেশ কিছুদিন ধরে ব্যবসা করে যাচ্ছে। সেন্টারটিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেশকিছু চিকিৎসক নামে-বেনামে জড়িত। হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক, সহকারী অধ্যাপক ও আবাসিক সার্জন ডা. আফজালুল হক রানা এসব অসাধু চিকিৎসক গ্রুপের নেতৃত্ব দেন। ডা. রানার সঙ্গে জড়িত আছেন নেফ্রোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান রিজভী, মেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. ইমরান মাহমুদ, নাক কান ও গলা বিভাগের রেসিডেন্ট ডা. মারজুক আল তুহিন, সহকারী রেজিস্টার ডা. মর্তুজা আরেফিন মিশু ও নেফ্রোলজি বিভাগের সহকারী রেজিস্টার ডা. মাসুরুর সিয়ামসহ অনেকে।
তারা নিজস্ব প্রভাব খাটিয়ে দরিদ্র রোগীদের জোরপূর্বক যেসব পরীক্ষা ঢাকা মেডিকেলে সরকারিভাবে হয়; সেসব পরীক্ষা অথেনটিক নামক সেন্টারে করাতে বাধ্য করেন। বিভিন্ন ওয়ার্ডে কর্মরত ডা. রানার সহযোগী চিকিৎসকদের মাধ্যমে রোগীদের বাইরের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করাতে চাপ দেন। এছাড়া ইউরোলজি বিভাগে বেড না থাকার মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বেশি খরচে অথেনটিক হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। অথচ এসব চিকিৎসা স্বল্পমূল্যে ঢাকা মেডিকেলে করা সম্ভব— বলা হয় অভিযোগপত্রে।
এমনও অভিযোগ আছে, ডা. আফজালুল হক রানা সহকারী অধ্যাপক হয়েও অনৈতিক ব্যবসার উদ্দেশ্যে আবাসিক সার্জন (ইউরোলজি) পদ দখল করে আছেন। যা চাকরির বিধি-পরিপন্থী। সংশ্লিষ্টরা জানান, নেফ্রোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজভী ও মেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. ইমরান মাহমুদ ওই অথেনটিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিকেলে চেম্বার করেন। তারা সকালে ঢাকা মেডিকেলে আগত রোগীদের ভুল বুঝিয়ে সেখানে পাঠিয়ে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান। এছাড়া ডা. রিজভীর চানখারপুলে অবস্থিত স্পেশালাইজড আইসিইউ হাসপাতালে শেয়ার রয়েছে। তারা সেখানে অবৈধভাবে মুমূর্ষু রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি মেডিসিন বিভাগের বেশ কয়েকজন অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রারকে তারা রাজনৈতিক প্রভাব ও অবৈধ টাকার জোরে অন্যত্র বদলি করেন। তারা অথেনটিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী পাঠাতে রাজি ছিলেন না। এ কারণে তাদের অন্যত্র বদলি করা হয়। তাদের স্থলে ডা. রানার অনুগত ও অথেনটিক ডায়াগনস্টিকের বেনামি শেয়ারহোল্ডার কিছু নবীন চিকিৎসককে বদলি করে আনা হয়। এখন তারা বাকি চিকিৎসক ও কর্মচারীদের হুমকি দিচ্ছেন অথেনটিকে রোগী পাঠানোর জন্য। তাদের এমন স্বেচ্ছাচারিতায় পুরো ঢাকা মেডিকেলে একটি আতঙ্কজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এ অবস্থায় অতিসত্বর অথেনটিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে সেখানকার কর্তাব্যক্তি ডা. আফজালুল হক রানা ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে চাকরির বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মেডিকেলের একাধিক চিকিৎসক। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২৮ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক সব বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে বসেন এবং চিকিৎসকদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে দুদকের নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, ‘আমাদের পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া আছে। কোনো রোগী যদি পরীক্ষা করাতে চান তাহলে প্রথমে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হবে। সেখানে অটো জেনারেটেড সিস্টেমে রিসিট দেওয়া হয়। সেই রিসিট নিয়ে প্যাথলজিতে যেতে হবে, ব্লাড দিতে হবে। তিনি এ সময় অসাধু ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে সহযোগিতা চান। বলেন, ‘আমি রোগীদের বলব, আপনারা অনৈতিক পথে যাবেন না। এখন একটা লোক অনৈতিকভাবে টাকা দিয়ে অবৈধ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন আমাদের লোকও দূষিত হয়ে যান। আমরা রোগীর স্বজনদের সতর্ক করব, পাশেই ব্যাংক আছে; অতিরিক্ত টাকা দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিতে যাবেন না।’
ঢামেক হাসপাতালে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা ঘোরাফেরা করেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা সবসময় ব্যবস্থা নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যরাও কাজ করছে। মাঝেমধ্যে তাদের ধরে পুলিশে দেওয়া হয়। তারপরও তাদের দৌরাত্ম্য কমে না। কারণ, অনৈতিক সুবিধার ব্যাপার আছে এখানে।’
‘অনেক রোগী আছেন, যারা টাকার বিনিময়ে হোম সার্ভিস চান। আমাদের এখানে কিন্তু হোম সার্ভিসের ব্যবস্থা নেই। এমন অনেক টেস্ট আছে যা আমাদের এখানে হয় না। তখন দালালদের টেলিফোন করে এখানে আনা হয়, টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়। আপনারা জানেন, আমাদের এখানে অনেক জটিল রোগী আসেন। তাদের কিছু বিরল টেস্ট থাকে, যার ক্যাপাবিলিটি আমাদের এখানে নেই। সেক্ষেত্রে এখান থেকে তাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বা আইসিডিডিআর,বিতে পাঠানো হয়। চক্রটি তখন এ সুযোগ নেয়। রোগীর স্বজনরাও প্যাথলজির লোকদের ডেকে এনে টেস্টগুলো করান। অর্থাৎ, এখানে একটি হোম সার্ভিসের ব্যাপার আছে। টেস্ট করাতে বা রিপোর্ট আনতে যেতে হয় না। প্যাথলজির লোকই ব্লাড স্যাম্পল নিয়ে যান। তারাই রিপোর্ট নিয়ে আসেন। এখানে রোগীর লোকদের কাছে টাকার বিষয়টি মুখ্য নয়।’
এখানকার চিকিৎসকদের বক্তব্য, ঢামেকে টেস্ট করালে রিপোর্ট ভুল আসে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, যেকোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রিপোর্টের একটা পার্সেন্টেজ এদিক-ওদিক হতে পারে। আমরা চিকিৎসকদের বলেছি, প্যাথলজি টেস্টের ওপর কারও যদি সন্দেহ হয় তাহলে সরাসরি আমাদের ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়ে দেবেন। বিনামূল্যে আমাদের লোকজন আবারও টেস্ট করবেন। দেখবেন কোথায় ভুল আছে এবং তা ঠিক করবেন। ‘যদি কারও মনে হয় রিপোর্টটি ভুল, তাহলে আমাদের উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, প্যাথলজি বিভাগ আছে, সেখানে পাঠান অথবা কলেজে পাঠান। আমাদের না জানিয়ে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে। এটা খুবই দুঃখজনক।’
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews