ঢাকায় এখন রিকশার দাপট, তৃতীয় দিনেও চলছে কোরবানি

শনিবার (১ জুলাই) সকাল থেকেই রাজধানীর ফাঁকা রাস্তায় দাপট ছিল রিকশার।

ঢাকায় এখন রিকশার দাপট, তৃতীয় দিনেও চলছে কোরবানি

প্রথম নিউজ, ঢাকা: পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি শেষে রাজধানী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষ। অবশ্য যে হারে মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন, সে অনুযায়ী এখনো ফিরতি যাত্রা শুরু হয়নি। ফলে আজও ঢাকার রাস্তাগুলো ছিল অনেকাংশেই ফাঁকা। অন্যদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঈদের তৃতীয় দিনেও পশু কোরবানি করতে দেখা গেছে।

শনিবার (১ জুলাই) সকাল থেকেই রাজধানীর ফাঁকা রাস্তায় দাপট ছিল রিকশার। যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি নেই তাদের অনেকের এখন মূল ভরসা রিকশা। অবশ্য গণপরিবহনও চলাচল করছে সীমিত পরিসরে। এসব পরিবহনে ঝামেলাহীনভাবেই যাতায়াত করতে পারছেন রাজধানীর বাসিন্দারা। ঢাকার ফাঁকা রাস্তায় রিকশা দাপট দেখালেও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখন রিকশার চলাচলও বেশ কম। যারা রিকশা চালাচ্ছেন তারা অন্য সময়ের তুলনায় যাত্রীদের কাছ থেকে এখন কিছুটা বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন।

এদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তায় গণপরিমাণের সংখ্যা বেশ কম। গণপরিমাণের তুলনায় ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় বেশি দেখা গেছে। এর পাশাপাশি সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশা চলাচল করছে দেদারসে। সিএনজির তুলনায় রাস্তায় রিকশার সংখ্যা বেশ দেখা গেছে। রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল, দিলকুশা অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, অফিসগুলোতে তালা ঝুলছে। রাস্তাগুলো প্রায় জনশূন্য। ফাঁকা রাস্তায় রিকশা চালিয়ে যাওয়া রফিকুলের সঙ্গে কথা হয় দিলকুশা রূপালী ব্যাংকের সামনে। তিনি বলেন, আমাদের কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই, তাই গ্রামে যাইনি। ঢাকায় থেকে গেলাম কিছু বাড়তি আয়ের আশায়। গত দুদিনে কিছু মাংস পেয়েছি। তবে রাস্তায় যাত্রী খুব কম। অল্প কিছু ভাড়া মারতে পেরেছি। আগামীকাল আরও কিছু ভাড়া মেরে জামালপুরে গ্রামের বাড়ি যাবো।

এদিকে সকাল থেকে সাভার, পল্টন, কাকরাইল, মালিবাগ, রামপুরা এলাকা ঘুরেও রাস্তাঘাট ফাঁকা দেখা যায়। রামপুরা কাঁচা বাজারের সামনে কথা হয় রিকশাচালক আজগর আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, গ্রামে বউ-বাচ্চা আছে। ওদের জন্য ঈদের আগে কিছু টাকা পাঠিয়েছে। আরও কিছু টাকা গুছিয়ে আমি কদিন পর রংপুরে গ্রামের বাড়ি যাবো। তিনি বলেন, এখন ঢাকার রাস্তায় রিকশা চালাতে কষ্ট কম। ঢাকার বেশিরভাগ মানুষ এখন গ্রামে। ফলে রাস্তায় গাড়ির চাপও কম। যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে না। কিন্তু যাত্রী সংখ্যা কম। আয়ও হচ্ছে কম।

খিলগাঁও থেকে রিকশায় করে যাত্রাবাড়ী যাওয়া ফজিয়া আক্তার বলেন, আমি আব্বু-আম্মুর সঙ্গে খিলগাঁওয়ে থাকি। বড় ভাই যাত্রাবাড়িতে থাকেন। ভাইয়ার বাসায় যাচ্ছি। খিলগাঁও থেকে যাত্রাবাড়ী এটুকু রাস্তার জন্য ২০০ টাকা ভাড়ায় রিকশা ঠিক করেছি। অন্যসময়ে ভাড়া আরও অনেক কম। তিনি বলেন, ঈদের দোহাই দিয়ে রিকশা চালকরা ইচ্ছামত ভাড়া আদায় করছে। আমাদের ব্যক্তিগত গাড়ি নেই। আবার বাসেও উঠতে পারি না। বাসে উঠলেই বমি হয়। তাই বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়ে রিকশায় যাচ্ছি।

