ঢাকায় আশঙ্কাজনক হারে নামছে পানির লেয়ার

ঢাকায় আশঙ্কাজনক হারে নামছে পানির লেয়ার
ঢাকায় আশঙ্কাজনক হারে নামছে পানির লেয়ার

প্রথম নিউজ, অনলাইন: দেশে প্রতিনিয়তই পানির লেয়ার নিচে নেমে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ বরেন্দ্র এলাকাগুলোতে আশঙ্কাজনক হারে পানির স্তর নামছে। এদিকে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনে অভাবে বাড়ছে পানি বাহিত নানা রোগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৭ কোটি মানুষ নিরাপদ পানি এবং সাড়ে ৭ কোটি মানুষ সেনিটেশন বঞ্চিত। এই অবস্থায় আগামী ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সোমবার বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ, বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্ক এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের যৌথ আয়োজনে গোলটেবিল আলোচনা সভায় বক্তারা এসব তথ্য জানান।

বক্তারা বলেন, ব্যাপক পরিমাণে ভূগর্ভস্থ পানি তোলার কারণে ঢাকার পাশাপাশি বরেন্দ্র এলাকাতেও পানির স্তর স্থানীভাবে অনেক জায়গাতে নিচে নেমে যাচ্ছে। বরেন্দ্র এলাকায় পানি তোলা ছাড়াও অন্যান্য কিছু ইস্যু আছে। সেখানে বৃষ্টিপাত কম হয়। সেক্ষেত্রে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালের পর থেকে এসব এলাকায় নতুন কোন টিউবওয়েল বসাচ্ছে না। ঢাকা, বরেন্দ্র এলাকার বাইরেও বিভিন্ন নগর এলাকা, শিল্পাঞ্চল এলাকায় পানির লেয়ার নেমে যাচ্ছে।

বিশিষ্ট শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আব্দুল আজিজ বলেন, ঢাকার চারপাশে নদীগুলো, বুড়িগঙ্গার পানিকে এখনও পরিষ্কার, বিশুদ্ধ করতে পারিনি। এমডিজি অর্জন করতে হলে একটি জেলাকে নিয়ে ভাবলে হবে না। ঢাকার পানির লেয়ার নিচে নেমে যাচ্ছে। এক সময় এখান থেকে পানি তুলাটাই কঠিন হয়ে যাবে। এগুলো আমাদের ভাবতে হবে। সংকট সমাধানে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, যে পানিটা মানুষ ব্যবহার করবে, সেটি যেন দূষণমুক্ত হয়। ইন্ড্রাস্ট্রিতে যে পানিগুলো ব্যবহার হয়, সেগুলো কিন্তু রিসাইকল করা হয় না। করা হলে অনেকটা পানির সংকট সমাধান হতো। এজন্য আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। 

ডা. আজিজ বলেন, ঢাকায় পানির সমস্যা বেশি। চট্টগ্রাম, খুলনা ভালো করছে। যে মানুষকে আমরা সার্ভিস দিচ্ছি, তিনি আমার-আপনার প্রতিবেশী। আমাদেরই কাছের মানুষ। এই বিবেচনায় সেবা প্রধানে আন্তরিকতা বজায় রাখতে পারি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক আনোয়ার জাহিদ বলেন, সকলের জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে হলে আমাদের ভাবতে হয় সকলের জন্য পানি আছে কিনা? ৯৭ ভাগ লবন পানি, ২ ভাগ বরফ, ১ ভাগেরও কম পানযোগ্য পানি। এর থেকেই খাবার। পানির চাহিদা প্রচুর বাড়ছে, পরিমাণ বাড়ছে না। ব্যবহারযোগ্য পানির পরিমাণ কমে আসছে।

তিনি বলেন, ঢাকায় যেখানে ৫০ বছর আগে ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার ২ থেকে ৩ মিটারের মধ্যে ছিলো, বর্তমানে সেখানে ৮৬ মিটারে নেমে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই এলার্মিং। তবে কিছু কিছু এলাকায় বুরো মওসুমে পানির লেয়ার নিচে নামলেও আবার বৃষ্টির সময়ে পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসে। তবে, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকাতেই পানির লেয়ার শুধু নামছেই, কখনো আর উপরে উঠছে না।

পানির লেয়ার সবচেয়ে বেশি নামছে ঢাকায়। বছরে এক থেকে দুই মিটার পর্যন্ত পানির লেয়ার নিচে নেমে যাচ্ছে। ঢাকার বাইরে সেন্টিমিটার হারে নামছে। তবে, আশঙ্কার ব্যাপার হলো, ব্যবহারযোগ্য পানি আছে কিনা, কতো পরিমাণ আছে, এসব বিষয়  দেখার মতো কেউ নেই।

বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্কের সভাপতি শহিদুল হাসানের সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বির সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথের নির্বাহী পরিচালক এসএমএ রশীদ, বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্ক, এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ ও কোঅর্ডিনেটর কাজী মনির মোশারফ, খুলনা ওয়াসার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আবদুল্লাহ, চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রজেক্ট ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম, রাজশাহী ওয়াসার ডেপুটি ম্যানাজার এসএম তুহিনুর আলম প্রমুখ ।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom