টঙ্গী ইজতেমা মুখো মানুষের স্রোত
ভেতরে কোথাও জায়গা না পেয়ে ময়দানে প্রবেশ পথ কামারপাড়া সড়কসহ মহাসড়কের কোথাও কোথাও অবস্থান করতে দেখা গেছে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক : আজ শুক্রবার তাবলীগ জামাতের মহাসমাবেশ বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু। কনকনে শীত অপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাস-ট্রাক, ট্রেন ও লঞ্চযোগে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে এসে সমবেত হচ্ছেন। পুরো মাঠকে ১০৫ খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। জেলাওয়ারি তাবলীগ জামাতের মুসল্লিরা নির্দিষ্ট খিত্তায় গত বুধবার থেকে অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। গতকাল সারাদিনই দলে দলে মুসল্লিদের বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। সারা দেশ থেকে মানুষের স্রোত এখন টঙ্গীমুখো। মানুষের এ স্রোত আখেরি মোনাজাতের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আগামী ৪ঠা ফেব্রুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্বের এ সমাবেশ। মাঝে ৫ দিন বিরতি দিয়ে ৯ই ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে ১১ই ফেব্রুয়ারি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এবারের দু’পর্বের বিশ্ব ইজতেমা। এ সমাবেশে আগত মুসল্লিদের জন্য পাটের চট দিয়ে নির্মাণ করা তুরাগ তীরে ১৬০ একর খোলা জমিনের উপর সুবিশাল প্যান্ডেল বৃহস্পতিবার কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে।
ভেতরে কোথাও জায়গা না পেয়ে ময়দানে প্রবেশ পথ কামারপাড়া সড়কসহ মহাসড়কের কোথাও কোথাও অবস্থান করতে দেখা গেছে। তাবলীগ জামাতের এ মিলনমেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের প্রায় অর্ধশত দেশ থেকে ২০-৩০ হাজার বিদেশি মেহমানসহ প্রায় ৩০ লাখ মুসল্লির সমাবেশ ঘটবে বলে আয়োজক কমিটির মুরুব্বিরা আশা করছেন। লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে আজ দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ ইজতেমা ময়দানে।
ইজতেমাকে ঘিরে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বুধবার সকালে ইজতেমাস্থলের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে টঙ্গী টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস) মাঠে পুলিশের এক ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন জানান এবারের বিশ্ব ইজতেমায় প্রচলিত নিরাপত্তা ব্যবস্থার বাইরেও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যেকোনো নাশকতা প্রতিরোধে পুলিশের সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। মেট্রো পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, শিল্প পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, মেট্রো পুলিশ ও সাদা পোশাকে দুই পর্বের ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য প্রায় ৬ হাজারের মতো নিরাপত্তা কর্মী কাজ করবেন।
ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, টঙ্গী ব্রিজ থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা, মন্নুগেট থেকে কামারপাড়া পর্যন্ত এবং তুরাগ নদসহ পুরো এলাকাকে ৫টি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি সেক্টরে দুইজন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করবেন। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে থাকবে চেকপোস্ট, ওয়াচ টাওয়ার, ইজতেমা এলাকার প্রতিটি প্রবেশ পথ সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা মনিটরিং করা হবে। এ ছাড়া বাইনোকুলার, মেটাল ডিক্টেটর, কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, খিত্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে পোশাকে ও সাদা পোশাকে নিরাপত্তা কর্মীরা নিয়োজিত থাকবেন।
স্বাস্থ্যসেবা: গাজীপুর সিভিল সার্জন মো. খাইরুজ্জামান বলেন, ইজতেমা উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি স্বাস্থ্য বিভাগের রয়েছে। টঙ্গী সরকারি ২৫০ শয্যা হাসপাতালে একটি নিজস্ব কন্ট্রোল রুম ছাড়াও কার্ডিয়াক, বার্ন, অ্যাজমা, ট্রমাসহ বিভিন্ন ইউনিট খোলা হয়েছে। এ ছাড়াও টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের উদ্যোগে মুন্নগেট, বাটা গেট হোন্ডা রোডে ও বিদেশি ক্যাম্পসহ মুসল্লিদের তাৎক্ষণিক সেবা দেয়ার জন্য ৮টি মেডিকেল সেন্টার খোলা হয়েছে। মুসল্লিদের সেবা প্রদানের জন্য টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল সেন্টারগুলোতে ১৩টি এম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইজতেমা এলাকায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রায় ৪০টির মতো ফ্রি মেডিক্যাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