রাস্তা ফাঁকা থাকায় যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড় এলাকায় রাস্তার ওপরে কাউকে কাউকে পশু কোরবানি করতে দেখা যায়। গরুর মাংস কাটতে ব্যস্ত থাকা মিলন নামের এক কসাই বলেন, এটি কোরবানির গরু। তিনদিন পর্যন্ত কোরবানি দেওয়া যায়। এ কারণে আজও ঢাকায় কেউ কেউ কোরবানি দিচ্ছেন। তিনি বলেন, গত দুদিন আমরা কোরবানির পশুর মাংস কাটতে প্রচুর ব্যস্ত সময় পার করেছি। আজ সে তুলনায় কাজ কম। আজ এই একটি কাজ পেয়েছি।

এদিকে ঢাকার বেশিরভাগ রাস্তা ফাঁকা থাকলেও বাস টার্মিনালকেন্দ্রিক রাস্তাগুলোতে পরিবহনের কিছুটা চাপ দেখা গেছে। সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল সংলগ্ন পরিবহনের কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের বেশ চাপ দেখা যায়। এসব যাত্রীদের বেশিরভাগ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছেন। সায়দাবাদের গোল্ডেন লাইন কাউন্টারের এক কর্মী আরিফ বলেন, এখনো ঢাকা থেকে প্রচুর মানুষ গ্রামে যাচ্ছেন। আমাদের কোনো গাড়ি ফাঁকা যাচ্ছে না। প্রতিটি গাড়ি প্রায় ভরে যাচ্ছে। সায়দাবাদে বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা বরিশালগামী যাত্রী আক্কাস আলী বলেন, ঈদের আগে গাড়িতে প্রচুর চাপ ছিল। ভাড়া বেশি ছিল। যেহেতু কোরবানি দেইনি, তাই ঈদের আগে বাড়ি যাইনি। এখন ঢাকা থেকে কিছু মাংস নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি।

এদিকে ২৭ থেকে ২৯ জুন এ তিনদিনে ঢাকা ছেড়েছেন প্রায় ৭৪ লাখ ৪৫ হাজারের বেশি সিম ব্যবহারকারী। বিপরীতে এ তিনদিনে ঢাকায় প্রবেশ করেছেন ২০ লাখ ৬৭ হাজারের বেশি সিম ব্যবহারকারী। শুক্রবার ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাস পোস্ট করে এ তথ্য জানিয়েছেন। মন্ত্রী জানান, ঈদের ছুটিতে মঙ্গলবার (২৭ জুন) ১৯ লাখ ৫ হাজার ৫৯৩ সিম ব্যবহারকারী ঢাকা ছেড়েছেন। ঈদের আগের দিন ২৮ জুন বুধবার ৩১ লাখ ৪১ হাজার ৪৩০ সিম ব্যবহারকারী ঢাকা ছেড়েছেন। ঈদের দিন ২৯ জুন বৃহস্পতিবার ঢাকা ছেড়েছেন ২৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ সিম ব্যবহারকারী। অর্থাৎ ২৭ থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত তিনদিনে ঢাকা ছেড়েছেন ৭৪ লাখ ৪৫ হাজার ৫২৩ সিম ব্যবহারকারী।

অন্যদিকে ২৭, ২৮ ও ২৯ জুন এ তিনদিনে মোট ২০ লাখ ৬৭ হাজার ৩৬৬ সিম ব্যবহারকারী ঢাকায় প্রবেশ করেছেন। এরমধ্যে ঈদের দিন ২৯ জুন ঢাকায় প্রবেশ করেছেন ৫ লাখ ৫৬ হাজার ২৮১ সিম ব্যবহারকারী। এছাড়া মঙ্গলবার ২৭ জুন ৭ লাখ ৭৮ হাজার ৫৪৩ সিম ব্যবহারকারী ঢাকায় প্রবেশ করেছেন। ঈদের আগের দিন ২৮ জুন ঢাকায় প্রবেশ করেছেন ৭ লাখ ৩২ হাজার ৫৪৪ সিম ব্যবহারকারী। তিনদিনে ঢাকা ছাড়া মানুষের মধ্যে গ্রামীণ ফোনের ৩৬ লাখ ৬৫ হাজার ৬৮২ গ্রাহক রয়েছেন। এছাড়া রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ১২ লাখ ৬৭ হাজার ৭৩১ গ্রাহক, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন লিমিটেডের ২২ লাখ ৬৩ হাজার ৩৪৫ গ্রাহক এবং টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ২ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৫ গ্রাহক রয়েছেন।

অন্যদিকে তিনদিনে ঢাকায় প্রবেশকারীদের মধ্যে গ্রামীণ ফোনের ৫ লাখ ৪৫ হাজার ১২৫ গ্রাহক, রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ২ লাখ ৫১ হাজার ৬২৪ গ্রাহক, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন লিমিটেডের ১১ লাখ ৪ হাজার ৮৭০ গ্রাহক এবং টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭৪৭ গ্রাহক রয়েছেন।