বিদেশি মেহমান: প্রতিবছরের ন্যায় এবারো বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশের বিদেশি মুসল্লি আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এব্যাপারে টঙ্গীর ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বি ও বিদেশি মেহমানদের তাঁবুর জিম্মাদার প্রকৌশলী মো. মুহিবুলল্লাহ’র সঙ্গে কথা বললে তিনি আগত বিদেশি মুসল্লির সঠিক সংখ্যা জানাতে না পারলেও বিশ্বের অন্তত শতাধিক দেশের প্রায় ২০-৩০ হাজার বিদেশি মেহমান এবারের ইজতেমা ময়দানে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানান। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের প্রায় কয়েক হাজার বিদেশি মুসল্লি ঢাকার কাকরাইল, উত্তরা, টঙ্গী ও আশপাশের মসজিদে অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ২ হাজার বিদেশি মুসল্লি ইজতেমা ময়দানের নির্ধারিত তাঁবুতে অবস্থান নিয়েছেন।
ইজতেমা আয়োজক কমিটির বক্তব্য: বিশ্ব তাবলীগ জামাতের মুরুব্বিরা জানান, সারা বিশ্বে তাবলীগের দাওয়াত পৌঁছে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে ইজতেমায় শরিক হওয়া মুসল্লিদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠানের সময় টঙ্গী তুরাগ তীরের দুই পর্বে হওয়ার পরও এ বিশাল ময়দানেও স্থান সংকুলান হচ্ছে না। আগত মুসল্লিদের যাতায়াতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ভাসমান সেতু নির্মাণ: ইজতেমা পন্টুন ব্রিজ (ভাসমান সেতু) স্থাপন কাজে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা জানান, মুসল্লিদের নদী পারাপারের সুবিধার্থে ইজতেমা ময়দানের সঙ্গে টঙ্গী-আশুলিয়া সড়কের সংযোগ স্থাপনের জন্য তুরাগ নদের উপর ১০টি পন্টুন সেতু স্থাপন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা এই সেতুগুলো স্থাপন করছে।
বিশ্ব ইজতেমায় গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা: ২রা থেকে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ও ৯ থেকে ১১ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দু’পর্বের ইজতেমা উপলক্ষে মুসুল্লিগণের নিরাপদ যাতায়াত ও সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচলের জন্য ১লা ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৩রা ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা এবং ৯ই ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১১ই ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টঙ্গী ও এর আশেপাশের এলাকায় গাড়ি পার্কিং করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ, ঢাকা ও গাজীপুর মহানগর পুলিশ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা নিয়েছে-উল্লিখিত সময়ে ধৌর ব্রিজ থেকে আব্দুল্লাহপুর হয়ে প্রগতি সরণী এবং টঙ্গী ব্রিজ থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত (বিমানযাত্রী, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও এম্বুলেন্স ব্যতীত) সকল যানবাহন বন্ধ থাকবে।
মুসল্লিগণের যানবাহনের পার্কিংয়ের স্থান ঢাকা মহানগর এলাকা: সাধারণ পার্কিং-১, নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকার খালি জায়গা। সাধারণ পার্কিং-২, উত্তরা ৬ নং সেক্টর ও রাজউক কলেজের আশেপাশের খালি জায়গা। এ ছাড়া সিলেট বিভাগ পার্কিং উত্তরা ১২ নং সেক্টর, বরিশাল বিভাগ পার্কিং ধৌর ব্রিজ ক্রসিং সংলগ্ন এলাকা, ঢাকা বিভাগ পার্কিং সোনারগাঁও সড়ক ও জনপথ সড়কের পূর্ব হতে পশ্চিম প্রান্ত, খুলনা বিভাগ পার্কিং উত্তরা ১০ ও ১১ নং সেক্টর সড়কের উভয় পাশে, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের পার্কিং উত্তরা ১০।
ওযু, গোসল ও খাবার পানি সরবরাহ: ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের ওযু, গোসল ও খাবারের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে প্রতিদিন ৩ কোটি লিটার সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।